ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেরপুরে পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা

হাতি-মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করলেই দ্বন্দ্বের সমাধান হবে

রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ২৬ মে ২০২৫

হাতি-মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করলেই দ্বন্দ্বের সমাধান হবে

ছবি : জনকণ্ঠ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “বনে হাতিকেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে, মানুষকেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে। হাতি ও মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করলেই দ্বন্দ্বের সমাধান হবে।” তিনি আরও বলেন, হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে সরকার কাজ করছে এবং এজন্য ধৈর্য ধরতে হবে।

সোমবার (২৬ মে) সকালে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার প্রস্তাবিত দাওধারা পর্যটন কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, “মানুষ হাতির আবাসস্থল দখল করে নিচ্ছে, ফলে হাতির খাবারের অভাব দেখা দিচ্ছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র দুই সপ্তাহে ১২টি হাতি মারা গেছে। এটা কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়। এ সমস্যাটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত হয়ে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। হাতি মারা যাক, এটি কাম্য নয়; আবার মানুষ মারা যাক সেটাও কাম্য নয়।”

তিনি আরও বলেন, “বন ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য ইউক্যালিপটাসসহ বিদেশি গাছ না লাগিয়ে আমাদের হাতির খাবার উপযোগী দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগাতে হবে। সরকার জনগণের প্রতিপক্ষ নয়, বরং সহায়ক। প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হলে আমরাও নিরাপদ থাকব না। বাণিজ্যিক গাছের পরিবর্তে প্রাকৃতিক গাছ রোপণ করতে হবে।”

বন দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বনে যারা অবৈধভাবে বসবাস করছেন, তাদের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। তারা ওখান থেকে ভাড়া আদায় করেন। তাদের উচ্ছেদ করতে গেলেই বলা হয়, সরকার গরিবদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অথচ আশ্রয়নের জন্য সরকারের খাস জমি রয়েছে। বনে কোনো আশ্রয়ন প্রকল্প করা যাবে না। বন দখলের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করা হবে।”

বালু-পাথর উত্তোলন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “অনিয়ন্ত্রিত বালু ও পাথর উত্তোলন শুধু শেরপুরেই নয়, সারা দেশের সমস্যা। যেখানে অনিয়ন্ত্রিত উত্তোলন হবে, সেখানেই তা বন্ধ করতে হবে। এজন্য ৬৪ জেলার ডিসি, এসপি এবং ৮ বিভাগীয় কমিশনারকে ১০ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শুধু শ্রমিক ধরলেই হবে না, প্রকৃতভাবে যেসব ব্যক্তি এই উত্তোলনে জড়িত তাদেরও শনাক্ত করতে হবে।”

পরবর্তীতে উপদেষ্টা নালিতাবাড়ীর মধুটিলা রেঞ্জের ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রোপণকৃত দীর্ঘমেয়াদী বাগান পরিদর্শন করেন এবং মধুটিলা ইকোপার্কে হাতি-মানুষ দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণ ও মতবিনিময় সভায় যোগ দেন।

এ সময় হাতির আক্রমণে নিহত দুই পরিবারের প্রত্যেককে ৩ লাখ করে মোট ৬ লাখ টাকার চেক এবং ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ পরিবারকে মোট ৩ লাখ ২৭ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান করা হয়। এছাড়া এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যদের মাঝে বাইনোকুলার, টর্চলাইট, হ্যান্ডমাইক, হুইসেলসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়। 

বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান। আরও উপস্থিত ছিলেন ৩৯ বিজিবি ময়মনসিংহের অধিনায়ক লে. কর্নেল সানবীর হাসান মজুমদার, শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান, কেন্দ্রীয় বন অঞ্চলের বন সংরক্ষক এ এস এম জহির উদ্দিন আকন, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্লাহ পাটোয়ারী, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মো. নুরুল কবীর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আব্দুল করিম এবং নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার ববি প্রমুখ।

এদিকে, উপদেষ্টা দাওধারা পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে স্থানীয়রা তার গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ করেন। পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে থাকা স্থানীয়রা কিছু সময় উপদেষ্টার গাড়ি বহর আটকে রাখেন। এ সময় গাড়ি বহরের সঙ্গে থাকা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালান স্থানীয় ভূমিদস্যু ও বালুদস্যুরা। এতে অন্তত ৬ জন সাংবাদিক আহত হন। শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কাকন রেজা ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান বাদলসহ সচেতন মহল এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, নালিতাবাড়ীর দাওধারা এলাকায় বনের ভেতরে ১নং খতিয়ানের অধীন ২২৩ একর খাস জমিতে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। তবে বন্য হাতি সংরক্ষণ, সামাজিক বনায়ন ও বনাঞ্চল রক্ষার সুপারিশে স্থানীয় বন বিভাগ এই প্রকল্পের বিরোধিতা করেছে।  

সানজানা

আরো পড়ুন  

×