ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

দুই মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ, ২০২৫ সালের মধ্যে ছাড়তে হবে যে ৫ ধরনের জমি

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ২০ জুন ২০২৫

দুই মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ, ২০২৫ সালের মধ্যে ছাড়তে হবে যে ৫ ধরনের জমি

ছবি: প্রতীকী

২০২৫ সালের মধ্যে পাঁচ ধরনের জমি ছাড়তে হবে—এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে আইন ও ভূমি মন্ত্রণালয়। অন্তর্বর্তী সরকারের এই দুই মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় আসছে বড় পরিবর্তন। আদালতে গিয়ে মামলা করেও এই পাঁচ ধরনের সম্পত্তির মালিকানা ধরে রাখা যাবে না বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবী রেজাউল ইসলাম রেজা।

একটি ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন, বিধিমালা ও নীতিমালা জারি করা হয়েছে। জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের অনিয়ম, জাল দলিল এবং ওয়ারিশদের ফাঁকি দিয়ে সম্পত্তি বিক্রির মতো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন।

যেসব জমি ছাড়তে হবে:

১. জাল বা ভুয়া সাফ কবলা দলিলের জমি:

যেসব সাফ কবলা দলিল ওয়ারিশদের সম্মতি ছাড়া তৈরি হয়েছে বা যেসব দাতার মালিকানা প্রমাণ নেই—সেইসব দলিল বাতিল ঘোষণা করা হবে। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া জমি যদি আপোষ বণ্টন না হয় এবং একজন ওয়ারিশ অন্যদের অংশ ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করেন, সেই দলিল আইনের চোখে টিকবে না।

২. হেবা (দানপত্র) দলিলের জমি:

যেসব হেবা দলিল হেবার তিনটি মূল শর্ত—হেবা ঘোষণা, গ্রহণ এবং হস্তান্তর—পুরোপুরি মানেনি, বা অবিভক্ত সম্পত্তিতে দাতা অবৈধভাবে হেবা করেছে, সেগুলো বাতিল হবে। অনেকে যৌথ মালিকানার জমি নিজের নামে এককভাবে হেবা করে দিয়েছেন, যা আইনগতভাবে টিকে না।

৩. জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া দলিল:

অনেকেই বাবার নামে, ভাই সাজিয়ে বা নানাভাবে জাল দলিল তৈরি করেছেন। এখন ভূমি ব্যবস্থাপনার ডিজিটালাইজেশনের ফলে ১১৭ বছরের দলিল স্ক্যান করে অনলাইনে তুলছে সরকার। এসব দলিল যাচাই করে জাল প্রমাণ হলে বাতিল করা হবে।

৪. খাস খতিয়ানের জমি:

সরকারি খাস খতিয়ানে থাকা জমি অনেকেই নানা উপায়ে বিএস, আরএস খতিয়ান তৈরি করে বেচে দিয়েছেন। এখন এসব সম্পত্তি সরকারের দখলে ফিরিয়ে আনা হবে। ইতোমধ্যে সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারের মালিকানা নিশ্চিত করার জন্য। প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত মামলা লড়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

৫. অর্পিত সম্পত্তি:

যেসব সম্পত্তি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে এবং অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত, সেগুলোও সরকারের নামে নামজারি করা হবে। এসিল্যান্ডদের সরাসরি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এসব জমি চিহ্নিত করে সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে সরকারের দখলে নিয়ে আসার।

কাদের জন্য প্রযোজ্য?

এই আইন প্রযোজ্য তাদের জন্য, যারা প্রকৃত মালিকানা না থাকলেও জমি দখল করে আছেন অথবা ভুয়া দলিল তৈরি করেছেন। সরকারের কাছে রয়েছে সকল নথি, কাগজপত্র ও ডিজিটাল রেকর্ড। ফলে কেউ আর পুরনো জালিয়াতি বা অসততা দিয়ে জমি দখলে রাখতে পারবেন না।

ভূমি ব্যবস্থাপনার অটোমেশন ও মন্ত্রণালয়ের কঠোর নজরদারি

আইন মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত সিদ্ধান্তে ভূমি ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, ভূমি অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে চলছে নজরদারি। যারা দুর্নীতির মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রি করেছেন, তাদের অনেকেরই চাকরি ইতোমধ্যে হারিয়েছে।

আইনজীবী রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘ভূমি ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিনির্ভরতা এখন দুর্নীতির সুযোগ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। যাদের জমির ইতিহাস সঠিক, তারাই কেবল নিজেদের সম্পত্তি ধরে রাখতে পারবেন।’

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=2tS9C_RrmUc

রাকিব

×