ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

একে একে কীভাবে তৈরি হলো সৌরজগতের গ্রহগুলো?

প্রকাশিত: ১৯:০৮, ২০ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৯:০৯, ২০ জুন ২০২৫

একে একে কীভাবে তৈরি হলো সৌরজগতের গ্রহগুলো?

ছবি:সংগৃহীত

আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন, সূর্য আর তার চারপাশের গ্রহগুলো আসলে কবে, আর কীভাবে তৈরি হয়েছিল? অথবা সূর্যের কাছের গ্রহগুলো কি দূরেরগুলোর চেয়ে আগে জন্মেছিল?

এই প্রশ্ন করেছেন ১০ বছরের গাভরিয়েল, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকির পদুকাহ শহরের বাসিন্দা।

চলুন, এবার আমরা সময়ের পেছনে ফিরে যাই কোটি কোটি বছর আগের এক মহাজাগতিক যাত্রায়!

সূর্যের জন্ম ও ধুলোর নৃত্য
প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে, অর্থাৎ ৪৬০ কোটি বছর আগে, মহাকাশে একটি বিশাল গ্যাস ও ধুলার মেঘ নিজেদের মধ্যাকর্ষণে ভেঙে পড়ে কেন্দ্রে জড়ো হতে শুরু করে। এরই ভেতর থেকে জন্ম নেয় আমাদের সূর্য।

সূর্য গঠনের পর তার চারপাশে রয়ে যায় প্রচুর গ্যাস ও ধুলাবালি। এই সব উপাদান ঘুরতে ঘুরতে একটি চ্যাপ্টা চাকতির মতো আকার নেয়, যাকে বিজ্ঞানীরা বলেন প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্ক।

এই চাকতির ভেতর ছোট ছোট ধুলোকণাগুলো একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খেতে খেতে বড় হতে থাকে। প্রথমে তৈরি হয় ছোট কণিকা, তারপর পাথরের টুকরো, তারপর পাহাড়সম আকার—শেষমেশ পুরো একটি গ্রহ!

এভাবেই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে আমাদের পরিচিত গ্রহগুলো—পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি এবং আরও অনেকে।

বরফ রেখা ও বিশাল গ্রহদের জন্ম
সেই সময়, সূর্য থেকে অনেক দূরে একটি অঞ্চল ছিল, যা এতটাই ঠান্ডা ছিল যে সেখানকার পানি, মিথেন ও অ্যামোনিয়ার মতো গ্যাস বরফে পরিণত হতে পারত। বিজ্ঞানীরা একে বলেন "আইস লাইন" বা "বরফ রেখা"।

এই রেখার বাইরে, যেখানে বরফ জমতে পারত, সেখানে ধুলা, গ্যাস ও বরফ একত্রে জড়িয়ে তৈরি হয় বৃহৎ গ্যাস-গ্রহ—বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন।

অন্যদিকে, সূর্যের কাছে যেসব ছোট গ্রহ—যেমন বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল—তারা জন্ম নেয় একটু দেরিতে, কারণ কাছাকাছি অঞ্চলে কাঁচামালের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম ছিল।

কে আগে, কে পরে জন্মাল?
বিজ্ঞানীদের মতে:

সবচেয়ে আগে তৈরি হয় বৃহস্পতি ও শনি, মাত্র কয়েক মিলিয়ন (লক্ষ লক্ষ) বছরের মধ্যেই।

এরপর তৈরি হয় ইউরেনাস ও নেপচুন, সময় লাগে প্রায় ১ কোটি বছর।

সবচেয়ে পরে জন্ম নেয় সূর্যের কাছের ছোট গ্রহগুলো—পৃথিবীসহ, যাদের গঠনে সময় লেগে যায় প্রায় ১০ কোটি বছর বা তার বেশি।

তাহলে সহজভাবে বললে:

👉 সূর্যের সবচেয়ে কাছে যেসব ছোট গ্রহ, তারা হলো "সবচেয়ে ছোট ভাইবোন"
👉 বৃহস্পতি ও শনি হলো "সবচেয়ে বড় ভাইবোন"
👉 আর ইউরেনাস ও নেপচুন হলো "মাঝের ভাইবোন"

যদিও এদের বয়সে প্রায় ৯ কোটি বছরের পার্থক্য, তা-ও মহাবিশ্বের বয়স (১৩.৮ বিলিয়ন বছর) তুলনায় এটা এক চোখের পলকের মতোই স্বল্প সময়।

গ্রহদের জায়গা বদলের নাটক
শুধু জন্মেই থেমে থাকেনি এই গ্রহরা।

নেপচুন তার জায়গা থেকে সরে আরও বাইরে চলে যায়, ইউরেনাসের স্থান দখল করে নেয়।

বৃহস্পতি সূর্যের দিকে এগিয়ে এসে, তার বিশাল মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দিয়ে কিছু নতুন তৈরি হতে থাকা গ্রহকে সূর্যের দিকে ঠেলে দেয়!

এমনকি সে কিছু গ্রহাণু ও বস্তুকে সৌরজগতের বাইরেও ছুড়ে ফেলে দেয়।

সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো:

বৃহস্পতির এই মাধ্যাকর্ষণ টানাটানির কারণেই পৃথিবী এমন এক জায়গায় এসে স্থির হয়, যেটা বিজ্ঞানীরা বলেন "গোল্ডিলকস জোন"—একটি আদর্শ এলাকা, যেখানে পানি তরল অবস্থায় থাকতে পারে, আর জীবন গড়ে উঠতে পারে।

অর্থাৎ, বৃহস্পতি না থাকলে, পৃথিবীও হয়তো এমন হতো না, কিংবা আমরা হয়তো থাকতামই না!

আমাদের সৌরজগতের জন্ম আসলে এক বিস্ময়কর, নাটকীয় ও বৈজ্ঞানিক কল্পনাকেও হার মানানো গল্প। প্রতিটি গ্রহের গঠন, চলাচল আর অবস্থান মিলে তৈরি করেছে জীবনের জন্য উপযোগী একটি গ্রহ—আমাদের পৃথিবী।

 

মারিয়া

×