ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সংকটের সমাধান করবে না:সাইফুল হক

স্টাফ রিপোর্টার॥

প্রকাশিত: ১৭:১২, ১০ মে ২০২৫; আপডেট: ১৭:১২, ১০ মে ২০২৫

নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সংকটের সমাধান করবে না:সাইফুল হক

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সংকটের সমাধান করবে না। এতে একদিকে আওয়ামী লীগের শত সহস্র অপরাধ ঢাকা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে, আর অন্যদিকে উল্টো আওয়ামী লীগের প্রতি একধরনের সহানুভূতিও তৈরি হতে পারে। শুক্রবার সকালে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেছেন।

সাইফুল হক বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে আইনগত বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা দরকার। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ চলে যাওয়ার দায়দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারকেই বহন করতে হবে। 
প্রেস ব্রিফিংয়ে পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, দেশে জবরদস্তি করে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন চালাতে গিয়ে অনেক আগেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ভিতর দিয়েও আরেকবার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আইনি সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি যতটা না আইনগত, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক বিষয়। সে কারণে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের মধ্যে মতৈক্য প্রয়োজন। আর গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আওয়ামী লীগের মত দলকে নিষিদ্ধ করা সংকটের সমাধান নয়; বরং তাকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংগঠনিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে পুরোপুরি জনবিচ্ছিন্ন ও অকার্যকর করে তোলাটাই বেশি জরুরি। আর মতৈক্যের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হলে সেটা আইনগত বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা সমীচীন।তা না হলে এটা নিয়ে দেশে বা আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকবে।

তিনি বলেন, কোন নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে গেলে একদিকে আওয়ামী লীগের শত সহস্র অপরাধ ঢাকা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে, আর অন্যদিকে উল্টো আওয়ামী লীগের প্রতি একধরনের সহানুভূতিও তৈরি হতে পারে। 

তিনি বলেন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকার দ্বৈত ভূমিকা দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। কারা সরকার চালাচ্ছেন তা নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। একদিকে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গকে দেশত্যাগ করতে দেওয়া হচ্ছে, আবার অন্যদিকে নীতিনির্ধারকেরা কেউই তার দায়িত্ব নিচ্ছেন না। সরকার গঠনের নয় মাস পরেও যদি এই ধারা চলতে থাকে তাহলে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা ও কার্যকারিতা বলে কিছু থাকে না। 

যত দিন যাচ্ছে সরকারের মধ্যেই নানা সরকার, নানা কেন্দ্র বেরিয়ে আসছে। দুই দিন আগে এক উপদেষ্টার বক্তব্যেও তার স্বীকৃতি মিলেছে। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতির দায়দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারকেই বহন করতে হবে। তিনি অনতিবিলম্বে এসব ব্যাপারে দেশবাসীর কাছে সরকারের অবস্থান তুলে ধরার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, সমগ্র এই পরিস্থিতি এক ধরনের নৈরাজ্যকে উসকে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি চলতে দিলে গণঅভ্যুত্থানের অবশিষ্ট অর্জন বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, মানুষ যদি এটা বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, এই সরকারের আর কোনো কার্যকারিতা নেই তাহলে সামনে বিপদ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। সেক্ষেত্রে সংস্কার, নির্বাচন সবই অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি আলাপ-আলোচনার পথে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে উভয় দেশের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোনোভাবেই এই যুদ্ধ উন্মাদনার অংশ হবে না।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাইফুল হক ক্ষোভের সাথে উল্লেখ করেন, ভারত গত ক’দিন ধরে যেভাবে ভারতীয় নাগরিকদেরকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশ-ইন করাচ্ছে, তা একটি সন্ত্রাসী ও আগ্রাসী তৎপরতার সামিল। তিনি ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে এর জোরালো প্রতিবাদ করা এবং এই তৎপরতা বন্ধ করানোর উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। 

সেগুনবাগিচায় সংহতি মিলনায়তনে এই প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাশিদা বেগম, সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ ফিরোজ আলী, কেন্দ্রীয় সংগঠক বাবর চৌধুরী, জামাল সিকদার, আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

আফরোজা

×