
.
২০২৪ সাল বাংলাদেশে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে, কারণ এই বছরটি ফ্যাসিবাদের অবসান এবং গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার সূচনা করেছে।
দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম, ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক দল, সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ, নারী ও শিশু—সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে যে অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে, তা আমাদের জাতিগত আত্মবিশ্বাস এবং সংগ্রামী ঐতিহ্যের এক অনন্য উদাহরণ।
শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসন এবং তার দলের গণহত্যাকারী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে এই সংগ্রাম ছিল আমাদের বিজয়, আমাদের স্বাধীনতার পুনরুদ্ধার। বাংলাদেশের জনগণ এবার শাসক শ্রেণীর জবরদস্তি শাসনকে পরাজিত করে একটি নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে, যেখানে মানুষের অধিকার, ভোটাধিকার এবং গণতন্ত্রের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এই নতুন বছরকে আমরা অভ্যুত্থানের এই স্পিরিটের সাথে বরণ করছি এবং প্রত্যাশা করছি, এটি আমাদের আরও শক্তিশালী ও একতাবদ্ধ করবে। আমরা একটি এমন সমাজ গড়তে চাই, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের কণ্ঠস্বর শোনা যাবে, যেখানে গণতন্ত্রের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সব মানুষের জন্য সমান সুযোগ ও অধিকার থাকবে। আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে, যেন দেশটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পথে এগিয়ে যায় এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২৪ সাল আমাদের জন্য কেবল একটি বিজয়ের বছর নয়, বরং গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি এবং মানুষের অধিকারের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের বছর হিসেবে চিহ্নিত হবে।
২০২৪ সাল, আমাদের সবচেয়ে বড় বিজয় হিসেবে, সেই মুহূর্তটিকে স্মরণ করিয়ে দেয় যখন বাংলাদেশের জনগণ, ছাত্র-জনতা, সকল পেশার মানুষ এবং রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনাকে পরাজিত করেছে। গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের অবসান, গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থার পুনর্নির্মাণ—এগুলো আমাদের প্রাপ্তি। এই বিজয় আমাদেরকে নতুন উদ্যমে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করবে।
নববর্ষের এই মুহূর্তে, আমরা আমাদের অতীতের সব কষ্ট, ব্যর্থতা, হতাশা ও শোষণের বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে নতুন উদ্যোমে এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প করি। আমরা আশা করি, ২০২৫ সাল আসবে আরও এক নতুন অধ্যায় নিয়ে, যেখানে বাংলাদেশের জনগণ তার হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবে, ভোটাধিকার ফিরে পাবে এবং একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। গণতন্ত্রের পথে আমাদের সংগ্রাম আরও শক্তিশালী হবে, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সকল নাগরিকের কণ্ঠস্বর শোনা যাবে।
বিশ্বের প্রতিটি কোণে গণতন্ত্রের জন্য যে সংগ্রাম চলছে, বাংলাদেশও সেই সংগ্রামে এক অনন্য স্থান অধিকার করেছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে আমরা একটি টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার, মর্যাদা এবং সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। আমরা বিশ্বাস করি, একসাথে আমরা গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারবো, জনগণের শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো, এবং দেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারবো।
১৯৭১ এ আমরা যেভাবে লড়াই করেছি তা আমাদের ইতিহাসের সাথে মিশে আছে, ২০২৪ এ এসে আমরা আবারো আমরা দেখিয়ে দিলাম যে আমরা বীরের জাতি, আমরা লড়াই করতে জানি। আমরা কখনো পিছপা হই না, দমে যাই না। তবে কেউ যেন আমাদের আমাদের বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের ভিত্তি ১৯৭১কে মুছে দেওয়ার দুঃসাহস না দেখায়, দেখালে তা আমাদের প্রতিহত করতে হবে। ১৯৭১ এর পর যতগুলো সংগ্রাম হয়েছে তারই সব যেন ১৯৭১ এর ধারাবাহিকতা, ১৯৭১ আমাদের হৃদয়ে চির জাগরূক। তবে ২০২৪ আমাদের পথচলার উজ্জ্বল অংশীদার।
নববর্ষের এই শুভলগ্নে আমি দেশবিদেশের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। ২০২৫ সাল আমাদের জন্য নতুন দিনের সূচনা, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা এবং নতুন সংগ্রামের প্রেরণা নিয়ে এসেছে। আসুন আমরা সবাই একত্রিত হয়ে, অতীতের সকল শোষণ এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করি, শান্তি, সমৃদ্ধি এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করি। আমরা সকল শ্রেণি ধর্ম বর্ণ শ্রেণি পেশার মানুষের সমন্বয়ে সকলের সমান অধিকারের একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করি। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে গড়ে তুলি সত্যিকারের স্বাধীন বাংলাদেশ।
নতুন বছরে আমরা সবাই যাতে আনন্দ, সুখ, শান্তি এবং কল্যাণের প্রাপ্তি লাভ করি, সে জন্য সকলের প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
শুভ নববর্ষ, নতুন দিনের উজ্জ্বল সূচনা হোক আমাদের সবার জন্য।
শহীদ