ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

সৌরজগতে আবারও নবম গ্রহের ইঙ্গিত!

প্রকাশিত: ২০:১৩, ২০ জুন ২০২৫

সৌরজগতে আবারও নবম গ্রহের ইঙ্গিত!

ছবিঃ সংগৃহীত

২০০৬ সালে প্লুটোকে গ্রহের মর্যাদা থেকে বাদ দেওয়ার পর থেকে আমাদের সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা আটে নেমে আসে। কিন্তু এখন, একদল জ্যোতির্বিদ এমন প্রমাণ পেয়েছেন যা ইঙ্গিত দেয়—নেপচুনের অনেক দূরে, অন্ধকারে লুকিয়ে থাকতে পারে আমাদের সৌরজগতের একটি নবম গ্রহ।

দূর আকাশে রহস্যময় সঙ্কেত
তাইওয়ানের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি রহস্যময় বস্তু শনাক্ত করেছেন, যা নেপচুনের মতো বিশাল আকৃতির এবং সূর্য থেকে প্রায় ৪৬.৫ থেকে ৬৫.১ বিলিয়ন মাইল দূরে অবস্থান করতে পারে। এই গ্রহটি যদি সত্যিই অস্তিত্বে থাকে, তবে এটি সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ বছর সময় নিতে পারে।

এই গবেষণাটি ১৯৮৩ সালে ইনফ্রারেড অ্যাস্ট্রোনমিকাল স্যাটেলাইট (IRAS) এবং ২০০৬ সালে জাপানের একারি (AKARI) স্যাটেলাইট দ্বারা সংগৃহীত ইনফ্রারেড ডেটার উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। দুই দশকের ব্যবধানে নেওয়া চিত্রগুলোর তুলনা করে দেখা গেছে, এক বস্তু সামান্য সরে গেছে—যা ইঙ্গিত করে এটি একটি ধীরে চলমান গ্রহ হতে পারে।

কুইপার বেল্টের গোপন সংকেত
নেপচুনের বাইরে অবস্থিত বরফে ভরা অঞ্চল কুইপার বেল্ট-এ বহুদিন ধরেই জ্যোতির্বিদরা অদ্ভুত গঠন এবং গতি লক্ষ্য করছেন। কিছু বস্তু অপ্রত্যাশিতভাবে একসঙ্গে জড়ো হয়ে আছে, আবার কিছু বিপরীত দিকে চলছে—যা একটি অদৃশ্য, বিশাল গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ টানের প্রমাণ হতে পারে।

নাসার গবেষকরা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন, এই অস্বাভাবিকতার পেছনে একটি সুদূর গ্রহ দায়ী থাকতে পারে। নতুন প্রমাণ সেই সম্ভাবনাকে আরও দৃঢ় করছে।

কেমন হবে এই গ্রহ?
গবেষকরা বলছেন, এই সম্ভাব্য নবম গ্রহের ভর পৃথিবীর তুলনায় ৭ থেকে ১৭ গুণ বেশি হতে পারে। এটি বরফ ও গ্যাসে ঘেরা, ইউরেনাস বা নেপচুনের মতো একটি 'আইস জায়ান্ট' হতে পারে। এত দূরে অবস্থান করায় এটি অত্যন্ত ঠান্ডা, প্রায় –৩৭০°F থেকে –৩৬০°F পর্যন্ত।

এই গ্রহ খুব কম আলো প্রতিফলিত করে, তাই সাধারণ টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা কঠিন। তবে ইনফ্রারেড টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে এর ক্ষীণ উজ্জ্বলতা।

সাবধানী আশাবাদ
যদিও গবেষণার ফলাফল অনেক আশাব্যঞ্জক, বিজ্ঞানীরা এখনই নিশ্চিত নন। এই বস্তুটিকে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র দুইটি পুরনো পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে। নিশ্চিত হতে হলে আরও পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন। শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে নির্দিষ্ট আকাশখণ্ড আবার পরীক্ষা করা হবে। যদি বস্তুটি নিয়মিতভাবে সরতে দেখা যায়, তবে সেটিই হতে পারে আমাদের সৌরজগতের নবম গ্রহের অকাট্য প্রমাণ।

যদি সত্যিই গ্রহ হয়?
যদি এই নবম গ্রহ সত্যিই আবিষ্কৃত হয়, তবে এটি সৌরজগত ও গ্রহ গঠনের তত্ত্বে বড় পরিবর্তন আনবে। এর ফলে বোঝা যাবে যে আমাদের সৌরজগতে এতদিন একটি বিশাল গ্রহ গোপনে ছিল। আর এই ঘটনা ইঙ্গিত করতে পারে—অন্যান্য নক্ষত্রমণ্ডলেও এমন লুকিয়ে থাকা গ্রহ থাকতে পারে, যেগুলোর এখনো কোনো খোঁজ আমরা পাইনি।

সমাপ্তি নয়, বরং নতুন সূচনা
প্লুটোকে বাদ দেওয়ার পর অনেকে ভাবছিলেন গ্রহের সংখ্যা আটেই শেষ। কিন্তু এই নতুন আবিষ্কার সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। যদি সত্য হয়, তবে বইপত্র থেকে শুরু করে আমাদের মহাকাশ-ধারণা—সবকিছুর পুনর্লিখন শুরু হবে।
 

মারিয়া

×