
যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে, এমন ইঙ্গিত মিলেছে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সদ্যসমাপ্ত ওয়াশিংটন সফরে। হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার দীর্ঘ বৈঠককে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) জানিয়েছে, এই দীর্ঘ বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, খনিজসম্পদ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জ্বালানি, ক্রিপ্টোকারেন্সি ও উদীয়মান প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি ইরান ও ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ নিয়েও তারা ‘বিস্তারিত আলোচনা’ করেছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, পাকিস্তান ‘ইরানকে খুব ভালোভাবে চেনে’। বিশ্লেষকদের মতে, এই মন্তব্যটি ইঙ্গিত দেয় যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় ঘনিষ্ঠ করতে চাওয়া ইসলামাবাদকে বড় দুটি কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে: ইরান সংকট ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা।
পাকিস্তানে প্রায় ১৫-২০ শতাংশ শিয়া জনগোষ্ঠী রয়েছে, যারা ইরানকে ধর্মীয় দিকনির্দেশনার জন্য অনুসরণ করে। ফলে ইরানের বিপক্ষে অবস্থান নিলে পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকি রয়েছে।
অপরদিকে, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ ৬২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। সামরিক দিক থেকেও পাকিস্তানের অস্ত্রভান্ডারের ৮০ শতাংশের বেশি আসে চীন থেকে। সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে চীনা ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমান কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়েই পাকিস্তানকে তাদের পাশে চায়। এমন অবস্থায় পাকিস্তানকে পাকিস্তানের চোখে দেখার আহ্বান জানান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। মুনির বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যেন পাকিস্তানকে ভারত, চীন বা আফগানিস্তানের প্রিজমে না দেখে, বরং সরাসরি পাকিস্তানকে বোঝার চেষ্টা করে।” ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত এক নৈশভোজে তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকটি ছিল “অসাধারণ এবং এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারত না।”
যদিও মুনির-ট্রাম্প বৈঠককে অনেকেই দুই দেশের সম্পর্কে নতুন উত্তরণ হিসেবে দেখছেন, তবুও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি এখনো “সম্পূর্ণ মৈত্রী” নয়, বরং একটি সম্ভাব্য সমঝোতার ইঙ্গিত মাত্র। পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করবে পাকিস্তানের কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষার সক্ষমতার ওপর।
যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক উষ্ণতার দিকে অগ্রসর হলেও, চীনের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং ইরান সংকটে ধর্মীয় ও আঞ্চলিক সংবেদনশীলতা পাকিস্তানের জন্য বড় বাধা হয়ে থাকছে।
সানজানা