ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

বর্ষার তুলনাহীন সৌন্দর্য

আহমাদ কাউসার

প্রকাশিত: ২০:৫১, ৫ জুলাই ২০২৩

বর্ষার তুলনাহীন সৌন্দর্য

বাংলাদেশ ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ। নানা ঋতুতে এর প্রকৃতি নানান সাজে সজ্জিত হয়

বাংলাদেশ ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ। নানা ঋতুতে এর প্রকৃতি নানান সাজে সজ্জিত হয়। এদেশের প্রতিটি ঋতুই নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। ঠিক তেমনি বর্ষায় বাংলাদেশ যেন এক অপরূপ চিত্রে ফুটে ওঠে। ঋতুচক্রের পালায় এক সময় বর্ষা আসে বাংলাদেশে। আসে তার স্নিগ্ধ সজল রূপ নিয়ে। বসন্তকে আমরা ঋতুরাজ বলি, কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বর্ষাই বাংলার প্রিয় ঋতু। তা ছাড়া এদেশে বর্ষার রূপ যতটা সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়ে অন্য কোনো ঋতুর ক্ষেত্রে তা ঘটে না। বর্ষার অবিরল অবিচ্ছিন্ন ধারায় নদী-নালা, খাল-বিল, মাঠ-ঘাট সব পানিতে একাকার হয়ে যায়। এ সময় গ্রামগুলো তরুলতা সমাচ্ছন্ন দ্বীপের আকার ধারণ করে। বনে বনে ফুটে জুঁই, কেয়া, কদম ইত্যাদি সুরভিত ফুল। রূপ-রস, বর্ণ-গন্ধ আর অপূর্ব সংগীতে ভরে ওঠে বাংলার আকাশ বাতাস।
যতদূর দৃষ্টি যায় আকাশে পাংশুটে মেঘের জাল বোনা, প্রকৃতি নিথর নিঃস্তদ্ধ। বর্ষায় গ্রাম-বাংলার অপরূপ শ্যামশ্রী সত্যিই অনির্বচনীয়। তার ধূলি-মলিন বিবর্ণতার অবসান হয়েছে। সূক্ষতার দীনতা গেছে মুছে। দগ্ধ তৃণভূমিতে জেগেছে প্রাণের হিল্লোল। সর্বত্রই শ্যামল সবুজের নয়ন নন্দন সমারোহ। বর্ষাকালে পল্লীর মাঠ-ঘাটে জল  থৈথৈ করে। এ দৃশ্য যেন নিপুণ শিল্পীর হাতে আঁকা কোনো ছবি। দিগন্ত বিস্তৃত পানিতে একাকার মাঠের প্রান্তদেশে বাড়িগুলো তালতমাল, নারিকেল, আম-জাম গাছের কুঞ্জ নিয়ে পানির ওপর ভাসতে থাকে। বর্ষার বারিধারা নদীতে যে প্লাবন সৃষ্টি করে তাতে সমগ্র পথ-ঘাট, বন-প্রান্তর ভরে যায়। বর্ষাপ্লাবিত গ্রামবাংলার এ সৌন্দর্যের কোনো তুলনা নেই। ভরা নদ-নদীর বুকের ওপর দিয়ে মৃদুমন্দ বাতাসের দোলায় যে ঢেউ খেলে যায়, তা এক অসাধারণ সৌন্দর্যের আধার। বর্ষায় বাংলাদেশ সাজে এক অপরূপ সাজে।
নদীর বুকে নৌকার ছোটাছুটি, ডিঙি-নৌকায় জেলেদের মাছ ধরা, ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে পদ্মার ইলিশ শিকার, কলার ভেলায় চড়ে ছোট ছেলে-মেয়েদের শাপলা ফুল আহরণ সবই বর্ষার দান। কদম, কেয়া, জুঁই, কামিনী, গন্ধরাজ, হাসনাহেনার বিচিত্র বর্ণ ও গন্ধের ফুলের সমাহার  হৃদয়ের দ্বার যেন খুলে দেয়। তাই  চারদিকেই বর্ষার মুক্তা-মুরগ-মুরগির সুর-মূর্ছনা। কখনো অবিরাম ধারাবর্ষণ, কখনো ক্ষণবর্ষণ। কখনো আলো আঁধার। মেঘ-রৌদ্রের সকৌতুক খেলা।
গ্রামের মতো শহরে বর্ষার সৌন্দর্য খুব একটা ফুটে ওঠে না। তবু ইট-পাথরে ঘেরা শহুরে লোকজনও বর্ষার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঝুম বৃষ্টিতে কেউ কেউ গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায় বর্ষার পরশ পেতে। কেউ ছাদে উঠে বৃষ্টির ছোঁয়া নিয়ে জুড়িয়ে নেয় দেহ-মন। শহরে থাকা দিনমজুরদের কষ্টের সীমা থাকে না বৃষ্টিতে। বিশেষ করে নগরে রাস্তায় বের হওয়া অনেক সময়ে চরম দুর্ভোগই নিয়ে আসে। শহরের জলাবদ্ধতার কারণে মানুষের স্বাভাবিক  চলাচলে বিঘœ ঘটে। দেখা দেয় ডেঙ্গু, কলেরা। বেড়ে যায় মশার প্রকোপ। গ্রামাঞ্চলেও অনেক সময়ে কাজে ব্যাঘাত ঘটে। তবে বর্ষা নিয়ে যাই চলুক আর ঘটুক প্রকৃতির গভীর আহ্বান ও নিষ্ঠুর বাস্তবতার মধ্যে সমন্বয় করেই চলছে বাঙালি জীবনধারা।

ব্রাহ্মণপাড়া, কুমিল্লা থেকে

×