
ছবি: প্রতীকী
‘আমার কিছুই ভালো লাগছে না’— শুধু একটি বাক্য হলেও এর ভেতরে লুকিয়ে থাকতে পারে গভীর মানসিক যন্ত্রণা বা বিষণ্নতার সংকেত। আগে এমন কথা শুনলে আমরা বলতাম, ‘ঘুরে এসো, ভালো লাগবে’ বা ‘সময়ই ঠিক করে দেবে’। কিন্তু এখন আমরা বুঝি, এই ছোট্ট কথাটির পেছনে অনেক বড় সমস্যা লুকিয়ে থাকতে পারে।
বর্তমানে অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে এক ধরনের শূন্যতা, ক্লান্তি বা অস্থিরতা অনুভব করছেন। আগের মতো কিছুই ভালো লাগে না, কোনো আনন্দ কাজ করে না, হাসি আসে না— এই অনুভূতিগুলো যদি দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে তা বিষণ্নতার লক্ষণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন একটি মানসিক রোগ। এটি শরীরের মধ্যে রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা বা জীবনঘনিষ্ঠ চাপের কারণে সৃষ্টি হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে এটি এতটাই তীব্র হয় যে মনে হতে পারে ‘জীবনটাই অর্থহীন’, ‘বেঁচে থেকে লাভ নেই’।
বিষণ্নতার কিছু সাধারণ উপসর্গ হলো— সব সময় মন খারাপ থাকা, ক্লান্ত লাগা, কোনো কাজে মনোযোগ না দেওয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, ঘুমের সমস্যা, খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম, ওজন কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া ইত্যাদি। এমনকি অনেক সময় আত্মহত্যার চিন্তাও মাথায় আসতে পারে।
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে। প্রথমত, নিজের অনুভূতির প্রতি সজাগ হতে হবে। বুঝে নিতে হবে কেন ভালো লাগছে না, কিসে ক্লান্ত লাগছে বা কী নিয়ে উদ্বিগ্ন।
দ্বিতীয়ত, জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। একঘেয়ে রুটিন বদলে নতুন কিছু করতে হবে। নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া, নতুন কিছু শেখা, নতুন মানুষদের সঙ্গে মেশা, বই পড়া বা সৃজনশীল কোনো কাজে যুক্ত হওয়া।
তৃতীয়ত, শারীরিক সক্রিয়তা বাড়ানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি করা, ব্যায়াম করা, যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করা মন ভালো রাখে। প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো, প্রার্থনা করা, গান শোনা, সিনেমা দেখা, প্রিয় খাবার খাওয়া— এসব ছোট ছোট আনন্দ জীবনের মানসিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অন্যদের সঙ্গে নিজের অনুভূতি ভাগ করা। পরিবার, বন্ধু বা কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলা অনেক সময় অন্তরের ভার হালকা করে দেয়। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার মধ্যেও কোনো লজ্জা নেই। ঠিক যেমন জ্বর হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া স্বাভাবিক, তেমনি মন খারাপ থাকলে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া দরকার।
বিশ্বব্যাপী এখন মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশেও মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হচ্ছে। তবুও এখনো অনেকে মনোরোগ নিয়ে লজ্জা বোধ করেন, চিকিৎসা নিতে দ্বিধা করেন। অথচ এই সমস্যাগুলোর চিকিৎসা আছে, সমাধান আছে। প্রয়োজন শুধু সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার।
স্মরণ রাখা দরকার, ‘আমার কিছুই ভালো লাগছে না’ কথাটিকে হালকাভাবে নেবেন না। বরং মনোযোগ দিয়ে শুনুন, বোঝার চেষ্টা করুন। তাহলেই হয়তো কোনো এক মানসিক রোগের অর্ধেক চিকিৎসা হয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সচেতনতা ও সহানুভূতির মাধ্যমেই মানসিক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। একজন মানুষকে সময়মতো সাপোর্ট দিলে তার জীবন বদলে যেতে পারে। কাজেই মন খারাপ হলে মুখ ফিরিয়ে নিন না, বরং পাশে থাকুন। এটিই হতে পারে একজনের জীবনে সবচেয়ে বড় সহায়তা।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/CJ71IHDdcm8?si=Gm3uS6rlTwQ05F-s
এম.কে.