
ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে সংঘটিত দুটি ভয়াবহ হাসপাতাল হামলা হৃদয়বিদারক মানবিক ট্র্যাজেডির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কাভারেজের ক্ষেত্রে এক গভীর বৈষম্যের প্রশ্নও সামনে এনেছে। এই বৈষম্য বিশেষ করে ইরানিদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
একদিকে, ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় বিরশেবা শহরের একটি হাসপাতালে সাম্প্রতিক বোমা হামলা মুহূর্তেই আন্তর্জাতিক মিডিয়ার শিরোনাম হয়ে ওঠে। মার্কিন এবং ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এটি নিয়ে জরুরি আলোচনায় বসে, নিন্দা জানায় রাষ্ট্রনেতারা, এবং সরাসরি সম্প্রচারে উঠে আসে ধ্বংসের চিত্র, আহতদের আর্তনাদ ও চিকিৎসকদের সংগ্রাম।
কিন্তু এর ঠিক তিন দিন আগেই ইরানের কেরমানশাহ শহরের একটি হাসপাতালে ঘটে একই ধরনের একটি বোমা হামলা—নিহত হয় ১১ জন, আহত হয় আরও অনেকে। হামলার সময় ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলো শিশু, গর্ভবতী নারী এবং গুরুতর রোগী। সেই ঘটনায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া চিকিৎসক ও রোগীদের উদ্ধারে কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়।
তবে এই মানবিক বিপর্যয়ের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তেমনভাবে জায়গাই পায়নি। বড় কোনও পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম সরাসরি এই ঘটনার ভিডিও বা তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও ছিল না তৎপর কোনও নিন্দা।
এই বৈষম্যমূলক মনোভাব নিয়ে ইরানি নাগরিক ও বিশ্লেষকদের মধ্যে ক্ষোভ তীব্র হয়ে উঠছে। তাদের ভাষ্য, “রক্ত যদি হাসপাতালের ফ্লোরে ঝরে, সেটা কি দেশের নাম দেখে গুরুত্ব পায়?” অনেকে বলছেন, ইরানের সাধারণ নাগরিকদের দুর্ভোগ হয়তো পশ্চিমা বর্ণনায় রাজনৈতিক বিবেচনায় ‘কম গুরুত্বপূর্ণ’ হয়ে উঠেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর এই বাছবিচারমূলক কভারেজ মধ্যপ্রাচ্যের সংকটে পক্ষপাতমূলক ভূমিকাকে স্পষ্ট করে তুলেছে। বহু সময় মানবিক বিপর্যয়কে মূল্যায়ন করা হয় ভূরাজনৈতিক স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রেক্ষাপটে। যদি ভুক্তভোগীরা পশ্চিমা মিত্রদেশের নাগরিক হন, তাহলে কভারেজ ও নিন্দা দ্রুত আসে। কিন্তু প্রতিপক্ষ রাষ্ট্রে এমন কিছু ঘটলে তা প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়।
বিরশেবা ও কেরমানশাহ—দুই হাসপাতালেই শিশুদের কান্না ছিল, ধ্বংসস্তূপ ছিল, আতঙ্কে কাঁপা মানুষ ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রচারে একটিই কেবল জায়গা পেলো। এতে প্রশ্ন উঠেছে, “একই মানবতা কি সব জায়গায় সমানভাবে মূল্য পায় না?”
ফারুক