
নির্মাণের শুরু থেকেই প্রায় বিকল হয়ে আছে পানি সরবরাহের একমাত্র অগভীর নলকূপটি। খামারের পাঁচটি পুকুরের মধ্যে প্রায় গুলোতে পানি নেই। নেই কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থাও। নানা জটিলতায় অর্ধযুগ ধরে প্রায় বন্ধ রয়েছে দুর্গাপুরের মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার। এতে মাছের পোনা সংগ্রহে ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন স্থানীয় মৎস্য খামারিরা। দ্রুত সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ না নিলে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে দুর্গাপুর উপজেলার একমাত্র সরকারি মৎস্য বিজ উৎপাদন খামারটি।
উপজেলা মৎস্য বীজ উৎপাদন কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৬০ বছরের পুরনো এই মৎস্য খামারটি উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ৬ একর জায়গার উপর নির্মিত হয়েছে। পরবর্তীতে ১৯৯২ সনে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে হ্যাচারিটিতে পোনা উৎপাদনের জন্য তৈরি করা হয় ১৫ হাজার বর্গফুটের ২টি ও ১০ হাজার বর্গফুটের ৩টি চৌবাচ্চা। এছাড়াও কার্প হ্যাচারি কমপ্লেক্সের রেণু ও পোনা উৎপাদনের জন্য বসানো হয় ৬টি রেণু উৎপাদন সিলিন্ডার। তবে চালুর পর থেকে বিকল হয়ে পড়ে রেণু ও পোনা উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত পানি সরবরাহের অ-গভীর নলকুপটি। এতে বন্ধ হয়ে যায় রেণু ও পোনা উৎপাদনের সিলিন্ডার গুলো। বিকল্প উপায়ে পানি সরবরাহের চেষ্টা করা হলেও পানিতে অতিরিক্ত আয়রণ থাকায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে খামারের প্রায় সকল অবকাঠামো নষ্ট হয়ে গেছে। পানিস্বল্পতার কারণে প্রায় অর্ধমৃত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মৎস্য খামারটি।
এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভঙ্গুর অবস্থায় পড়ে আছে পানির পাম্প স্থাপন করা ঘরটি। খামার ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের দোতলা ভবনটিও জরাজীর্ণ। অফিসকক্ষের ছাদ ও দেওয়ালের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। ঝুঁকি নিয়ে চলছে দাপ্তরিক কার্যক্রম। পাশেই টিনশেডের আবাসিক ভবন, সেটিরও বেহাল দশা। এর একটু সামনে বড় বড় পাঁচটিটি পুকুর, তার মধ্যে প্রতিটিই পানিশূন্য। খামারের পশ্চিম পার্শ্বে থাকা হ্যাচারির সকল অবকাঠামো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। জং ধরে প্রায় প্রতিটি যন্ত্রই এখন অচল।
মৎস্য চাষি আব্দুল খালেক বলেন, এই খামারের রেনু উৎপাদন না হওয়ায় চরম কষ্টে আছি আমরা। দুর্গাপুরে অসংখ্য মৎস্য চাষি রয়েছে। বর্তমানে গৌরীপুর ও ময়মনসিংহ থেকে মৎস্য আমরা মাছের রেণু পোনা সংগ্রহ করি। দূরদূরান্ত থেকে রেনু সংগ্রহ করায়, ওই রেণু পোনা থেকে মাছ চাষে আমরা তেমন ভালো ফলন পাই না। এর আগে, দুর্গাপুর সরকারি হ্যাচারি থেকে যখন মাছের রেণু পোনা সংগ্রহ করতাম, তখন আমাদের ঠিকই লাভ হতো। সরকারের কাছে জোর দাবী জানাই, দুর্গাপুরের হ্যাচারিটি যেনো চালু করা হয়।
রেনু উৎপাদন নিয়ে মৎস্য খামারি স্বপন চন্দ্র দাস বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে বিভিন্ন মাছের চাষ করে আসছি। স্থানীয় ভাবে হ্যাচারী না থাকায় এলাকর বাহির থেকে মাছের পোনা আনতে হয়। জেলায় যে মৎস্য হ্যাচারি আছে, তা সকলের প্রয়োজন মেটাতে পারছেনা। দুর্গাপুরে যদি ভালো মানের পোনা পাওয়া যেত, তাহলে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আমাদের আর পোনা আনা লাগতো না। এতে আমাদের অনেক খরচ হয়। দুর্গাপুরের হ্যাচারীটি চালু করার জন্য, প্রশাসনকে সু-দৃস্টি দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
মৎস বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক গোপাল চন্দ্র দাস বলেন, ‘জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে অফিস করছি প্রতিনিয়ত। পাঁচটি পদের মধ্যে তিনটিই ফাঁকা পড়ে আছে। খামারের অবকাঠামো প্রায়ই নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, এখানকার পানিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। খামারের পুকুরগুলো বেশি গভীর নয়। পুকুরের তলদেশে বেলে মাটি। বাহির থেকে পানি দিলেও পানি থাকে না। পুকুরে পানিস্বল্পতা একটা বড় সমস্যা। এসব সমস্যার কারণেই মাছের রেণু উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দেখা যাক কি হয়।
রাজু