ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

ইসরায়েলবিরোধী বিবৃতিতে ভারত অনুপস্থিত, কেন দূরে থাকল নয়াদিল্লি?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:০৬, ১৬ জুন ২০২৫

ইসরায়েলবিরোধী বিবৃতিতে ভারত অনুপস্থিত, কেন দূরে থাকল নয়াদিল্লি?

ছবি: সংগৃহীত

ইরানে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার নিন্দা করে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে অংশ নেয়নি ভারত। চীন ও রাশিয়া নেতৃত্বাধীন এই জোটের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে নয়াদিল্লি একটি সূক্ষ্ম কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে, যা একদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এবং অন্যদিকে ইরানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের স্বার্থে গৃহীত।

গত শুক্রবার থেকে ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরানও শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে। এতে দুই দেশেই বহু বেসামরিক ও সামরিক ব্যক্তি হতাহত হয়েছেন। এরই মধ্যে SCO ইসরায়েলের এসব হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে তীব্র ভাষায় নিন্দা জানায়।

SCO-র বিবৃতি কী বলেছিল?
SCO—যার সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, রাশিয়া, ভারত, ইরান, পাকিস্তানসহ ৯টি দেশ। SCO এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের হামলাকে ‘আগ্রাসন’ এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে। বিবৃতিতে ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন, সাধারণ নাগরিক ও পরিকাঠামোতে আঘাত এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতির জন্ম দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক উপায়ে ইরান পরমাণু ইস্যুর সমাধানে জোর দেওয়া হয়।

ভারত কেন এই বিবৃতি থেকে বিরত থাকল?
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে ফোনালাপে উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয়পক্ষকে সংযম ও কূটনৈতিক পথে ফেরার আহ্বান জানান। তবে SCO-র পক্ষ থেকে দেওয়া কঠোর নিন্দা বিবৃতিতে ভারতের অংশগ্রহণ ছিল না। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, তারা বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ‘কোনো পক্ষই যেন উত্তেজনা বাড়ায় না’ সেই আহ্বান জানায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত এক জটিল দ্বৈত সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে। একদিকে ভারত ইসরায়েলের বৃহত্তম অস্ত্র ক্রেতা, ২০২৪ সালে গাজা যুদ্ধের সময় ভারতীয় কোম্পানিগুলো ইসরায়েলকে রকেট ও বিস্ফোরক রপ্তানি করেছিল। অপরদিকে, ইরানের চাবাহার বন্দর প্রকল্পে ভারত কয়েকশ কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছে—যা আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে ভারতের যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্লেষক কবীর তানেজা জানান, SCO-র বিবৃতিতে ভারতীয় অনুপস্থিতি শুধু ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্ব নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের প্রতিফলন। ভারত এখন ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি বড় ধরনের বাণিজ্য চুক্তির দিকেই অগ্রসর হচ্ছে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জুলাইয়ের শুরুর দিকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৭% শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।

ইতিমধ্যে ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে ইরানের বিরুদ্ধে আবার কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন, যার মধ্যে ভারতের চাবাহার প্রকল্প সম্পর্কিত ছাড়ও বাতিল হয়েছে। এর ফলে ভারতের ঐ বন্দর প্রকল্পও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

SCO-এর বিবৃতি থেকে নিজেদের দূরে রেখে ভারত কার্যত জোটটির ঐক্যকে দুর্বল করেছে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ অবস্থান গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছে। এর আগে ভারত জাতিসংঘে গাজা যুদ্ধ সংক্রান্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবেও ভোটদান থেকে বিরত ছিল।

মুমু ২

×