
আমরা সবাই সফল হতে চাই। কিন্তু দিনের শেষে ক্লান্তি যেন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। ঘুম কমে আসে, মাথা ভার লাগে, কাজ ফেলে রাখতে হয়, আর মন জুড়ে প্রশ্ন—“এত কষ্ট করেও যেন কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছে না কেন?” হতে পারে, আপনি নিজের অজান্তেই কিছু এমন অভ্যাস গড়ে তুলেছেন, যা আপনার শক্তি নিঃশেষ করে ফেলছে। সাফল্যের পথে চলতে গেলে শুধু পরিশ্রম নয়, প্রয়োজন নিজেকে বোঝা, নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া।
জেনে নেওয়া যাক এমন পাঁচটি ক্ষতিকর অভ্যাস, যেগুলো আপনি না জেনেই অনুসরণ করছেন, আর যেগুলোর প্রভাব পড়ছে আপনার কর্মশক্তি, মনোযোগ ও সামগ্রিক মানসিক সুস্থতার ওপর।
১. বিশ্রামের ভাষা না শোনা
দিনভর কাজ, রাতভর পার্টি বা অফিসের প্রজেক্ট, আবার পরদিন সকালে আবার নতুন দিনের শুরু—এই চক্রে শরীর ও মনের যে বিশ্রাম প্রয়োজন, তা প্রায়শই অগ্রাহ্য হয়। অথচ শরীর-মন বারবার সংকেত দেয়, “আমি ক্লান্ত।” এই সংকেতকে উপেক্ষা করতে করতে শরীর ধীরে ধীরে তার কর্মক্ষমতা হারায়, আর ক্লান্তি ভর করে মনের ওপরও। দিনে কিছুটা সময় নিজেকে দেওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম ও নিরবচ্ছিন্ন বিশ্রাম নেওয়া—এটাই হতে পারে শক্তি পুনরুদ্ধারের প্রথম ধাপ।
২. সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়া
আমরা অনেকেই একসঙ্গে বহু দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে নিজেকে ‘সুপারহিউম্যান’ ভাবতে ভালোবাসি। অফিস, পরিবার, সন্তান, বন্ধু—সব দিক একাই সামলে নিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মাল্টিটাস্ক করছি। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, একসঙ্গে একাধিক কাজ করলে মস্তিষ্ককে প্রতি মুহূর্তে নতুন করে মানিয়ে নিতে হয়। এতে মনোযোগ কমে, কর্মদক্ষতা কমে, আর ক্লান্তি বাড়ে বহুগুণে। বরং একবারে একটি কাজ মন দিয়ে করলে সেটি বেশি ভালো হয় এবং আপনি থাকেন বেশি সতেজ।
৩. স্নায়ু না বিশ্রাম পেয়ে আরও চাপে পড়ে
রাত হয়েছে, কিন্তু ফোন হাতে এখনও স্ক্রল চলছে। চ্যাট, সিনেমা, রিল—সবই মনে হয় বিশ্রামেরই এক অংশ। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পর্দার আলো, তথ্যের প্রবাহ ও আবেগময় কনটেন্ট আমাদের স্নায়ুকে বিশ্রামের বদলে আরও বেশি উদ্দীপিত করে তোলে। ফলে ঘুম গভীর হয় না, মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায় না, আর পরের দিন আপনি নিজেকে পান ক্লান্ত ও বিহ্বল অবস্থায়।
৪. নিজের অনুভূতিকে চেপে রাখা
অন্যদের খুশি রাখতে গিয়ে নিজের মনের কথা কি বারবার চেপে রাখছেন? বারবার “না” বলতে গিয়েও “হ্যাঁ” বলে দিচ্ছেন? এমনটা করলে আপনি মানসিকভাবে ফুরিয়ে যেতে পারেন। নিজের অনুভূতিকে অস্বীকার করা মানেই মানসিক শক্তিকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করা। একে মনে করুন ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপের মতো—চালু আছে, কিন্তু বুঝতে পারছেন না, কতটা চার্জ খেয়ে নিচ্ছে। তাই নিজেকেও সময় দিন, নিজের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিন।
৫. দিনের শুরুটাই মস্তিষ্ককে চাপে ফেলে দিচ্ছে
সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফোন হাতে নেওয়ার অভ্যাস কি আপনারও আছে? দিনের শুরুতেই সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্যবন্যা আপনার মস্তিষ্ককে অতিরিক্ত উত্তেজনায় ঠেলে দেয়। এতে স্নায়ু চাপে পড়ে, মন খিটখিটে হয়, আর দিনের বাকি সময়েও তার ছাপ পড়ে। এর বদলে সকালে উঠে কিছুক্ষণ শান্ত থাকা, শ্বাস-প্রশ্বাসে মনোযোগ দেওয়া ও দিনের পরিকল্পনা করে নেওয়া—এই অভ্যাসগুলো আপনাকে আরও স্থির ও ফোকাসড রাখতে পারে।
সানজানা