ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২০ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

‘মাথাচাড়া দিচ্ছে বিগত চোরতন্ত্র, সরকার অন্যান্য সংস্কারে যতোটা আন্তরিক, অর্থনীতি নিয়ে ততোটা নয়’

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ১৯ মে ২০২৫; আপডেট: ২২:৩৭, ১৯ মে ২০২৫

‘মাথাচাড়া দিচ্ছে বিগত চোরতন্ত্র, সরকার অন্যান্য সংস্কারে যতোটা আন্তরিক, অর্থনীতি নিয়ে ততোটা নয়’

ছবিঃ সংগৃহীত

অর্থনীতি ও বাজেট প্রণয়নে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, সরকার অন্যান্য সংস্কার ইস্যুতে যতটা আগ্রহী, অর্থনৈতিক সংস্কারে ততটা নয়। ফলে চলতি বাজেট প্রণয়নে আগের সংকটগুলোর কোনো সমাধান আসেনি, বরং পূর্ববর্তী ‘চোরতন্ত্রের’ আমলারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

সোমবার (১৯ মে) সকালে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব মন্তব্য করেন। সেমিনারে অর্থনীতি ব্যবস্থাপনা, ব্যাংক খাত, এনবিআর এবং সরকারি পরিসংখ্যান ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়েও সমালোচনা করেন অন্যান্য গবেষকরা।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, “দেশের অর্থনীতি এখনো ঘুরে দাঁড়ায়নি। বরং এক নতুন শক্তি হিসেবে পুরনো আমলারা পুনরায় সক্রিয় হয়েছে। রাজনীতিবিদরা পিছু হটেছে, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী দুর্বল, আর আমলারা এখন শক্ত অবস্থানে।”

তিনি আরও জানান, সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভাঙার পরিকল্পনা করলেও এখনো কোনো কার্যকর সংস্কার দেখা যাচ্ছে না। বাজেট প্রণয়নে সরকারের নানা কর্মকাণ্ড আগের ধারা অনুসরণ করছে, নতুন করে কোনো দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট নয়।

সেমিনারে জানানো হয়, বর্তমানে দেশি-বিদেশি ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়া, মূল্যস্ফীতি রোধে টাকার প্রবাহ সীমিত রাখা এবং কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় না হওয়ার কারণে অর্থনৈতিক চাপে আছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে সরকার বেতন-ভাতা, ভর্তুকি না উন্নয়ন— কোন খাতে অগ্রাধিকার দেবে, তা নিয়েও দোটানায় রয়েছে।

ডাটা ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার দিকটি তুলে ধরে বক্তারা জানান, এলএফএস (শ্রম শক্তি জরিপ) এর হালনাগাদ না থাকায় ২১ লাখ কর্মসংস্থান হ্রাসের পরিসংখ্যান থাকলেও কোন খাতে এই চাকরি হারিয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। এমনকি অর্থনীতি নিয়ে সর্বশেষ ‘শ্বেতপত্র’ ও জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের ডেটাও সাত মাস আগের।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “দেশ কোন পথে যাচ্ছে, কেউ জানে না। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, যা অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে।”

এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, “বর্তমান বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা, ভূ-রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং নিরাপত্তা ইস্যুগুলোও বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলছে। আমরা কি ফ্রন্টলাইন রাষ্ট্র হতে চাই, নাকি ভিন্ন কিছু— এ নিয়েও কোনো পরিষ্কার কনসেনসাস নেই।”

সবশেষে বলা হয়, এই অনিশ্চয়তার মাঝেই আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন হবে আগামী ২ জুন।
 

মারিয়া

×