ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

আলাদা ভূখণ্ড, একই পরিণতি—আর কত নীরব থাকবে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

প্রকাশিত: ১৬:৫০, ২০ জুন ২০২৫

আলাদা ভূখণ্ড, একই পরিণতি—আর কত নীরব থাকবে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো

ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমা আগ্রাসন বারবার মুসলিম বিশ্বের নেতাদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে—আর সেই প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো প্রায় সবসময়ই থেকেছে নীরব দর্শকের ভূমিকায়। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, এই নীরবতা শুধু একবার বা দু’বার নয়—প্রায় প্রতিটি ঘটনায়ই পশ্চিমা আগ্রাসনের সময় মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সম্মিলিত প্রতিরোধ অনুপস্থিত ছিল।

৯/১১-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান চালায়। যুক্তি ছিল—আল কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেনকে ধরার জন্য। এই অভিযানে একমাত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। অথচ বাকি মুসলিম বিশ্বের কেউই সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি। ওসামা বিন লাদেন নিহত হন ২০১১ সালে, কিন্তু আফগানিস্তান রক্তাক্ত হয়েছিল আরও এক দশক।

২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র’ থাকার অভিযোগ তুলে ইরাকে অভিযান চালায়। সাদ্দাম হোসেন ছিলেন ততকালীন আরব বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা। কিন্তু সেই সময়েও কোনো মুসলিম রাষ্ট্র ইরাকের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসনের প্রতিবাদে কার্যকরভাবে অংশ নেয়নি। সাদ্দাম ধরা পড়েন, বিচার হয়, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়—পশ্চিমের আদালতে।

নাটকীয়ভাবে শুরু হওয়া আরব বসন্তের সুযোগে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র গাদ্দাফির সরকার উৎখাতে ভূমিকা রাখে। গাদ্দাফি হয়রানি, বিদ্রূপ ও অবমাননার মধ্য দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। লিবিয়ার স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়ে। তবুও মুসলিম বিশ্ব ছিল নীরব।

মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে সেনাবাহিনীর প্রধান আবদেল ফাত্তাহ সিসি হঠিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো এই অভ্যুত্থানকে কার্যত স্বীকৃতি দেয়। গণহত্যা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, কারাবন্দি অবস্থায় মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয় মুরসির জীবন। এখানেও মুসলিম রাষ্ট্রগুলো একজোট হয়ে প্রতিবাদ করেনি।

২০২৪ সালের মে মাসে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। পশ্চিমা ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা তৎপরতার গুঞ্জন ছড়ালেও আন্তর্জাতিক তদন্ত হয়নি, মুসলিম বিশ্ব থেকেছে চুপচাপ। রাইসিকে ইরান ‘শহীদ’ উপাধিতে ভূষিত করেছে।

এবার ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সামরিক উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে ইরান। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ীও এখন জীবন ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে গুজব চলছে। যুক্তরাষ্ট্র এই উত্তেজনায় সামরিক হস্তক্ষেপ করবে কি না, তা নিয়েও চলেছে টালবাহানা। কিন্তু, আবারও প্রশ্ন জেগেছে—বাকি মুসলিম রাষ্ট্রগুলো কী করবে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, মুসলিম দেশগুলোর এই ‘নীরব কূটনীতি’ হয়তো নিজস্ব ভূরাজনৈতিক কৌশলের অংশ। আবার কেউ কেউ এটিকে ‘সাহসের ঘাটতি’ হিসেবেই দেখেন। তবে প্রশ্ন একটাই—যখন পশ্চিমা আগ্রাসন আবার একজন মুসলিম নেতার দিকে তাক করা হয়, তখন মুসলিম বিশ্ব শুধু নীরব দর্শক হয়েই থাকবে?

সাদ্দাম, গাদ্দাফি, মুরসি, রাইসি—এই নামগুলো কেবল ইতিহাসের পাতা নয়, বরং মুসলিম বিশ্বের সম্মিলিত নিষ্ক্রিয়তার প্রতিচ্ছবি। এখন দেখা যাক, ইতিহাস আবারও কি পুনরাবৃত্ত হবে? নাকি এবার ভিন্ন কিছু ঘটবে?

×