
ছবি: সংগৃহীত
কুমিল্লায় পুলিশের হাতে ইয়াবাসহ আটকের পর শেখ জুয়েল নামের এক বিএনপি কর্মীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাতে জেলার মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার মৃত্যু হয়। শেখ জুয়েল মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা গ্রামের শেখ বাড়ির মৃত শেখ গোলাম সারোয়ারের ছেলে।
পুলিশের নির্যাতনে জুয়েলের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার। তবে শুক্রবার (২০ জুন) দুপুরে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. নাজির আহমেদ খান বলেন, ৭০ পিস ইয়াবাসহ পাঁচ জনকে ধরে বৃহস্পতিবার বিকালে থানায় আনার পর রাত সোয়া ৮টার দিকে জুয়েল বুকে ব্যথা অনুভব করার কথা ডিউটি অফিসারকে জানায়। এ সময় পুলিশ দ্রুত তাকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এক্ষেত্রে পুলিশ তাকে কোনো ধরনের মানসিক কিংবা শারীরিক নির্যাতন করেনি বলেও জানান তিনি।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে থানার সামনে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় লোকজন। পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাঙ্গরা বাজার ব্রিক ফিল্ড এর পূর্বপাশে জনৈক হেলালের বাড়ি থেকে ৭০ পিস ইয়াবাসহ জুয়েল ও তার ৪ সহযোগীকে আটক করে পুলিশ। রাতে থানা হাজতে জুয়েল অসুস্থ হয়ে পড়লে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তার (জুয়েল) স্ত্রী শিল্পী বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে আমার স্বামী ইন্টারনেটের বিল কালেকশন করতে যায়। দুপুরের পরপরই খবর পাই যে আমার স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। পরে থানায় গিয়ে তার সাথে দেখা করি। সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় আমার স্বামী আমাকে বলেছে যে, আমি কিছু করি নাই। আমাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করো।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাতে খবর পাই, পুলিশ আমার স্বামীকে মুরাদনগর হাসপাতালে নিয়ে গেছে। আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার স্বামী আর বেঁচে নেই।’
জুয়েলের ছেলে শেখ সিহাব বলেন, ‘বিনা অপরাধে পুলিশ আমার বাবাকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলছে। আমরা হাসপাতালে গিয়ে বাবাকে মৃত দেখতে পাই।’
জুয়েলের চাচাতো ভাই বিএনপি নেতা শেখ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাই জুয়েল বিএনপির কর্মী। বাঙ্গরা বাজার থানার এসআই আল-আমিন তাকে ধরে নিয়ে গেছে এমন খবর পেয়ে রাত সাড়ে আটটায় কল দিয়ে জুয়েলের বিষয়ে জানতে চাই। তখন তিনি আমাকে মুরাদনগর হাসপাতালে আসতে বলেন। হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাইকে মৃত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে।’
মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল ইসলাম মানিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাত ৮টা ৫০ মিনিটে ভিকটিমকে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তাকে মৃত দেখতে পাই।’
এদিকে মৃত্যুর খবর এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজন রাতে বাঙ্গরা বাজার থানার সামনে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) এ কে এম কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৭০ পিস ইয়াবাসহ জুয়েল ও তার ৪ সহযোগীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে রাতে থানায় সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’ এই পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য, আটক জুয়েলকে পুলিশ নির্যাতন করেনি।
শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. নাজির আহমেদ খান বলেন, ‘৭০ পিস ইয়াবাসহ পাঁচ জনকে ধরে বৃহস্পতিবার বিকালে থানায় আনার পর রাত সোয়া ৮টার দিকে জুয়েল বুকে ব্যথা অনুভব করার কথা ডিউটি অফিসারকে জানায়। এ সময় পুলিশ দ্রুত তাকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।’
তিনি আরও জানান, পুলিশ তাকে কোনো ধরনের মানসিক কিংবা শারীরিক নির্যাতন করেনি। পরিবারের পক্ষ থেকে নির্যাতনে জুয়েলের মৃত্যুর অভিযোগটি সঠিক নয়। লাশের ময়নাতদন্তে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বের হয়ে আসবে, সেই অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মীর শাহ আলম/রাকিব