ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা ॥ বাজেট ২০২৪-২৫

ড. মিহির কুমার রায়

প্রকাশিত: ২১:০০, ৮ জুন ২০২৪

স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা ॥ বাজেট ২০২৪-২৫

স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা

অর্থনীতির নানা সূচক নিম্নমুখী হওয়ায় বাজেটটি রাখা হয়েছে সংকোচনমুখী ধরনের। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে ছয়টি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট প্রণয়নে মূল্যস্ফীতি, সুদের হার, রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি, পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ- এই ছয় চ্যালেঞ্জ প্রত্যক্ষ বিবেচনায় নিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। সেসব চ্যালেঞ্জের উত্তরণ ঘটিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাওয়ার উপযোগী বাজেটই প্রণয়ন করেছেন তিনি

এবারের বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম করা হয়েছে- ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিল, সেই লক্ষ্য পূরণকে সর্বাগ্রে জোর দেওয়া হয়েছে বাজেটে।

বাজেট পরিকল্পনায়  মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রপ্তানিপণ্যের বৈচিত্র্যকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রান্তিক মানুষের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি বাজেটে অগ্রাধিকারে দেওয়া হয়েছে। বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অগ্রাধিকার পেয়েছে। নি¤œ আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।

যেসব খাত দীর্ঘদিন কর অবকাশ সুবিধা পেয়ে আসছে, সেসব খাত থেকে এবারে কর অব্যাহতির সুবিধা উঠিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের  আকার  ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। ফলে, আগামী বাজেটের আকার চলতি বাজেট থেকে ৩৫ হাজার ১১৫ কোটি টাকা বা চার দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট পাঁচ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাজেটে দেশের মানুষের মাথাপিছু বরাদ্দ বেড়েছে ২ হাজার ১৭৪ টাকা। একইভাবে আয় বেড়েছে ২ হাজার ৬৭৪ টাকা। মাথাপিছু ঘাটতি কমেছে ৫৯৯ টাকা। প্রতিজনে বরাদ্দ ৪৬ হাজার ৯৩৭ টাকা। বাজেটে মোট যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। এবার জিডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট আয় ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

এ হিসাবে মাথাপিছু আয় ৩২ হাজার ১২০ টাকা। চলতি বছরে যা ছিল ২৯ হাজার ৪৪৬ টাকা। এ হিসাবে আয় বেড়েছে ২ হাজার ৬৭৪ টাকা। আগে যা ছিল ২ হাজার ৬৬৯ টাকা। এছাড়াও ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। মাথাপিছু ঘাটতি ১৪ হাজার ৮১৭ টাকা। অন্যদিকে এবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। মাথাপিছু বরাদ্দ ১৫ হাজার ৬১৬ টাকা।

আগের বছর যা ছিল ১৫ হাজার ৪৮৮ টাকা। আলোচ্য সময়ে মাথাপিছু এডিপি বেড়েছে ১১৮ টাকা। চলতি বছরে বেড়েছিল ২৭১ টাকা। এবারের বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে বৈদেশিক উৎস থেকে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা সংস্থান করা হবে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ টাকা। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধের ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের সুদ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা।

বাকি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ধরা হয়েছে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। বাস্তবতা বিবেচনা করে আগামী অর্থবছরে বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

খাতওয়ারি বরাদ্দ (এডিপি)
 সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে। এর বাইরেও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন আছে ১৩ হাজার ২৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ধরলে নতুন এডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প থাকছে এক হাজার ৩২১টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প এক হাজার ১৩৩টি, কারিগরি সহায়তার ৮৭টি এবং সমীক্ষা প্রকল্প রয়েছে ২১টি। মোট প্রকল্পের মধ্যে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি থেকে স্থানান্তর হবে এক হাজার ২৭৭টি প্রকল্প। বাকিগুলোর মধ্যে নতুন অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ৬০টি।

এছাড়া আগামী অর্থবছরের এডিপিতে নতুন কিন্তু অনুমোদনহীন প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে এক হাজার ৮৯৪টি, বৈদেশিক অর্থায়নের সুবিধার্থে অনুমোদনহীন নতুন ২৫৭টি প্রকল্প এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) প্রকল্প থাকবে ৮০টি। এডিপিতে নতুন এডিপির আকার চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় দুই হাজার কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) তুলনায় ২০ হাজার কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি।
 
বাজেট ও শেয়ারবাজার

প্রস্তাবিত বাজেটে ১০ শতাংশের কম শেয়ার ছেড়েছেÑ এমন কোম্পানিগুলোর আয়করের হার ২৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। তবে শর্ত পরিপালন করলে তা সাড়ে ২২ শতাংশ। এক্ষেত্রে ভাষাগত পরিবর্তন ছাড়া সবই আগের মতো। উল্টো অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর কমানো হয়েছে। এছাড়াও শেয়ার তালিকাভুক্তির বাইরে থাকা কোম্পানিগুলোর বর্তমান কর সাড়ে ২৭ শতাংশ।

শর্তপালনে ব্যর্থ হলে তা ৩০ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর সাড়ে ২৭ শতাংশ। কিন্তু পালন করলে তা ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর মানে হলো, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার প্রায় সমান। এতে নতুন কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত হবে না। কোম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়েছে। আগে কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা কাউকে শেয়ার দিতে চাইলে ৫ শতাংশ কর দিতে হতো।

প্রস্তাবিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে কেউ ছেলেমেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের শেয়ার দিতে চাইলে কর দিতে হবে না। এদিকে শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্টরাও প্রকাশ্যে কোনো কথা বলতে নারাজ। অন্যদিকে সমবায় সমিতির কর ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি কমানোর পাশাপাশি জিডিপি বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাবনা সংসদে পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থনীতির নানা সূচক নি¤œমুখী হওয়ায় বাজেটটি রাখা হয়েছে সংকোচনমুখী ধরনের। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে ছয়টি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী।

বাজেট প্রণয়নে মূল্যস্ফীতি, সুদের হার, রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি, পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ- এই ছয় চ্যালেঞ্জ প্রত্যক্ষ বিবেচনায় নিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। সেসব চ্যালেঞ্জের উত্তরণ ঘটিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাওয়ার উপযোগী বাজেটই প্রণয়ন করেছেন তিনি।

কেবল ২০২৪-২৫ অর্থবছর নয়, ২০২৬-২৭ অর্থবছর পর্যন্ত তিন অর্থবছরের জন্য মধ্যমেয়াদে সরকারের সামনের কী ধরনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা থাকতে পারে, সেটিও বিবেচনায় নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। মধ্যমেয়াদি এসব চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়েই নির্ধারণ করেছেন মধ্যমেয়াদি নীতিকৌশল। সে অনুযায়ীই আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। 
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে মধ্যমেয়াদি সাতটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন। প্রথমেই রয়েছে মূল্যস্ফীতির কথা। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে এ ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন বাজারে বিরাজমান উচ্চ সুদের হারকে। কারণ, উচ্চ সুদহার বিনিয়োগের গতি শ্লথ করে জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

মধ্যমেয়াদি তৃতীয় চ্যালেঞ্জটি হলো- কর-জিডিপি অনুপাত, যেটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সন্তোষজনক নয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও মধ্যমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম। ব্যাংকিং খাতের ঋণ ব্যবস্থাপনাকে পঞ্চম চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করেছেন অর্থমন্ত্রী। ২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতকে মধ্যমেয়াদের ষষ্ঠ ও সপ্তম চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মন্ত্রীর আশাবাদ, এসব নীতিকৌশলের সুফল হিসেবে আগামী অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। যা মধ্যমেয়াদে (২০২৬-২৭ অর্থবছর) এটি বেড়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রসঙ্গে বলেছেন, উন্নত বিশ্বের উচ্চ সুদের হার বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। এসব দেশে উচ্চ সুদহার সামনেও অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো কঠিন হতে পারে।

রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে সাময়িকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ ও বিলাসী ভোগ্যপণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নন-পারফর্মিং ঋণ ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য কিছু ব্যাংক একত্রীকরণের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়াটির সুফল পেতে কছুটা সময় লাগবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের বাজারের অস্থিতিশীলতা বড় একটি কারণ।

এর বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পদক্ষেপ হিসেবে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে। এতে রপ্তানি উৎসাহ পাবে, অফিশিয়াল চ্যানেলে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়বে। আর্থিক হিসাবে এখনো ঘাটতি থাকলেও তা কমে আসবে মধ্যমেয়াদে। আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়তে শুরু করবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। 

২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ, ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কিছু সুবিধা কমে যাবে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি বহুমুখীকরণ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং ব্যবসায়িক পরিবেশের ওপর গুরুত্বারোপ করার কৌশল নেবে সরকার। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেশের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য ক্ষতিসাধন করতে পারে উল্লেখ করে এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায় খুঁজে বের করার জন্য সঠিক বিশ্লেষণে গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা ও কর ফাঁকির ক্ষেত্র দূর করার জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন অর্থমন্ত্রী। রাজস্ব বোর্ডের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি করজাল সম্প্রসারণের উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। মধ্যমেয়াদে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ জিডিপির ১০ শতাংশে উন্নীত করতেও কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

সংকোচনমূলক পদক্ষেপের উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক সুফল পাওয়ার জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণের পাশাপাশি সহায়ক রাজস্বনীতি, অর্থাৎ ব্যয় কমানো ও কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় নিরুৎসাহিত করাসহ বিভিন্ন কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী বাজেটে বাজেট ঘাটতি কমানো ও সীমিত কলেবরে হলেও কৃচ্ছ্রসাধন অব্যাহত রাখা হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এ কৌশলে প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে যেতে পারে বলে আগামী অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে সরকারি ব্যয় ধীরে ধীরে বাড়ানোর লক্ষ্য থকবে। 
মধ্যমেয়াদে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি বিভিন্ন সম্ভাবনাও দেখছেন অর্থমন্ত্রী। নীতি বিবৃতিতে সুনির্দিষ্টভাবে ৯টি সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ দেখছেন তিনি। এগুলো হলোÑ কৃষি ও শিল্প উৎপাদন শক্তিশালী থাকবে এবং অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। উন্নত দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি মধ্যমেয়াদে স্থিতিশীল থাকবে, যা বাংলাদেশের রফতানি বাড়াতে সহায়তা করবে। সম্প্রতি গৃহীত পদক্ষেপের ফলে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকবে।

বিশ্বব্যাপী পণ্যের মূল্যহ্রাস ও দেশীয় বাজারে বিনিময় হারের স্থিতিশীলতার কারণে মধ্যমেয়াদে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি কমবে। মূল্যস্ফীতি কমার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তি পর্যায়ে ভোগ্যব্যয় বাড়বে এবং এর ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে। মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হার স্থিতিশীল হওয়ার কারণে আমদানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসবে। বিশ্বজুড়ে নীতিসুদের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে এবং মধ্যমেয়াদে তা কমে আসবে। এটি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নেওয়া বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগের কারণে কর রাজস্বের প্রবৃদ্ধিতে গতি সঞ্চার হবে। বিভিন্ন বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও রফতানি ও প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে, যা মধ্যমেয়াদে চলমান থাকবে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নত, টেকসই ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নই এই বাজেটের খাতভিত্তিক বরাদ্দ ও মধ্যমেয়াদি নীতি কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু। এ কৌশলের অধীনেই প্রস্তাবিত বাজেটের আকার করা হয়েছে চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে মাত্র ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ ও সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।

লেখক : অধ্যাপক (অর্থনীতি), সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

×