
ছবিঃ লালমোহনে তেতুলিয়া নদীতে নিখোঁজের ঘটনায় শোকে কাতর কিশোর মো. নুহাদের বাবা-মা।
‘আমার ছেলেকে এনে আমার কোলে দেন। যেকোনোভাবে আমার ছেলেকে আপনারা এনে দেন। আমরা গরিব মানুষ, বদলা দিয়ে খাই। আপনারা আমার ছেলেকে জীবিত না হলেও অন্তত লাশটা এনে দেন।’—এভাবেই নিখোঁজ ছেলেকে ফিরে পেতে আহাজারি করছিলেন মোসা. মিনারা বেগম নামের এক মা।
তিনি ভোলার লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চরকচ্ছপিয়া এলাকার মুনাফ বেপারী বাড়ির মো. রেজাউলের স্ত্রী। তাঁর ১৪ বছর বয়সী ছেলে মো. নুহাদ তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে লঞ্চের ধাক্কায় ট্রলার ডুবে নিখোঁজ হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তেঁতুলিয়া নদীর ব্লান্টির চর এলাকায় রাঙ্গাবালী থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া এমভি জামাল-৮ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায় মাছ ধরার ট্রলারটি। ওই ট্রলারে থাকা ৩ জন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছে কিশোর নুহাদ। দুর্ঘটনার পর থেকে শুক্রবার বিকেল ৪টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিখোঁজ নুহাদের কোনো সন্ধান পায়নি পরিবারের লোকজন। এতে করে তার পরিবারে শোকের মাতম চলছে। বুকের মাঝে কান্না চেপে ছেলেকে অথৈ পানিতে খুঁজে বেড়াচ্ছেন বাবা মো. রেজাউল।
তিনি বলেন, ‘আমার ৯ ছেলে-মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে সবার ছোট নুহাদ। বৃহস্পতিবার প্রতিবেশী জাহান উদ্দিনের ট্রলারে করে তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরতে যায় নুহাদসহ মোট চারজন। এ সময় ঢাকাগামী এমভি জামাল-৮ নামে একটি লঞ্চ তাদের মাছ ধরা ট্রলারকে ধাক্কা দেয়। এতে ওই ট্রলারে থাকা তিনজন জীবিত অবস্থায় তীরে ফিরলেও আমার ছেলে নুহাদ এখনো নিখোঁজ রয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে সারারাত এবং শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। তবে কোনোভাবেই তার হদিস পাচ্ছি না। আবারও নদীতে যাবো ছেলেকে খুঁজতে। এতো সময় যেহেতু পার হয়ে গেছে, তাই হয়তো আমার ছেলে আর বেঁচে নেই। তাই আমি ছেলের লাশটা হলেও শেষবারের মতো দেখতে চাই। ওই লাশটা নিজের হাতে মাটি দেবো। তবে যে লঞ্চ এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, আমি তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
এদিকে ট্রলার মালিক জাহান উদ্দিন জানান, ‘আমার তিন ছেলেসহ নুহাদ নদীতে মাছ ধরতে যায়। বিকেলের দিকে জাল টেনে তোলার সময় ঢাকাগামী একটি লঞ্চ ট্রলারটিকে ধাক্কা দিয়ে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলেছে। এতে আমার অন্তত দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় ট্রলারটি ভেঙে ডুবে গেলে আমার ছেলেরা নদী সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও নুহাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার পুরো রাত এবং শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত খুঁজেও নুহাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। তাই আমি ওই লঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কঠোর বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিখোঁজ কিশোরকে বহুস্থানে খুঁজেছি। তবে কোনোভাবেই তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া নদীতে থাকা জেলেদেরকেও বলে দেওয়া হয়েছে—তারা ওই কিশোরের কোনো সন্ধান পেলে যেন আমাদের দ্রুত অবহিত করেন।’
এ ব্যাপারে লালমোহন থানার ওসি মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘আমরা দুর্ঘটনার খবর পেয়েছি। নিখোঁজ ওই কিশোরের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়ের করলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ইমরান