
ছবি: সংগৃহীত
ইরান ও ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে সংঘাত থামানোর জন্য তেহরানের হাতে কার্যকর কোনো বিকল্প নেই। বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রকেও সরাসরি টেনে আনতে পারে, যার পরিণতি হতে পারে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ বিপর্যয়।
গত ১৩ জুন থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল অন্তত ২৪০ ইরানিকে হত্যা করেছে, যাদের মধ্যে বহু বেসামরিক নাগরিকও রয়েছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন, হাসপাতাল, আবাসিক ভবন এমনকি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও হামলার শিকার হয়েছে।
জবাবে ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি, হাইফার তেল শোধনাগার, আবাসিক ভবন ও একটি হাসপাতালকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এতে ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান এখন আশা করছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে থামাতে পারেন। কারণ ট্রাম্পও চাইছেন না যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি যুদ্ধের ফাঁদে পড়ুক। তবে ট্রাম্প আবার ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ না হলে কঠোর পরিণতির হুমকিও দিয়েছেন।
ইরান ইতিমধ্যে মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে পাঁচ দফা আলোচনা করেছে, কিন্তু পুরো পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধের শর্তে কোনো চুক্তি হয়নি। বিশেষজ্ঞ রেজা হাকবারি বলেন, “এটা ইরানের প্রধান কৌশলগত হাতিয়ার—এটা ছেড়ে দেওয়া তাদের জন্য অবিশ্বাস্য সিদ্ধান্ত হবে।”
সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির বিশ্লেষক নেগার মরতাজাভি বলেন, “ইরান মনে করে যদি তারা প্রতিশোধ না নেয়, তাহলে ইসরায়েল আরও বড় হামলা চালাবে। কিন্তু প্রতিবার পাল্টা জবাবও ইসরায়েলকে নতুন হামলার সুযোগ দেয়।”
ইরানের প্রধান মিত্র হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে গত বছর এক ভয়াবহ যুদ্ধে দুর্বল হয়ে পড়েছে। আর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় ইরান আরও এক কৌশলগত মিত্র হারিয়েছে।
ইরান এখন যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি ও সৈন্যদের ওপর হামলার হুমকি দিচ্ছে, বিশেষ করে ইরাকের মিত্রদের মাধ্যমে। কিন্তু বিশ্লেষক বারবারা স্ল্যাভিন বলছেন, এই ধরনের হামলা ট্রাম্প প্রশাসনের যুদ্ধপন্থী সদস্যদের উসকে দিতে পারে।
ইরান যদি হরমুজ প্রণালী দিয়ে তেলবাহী জাহাজে হামলা চালায়, তবে বৈশ্বিক তেলের দাম বেড়ে যাবে। কিন্তু এতে ইরানের নিজের অর্থনীতি ধসেও পড়তে পারে। কারণ ইরান নিজেও এই পথেই তেল রপ্তানি করে।
ইরান ভালো করেই জানে, যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে টেনে আনলে নিজেদের ৪০ বছরের অর্জন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তাই তারা আপাতত যুদ্ধকে সীমিত রাখতে চাইছে।
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হাসান আহমাদিয়ান বলেন, “ইরান বিশ্বাস করে, তারা ইসরায়েলকে যথেষ্ট ব্যথা দিতে পারলে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করবে।”
ইসরায়েল নিজেই প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাটতিতে ভুগছে বলে সংবাদমাধ্যমে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ইসরায়েলের পক্ষেও কঠিন হতে পারে।
এই যুদ্ধ দীর্ঘ হলে উভয় পক্ষেরই বিপর্যয় আসন্ন। তাই বিশ্লেষকদের মতে, ইরান হয়তো অপেক্ষা করছে—যতক্ষণ না যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল নিজেই থেমে যায়। কিন্তু এখনো ইরানের সামনে সবচেয়ে বাস্তবসম্মত পথ হলো যুদ্ধ সীমিত রাখা এবং কূটনৈতিকভাবে সময় বের করে নেওয়া।
মুমু ২