
.
মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের স্মৃতিবিজড়িত সবকিছুই মূল্যবান। তাদের বীরত্বগাথার বহুল প্রকাশই কাম্য। বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যবস্থা নিয়েছে তাদের যথোচিত সম্মান জানানোর। বীর মুক্তিযোদ্ধারা এখন ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাচ্ছেন। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ত্রিশ হাজার বীর নিবাস নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা পাচ্ছেন বিনামূল্যে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব স্থানে যুদ্ধ হয়েছিল, সেসব স্থান সরকার সংরক্ষণ করছে। সংরক্ষণ করছে বধ্যভূমিগুলোও। মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিও নির্দিষ্ট ডিজাইনে করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে করে ৫০ বছর পরেও একটি কবর দেখে বোঝা যায়, এখানে শায়িত রয়েছেন দেশের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। জাতি প্রত্যাশা করে, আগামী প্রজন্ম দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্পর্কে আরও জানবে এবং তাদের প্রকৃত সম্মান করবে। কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ একটি দিবস থাকারও যৌক্তিকতা রয়েছে।
মাতৃভূমির প্রতি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেশপ্রেম, দায়বোধ, সাহসিকতা ও অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ। ফলে, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিও রাষ্ট্রের দায় আছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সম্মানজনক ভাতা নির্ধারণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ সরকারের প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ এটি। সেখানে যুক্ত হয়েছে বীর নিবাস আবাসন প্রকল্প।
এর মাধ্যমে সারাদেশে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একতলাবিশিষ্ট আবাসন করে দেওয়া হয়েছে। পাকা বাড়ি পেয়ে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, শেষ বয়সে এসে তারা পাকা বাড়িতে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন, যা কখনো ভাবেননি। পাশাপাশি পাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। পাকা বাড়ি আর ভাতার টাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দিন কাটছে সাচ্ছন্দ্যে। পাকা বাড়িগুলো একতলা। দেওয়াল ইট ও সিমেন্টের। ছাদ পাকা। প্রতিটি বীর নিবাসের আয়তন ৭৩২ বর্গফুট। একেকটিতে দুটি শয়ন কক্ষ, একটি বসার কক্ষ (ড্রইংরুম), একটি খাওয়ার কক্ষ (ডাইনিং), একটি রান্নাঘর, একটি বারান্দা ও দুটি শৌচাগার রয়েছে। অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও প্রয়াত বীরযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বীর নিবাস নামের প্রকল্পের আওতায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৩০ হাজার পাকা বাড়ি নির্মাণ করছে। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় হচ্ছে বীর নিবাস। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভায় গত ৮ নভেম্বর উল্লেখ করা হয়, এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৫৫৭টি বীর নিবাস নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। আরও ১০ হাজার ৭২৯টির কাজ চলমান।
মুক্তিযোদ্ধা ভাতায় এখন বহু পরিবার চলে। বহু বয়স্ক মুক্তিযোদ্ধা কায়িক পরিশ্রম করেছেন। ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালিয়েছেন, শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধারা বীর নিবাস পেয়ে গর্বিত হয়েছেন, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, এমন পাকা ঘরে ঘুমাব স্বপ্নেও ভাবি নাই। জীবনের শেষ বয়সে মেঝে টাইলস করা পাকা ঘর পাওয়া কল্পনারও অতীত। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এখনও দেশে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এসব শব্দ অনেকের জন্যই বিব্রতকর। তারা এদেশের সন্তান হলেও মনেপ্রাণে পাকিস্তানপন্থি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষই এদেশে সিংহভাগ– সেটি নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। ফলে, দেশের মানুষ যে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করে এবং কোনো উপলক্ষ পেলে তা আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে, সেটিই স্বাভাবিক।