ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

প্রকাশিত: ২০:০১, ২৩ জানুয়ারি ২০২১

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল, এমনকি ক্যাপিটল হিলের কলঙ্কিত দাঙ্গার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি ছিল তপ্ত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভালয় ভালয় ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে। বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন জো বাইডেন। এর মধ্য দিয়ে অবসান হয়েছে ট্রাম্প যুগের। বাইডেন হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট। নজিরবিহীন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘আমার সমস্ত সত্তাজুড়ে একটাই আকুতি, আমরা ঐক্যবদ্ধ হব। আমি পুরো যুক্তরাষ্ট্রের মানুষকে আমার সঙ্গে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাই। বিশ্বকে আমরা আমদের শক্তি দিয়ে নয়, নেতৃত্ব প্রদান করব উদাহরণ সৃষ্টি করে।’ কথাগুলো বিশ্ববাসীর ভাল লাগারই কথা। শপথ নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্পের কিছু উল্লেখযোগ্য নীতি পাল্টে দেয়ার কাজ শুরু করেছেন নতুন নেতা। শপথ নেয়ার পর হোয়াইট হাউসে যাওয়ার সময় তিনি টুইটে বলেন, ‘আমাদের সামনে যে সঙ্কট রয়েছে সেটি সামাল দিতে অপচয় করার মতো কোন সময় নেই।’ যথার্থ নেতার মতোই বক্তব্য। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার আগের দিন সন্ধ্যায় বাইডেন অংশ নিলেন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে মারা যাওয়া চার লাখ মার্কিন নাগরিকের স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে। এই দায়িত্ববোধ প্রশংসনীয়। করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মৃত্যুর ১১ মাসের মাথায় মঙ্গলবার সেখানে মৃতের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে যায়। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয়ভাবে এই স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মহামারীর মধ্যে নজিরবিহীন জনস্বাস্থ্য সঙ্কটে জর্জরিত, অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত এবং রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত একটি রাষ্ট্র বর্তমানের আমেরিকা, এতে কোন সংশয় নেই। বাইডেন ও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের নেতৃত্বে লিঙ্কন মেমোরিয়ালের পাদদেশে ওই স্মরণ অনুষ্ঠানই ছিল করোনায় প্রাণ হারানো বিপুল এই জনগোষ্ঠীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের প্রথম কোন অনুষ্ঠান। রাজধানীর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে একইভাবে স্মরণ করা হয় মহামারীতে হারিয়ে যাওয়া সেইসব মার্কিনীর। স্মরণ অনুষ্ঠানের সূচনা করে বাইডেন বলেন, এই ক্ষত শুকাতে হলে আমাদের স্মরণ করতে হবে। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত নীতিসমূহের পরিবর্তন ঘটবে নতুন দিনে, এটিই বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা। গণতন্ত্র ও উদারনীতি জন্য আমেরিকার যে সুনাম তা নিশ্চয়ই বৃদ্ধি পাবে। সুসম্পর্কের প্রত্যাশা করছে বহু দেশ। মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের যে অবনতি ঘটেছিল তা থেকে বেরিয়ে আসবে আগামী দিনের যুক্তরাষ্ট্র। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটো, যুক্তরাজ্য ও ইরান আমেরিকার নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। উল্লেখ্য, বাইডেনের বিজয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে ৮ নবেম্বর পাঠানো বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আপনার বিজয়ে আমি এবং বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ অত্যন্ত আনন্দিত। আমি বিশ্বাস করি, গত চার দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র এবং দেশটির জনগণের কল্যাণে আপনাদের অসাধারণ নেতৃত্ব যে নিষ্ঠা ও প্রতিশ্রুতির স্বাক্ষর রেখেছে, আপনার দুর্দান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে জনগণের সেই বিশ্বাস এবং আস্থারই প্রতিফলন ঘটেছে। আমি এও বিশ্বাস করি যে, আপনার বিচক্ষণ নেতৃত্ব বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায়, সমৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং জলবায়ু পরিববর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন জয়ী হওয়ায় বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ক বিগত বছরগুলোর চাইতে আরও ইতিবাচক হবে বলে আশা করার সঙ্গত কারণ রয়েছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, মানবাধিকার এমন আরও নানা ইস্যুতে বাইডেন সরকারের অবস্থান বেশ বলিষ্ঠ হবে তার ইঙ্গিত আগেই মিলেছে। তাই বাংলাদেশ এ থেকে উপকৃত হবে, এই আশা করাই যায়।
×