
ছবি: সংগৃহীত।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল বলা যায় কি-না’, সেই প্রশ্ন তুলেছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না- এমন আশঙ্কাকে তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি, ‘তবে দেশ ও রাজনীতির নিরাপত্তার স্বার্থে একটি সময়ের জন্য আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত’।
চারদিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে লন্ডনের প্রভাবশালী নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউজ আয়োজিত এক সংলাপে অংশ নেন ড. ইউনূস।
সংলাপটি হয় রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স মিলনায়তনে।
প্রধান উপদেষ্টার এই প্রশ্নটি আসে তখন, যখন অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসকে বলা হয়, সমালোচকদের মতে— কেউ চাইলে জুলাই চার্টার মেনে নাও চলতে পারে। এ সময় আওয়ামী লীগকে উদাহরণ হিসেবে টানা হয়। তাকে বলা হয়, আপনি জনগণকে তাদের মত জানানোর সুযোগ দিচ্ছেন না। এটাকে গণতন্ত্র বলা যায় না। এটা ঐকমত্য নয়, বরং আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতায় এটা এক ধরনের কর্তৃত্ববাদী আচরণ!
এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই নিয়েও বিতর্ক আছে। বিতর্কটা হলো— আওয়ামী লীগ আসলে এখনো একটি রাজনৈতিক দল কিনা? যারা তরুণদের রাস্তায় হত্যা করে, মানুষ গুম করে, রাষ্ট্রের টাকা চুরি করে; তাদের কি এখনো রাজনৈতিক দল বলা যায়? আমি কোনো রায় দিচ্ছি না, কিন্তু এটাকে কেন্দ্র করে একটা বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর দেশের মানুষ উৎসব করেছে, যেন এক ধরনের মুক্তি পেয়েছে। আমি ভেবেছিলাম, তার বিদায়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ অধ্যায়ের অবসান হলো। কিন্তু দেখা গেল, পালিয়ে যাওয়ার পরও তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের বাইরে থেকে উস্কানি দিচ্ছে, রাজপথে সংঘাতে নামছে। ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও তাদের কেউ এখনো দুঃখ প্রকাশ করেনি। কেউ বলেনি, ‘আমি এর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, খারাপ লেগেছে। কারও আদেশে কেউ মারা গেছে। বা আমি এর জন্য দায়ী নই’। বরং তারা সব কিছু স্বীকার না করে বরং হুমকি দিচ্ছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আওয়ামী লীগের মিছিল, অভ্যুত্থানের নেতাদের হুমকি-ধমকির কারণে এখনো আমরা নিরাপদ অনুভব করছি না। এজন্যই জাতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে— দেশ ও রাজনীতির নিরাপত্তার স্বার্থে আপাতত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। তবে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়নি, কেবল বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে।
তবে কেন বিচার এখনকার সরকারের অধীনে হচ্ছে, পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতে কেন তা তুলে দেওয়া হচ্ছে না? এ প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এই সিদ্ধান্ত আমি নিইনি। যারা আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব দিয়েছে, তারাই আমাদের এই দায়িত্ব দিয়েছে। তারা আমাদের তিনটি দায়িত্ব দিয়েছে, আমরা সেটাই পালন করছি।
সংলাপে সংবাদমাধ্যমের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ড. ইউনূস বলেন, এই অভিযোগ সঠিক নয়। একদম সত্যি নয়। বরং এখনকার মিডিয়া স্বাধীনতার এমন সুযোগ আগে কখনোই পায়নি।
ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্নে তিনি জানান, আমরা সব দেশের সরকারের কাছ থেকেই সমর্থন পেয়েছি।
নুসরাত