ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ জুন ২০২৪, ২ আষাঢ় ১৪৩১

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সমন্বয়

-

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ২৩ মে ২০২৪

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সমন্বয়

সম্পাদকীয়

ডেঙ্গু মূলত বর্ষা মৌসুমের ব্যাধি হলেও এখন এটি পরিণত হয়েছে সারা বছরের রোগ-শোক-দুর্ভোগে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বছরে তিনবার মশা জরিপ করে থাকে রাজধানীতেÑ প্রাক-বর্ষা, বর্ষা এবং বর্ষা পরবর্তী জরিপ। উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবার প্রাক-বর্ষা মৌসুমে জরিপ করে দেখেছে, রাজধানীর ১৮ শতাংশের বেশি বাড়িতে পাওয়া গেছে ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার লার্ভা।

এতে প্রতীয়মান হয় যে, ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে এবারও। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব দ্রুত বর্জ্য অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাসাবাড়ির আনাচে-কানাচে যেসব স্থানে পানি জমে থাকে প্রাকৃতিক নিয়মে, সেসব স্থান এডিস মশার প্রজনন স্থল হিসেবে অনুকূল। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।

আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলে বেড়ে যাবে মৃতের সংখ্যাও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মহামারিকালে যেমনÑ জরুরি তৎপরতা নেওয়া হয়ে থাকে, অনুরূপ প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন। স্বাস্থ্য বিভাগ ও পৌর কর্তৃপক্ষ সার্বিক পরিস্থিতির গুরুত্ব সম্যক অনুধাবন করে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করবে বলেই প্রত্যাশা। 
সরকারের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন গণমাধ্যমে বলেছেন, দেশে ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন দেখা গেলেও এ বছর কোন্টির প্রাদুর্ভাব বেশি হতে পারে, তা জানা নেই। মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনসহ বিভিন্ন স্থানে মশক নিধনে দুই সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে সমন্বয় নেই বললেই চলে। ফলে এ বছর ঢাকাসহ সারাদেশেই ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। 
ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার মানুষও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ডেঙ্গু রূপ বদলাচ্ছে বারবার। ২০২১ সালে ডেঙ্গু শুরু হয় জুলাই থেকে। সে বছর ২৮ হাজার ৪২৯ জন রোগী পাওয়া যায় এবং মারা যান ১০৫ জন। ২০২২ সালে ৬২ হাজার রোগী শনাক্ত হয় দেশে, যেখানে রেকর্ডসংখ্যক মৃত্যু হয় ২৮১ জন। ২০২৩ সালে কমপক্ষে ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এ বছর একই সঙ্গে করোনা ও ডেঙ্গু সংক্রমণের খবর আছে। বেশি মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলেছেন, দেরি করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসায় এমনটি হতে পারে। এজন্য জ্বর হলেই অবহেলা না করে দ্রুত পরীক্ষা করাতে হবে। সংকটময় পরিস্থিতিতে হাসপাতালে শয্যা সংকট দেখা দেয়। তাই ডেঙ্গু শুরু হলে আগেই প্রস্তুতি নিতে হবে কোনো রোগী যেন অবহেলার শিকার না হন।

ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া রোধে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসগুলোর ভবন, খোলা জায়গা, মাঠ, ফুলের টব, পানির পাম্প বা যেসব জায়গায় পানি জমে সেসব স্থানে যাতে পানি জমতে না পারে তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের আরও সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই।

দুই সিটি করপোরেশন যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে সেগুলোর সমন্বয় ও বাস্তবায়ন যথাযথ হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন। স্কাউট, বিএনসিসির সদস্য এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে বেশি করে উদ্বুদ্ধ করাও আবশ্যক।

×