
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালার ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা নারীদের ন্যায্য অধিকার চাই, সমান অধিকার নয়।সমান অধিকার দিলে নারীরা টিকতে পারবে না। নারীর কাঁধে বন্দুক রেখে ইসলামকে আক্রমণ করার এই দুরভিসন্ধি বন্ধ করুন। যদি আল্লাহর কোরআনের এই সকল বিধানের মর্যাদাগুলোকে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করতে হয়, আমরা যুদ্ধই করব, যুদ্ধই করব, লড়াই করে কোরআনের মর্যাদা রক্ষা করব ইনশাল্লাহ।”
গতকাল বুধবার(৩০ এপ্রিল,২০২৫) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলামফোবিয়া: করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এই কথা বলেন তিনি।
মামুনুল হক বলেন, “ধর্মকে তথা ইসলামকে তারা নারীর প্রতি বৈষম্যের মূল কারণ কেন বলেছে? আরেকজন প্রয়াত লেখিকার একটা বক্তব্য তারা কোট করেছে। সেই বক্তব্যের এক জায়গায় আছে, ‘আমাদেরকে অর্থাৎ নারীদেরকে অন্ধকারে রাখিবার জন্য পুরুষগণ এই ধর্মগ্রন্থগুলিকে ঈশ্বরের আদেশপত্র বলিয়া প্রচার করিয়েছে। এই ধর্মগ্রন্থগুলি পুরুষ রচিত বিধি ব্যবস্থা ভিন্ন আর কিছুই নয়।’”
“অর্থাৎ তারা বিশ্বাস করে যে এই ধর্মগ্রন্থগুলো আল্লাহর কিতাব না। কোরআন আল্লাহর কিতাব না। এটা পুরুষরা রচনা করে নারীদেরকে দমন করার জন্য এই কিতাব রচনা করেছে। এই হল তাদের এই পূর্ণ প্রস্তাবনার মূল বুনিয়াদ।”
তিনি আরও বলেন, “কাজেই এই ধরনের একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করার পরে বিরুদ্ধে করা প্রতিক্রিয়া কেন ব্যক্ত করলাম? অনেককে দেখি এজন্য মায়া কান্না কাঁদতে। যে তারা যথেষ্টই জানে এবং দীর্ঘ একটাই আলোচনা নারী সংস্কার নারী নীতি নিয়ে দশকের পর দশক ধরে কথা চলে আসছে। এবং সেই কথার ধারাবাহিকতায় অনেক আলোচনা হয়েছে। এখন তারা পশ্চিমা বিশ্বের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য এটাকে মোক্ষম সময় মনে করে তারা এই সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “এবং সংস্কার প্রস্তাবনা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এটাকে লুফে নিয়ে তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ঘোষণা করা হয়েছে যে তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকতে থাকতে যথাদ্রুত সম্ভব এই সংস্কার প্রস্তাবনা তারা বাস্তবায়ন করবেন।”
“অন্য ১০টি কমিশনের প্রস্তাবনার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়কে এতটা তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বা ঘোষণা দিতে আমরা দেখিনি। যতটা এই বিষয়ে দেখেছি। তার অর্থ হল এটা গোটা একটা প্রি-প্লান। একটা পরিকল্পনা এটা। এবং এই প্লানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জড়িত।”
তিনি আরো বলেন, “চোরে না শুনে ধর্মের কথা। এদেরকে এই ধরনের টেবিল টকের মাধ্যমে এই ভয়াবহ কার্যকলাপ থেকে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথ থেকে এদেরকে রুদ্ধ করা যাবে না। এজন্য আমাদের পরিষ্কার, কথা আল্লাহর কোরআনের বিরুদ্ধে এমন কটাক্ষপূর্ণ এমন অবমাননাপূর্ণ কোন প্রস্তাবনা ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভারতের লেসপেন্সার কোনদিন করতে পারে নাই। বর্তমান বাংলাদেশের পাই আগস্টের বিপ্লবের রক্তের উপর বসে এই প্রস্তাবনার এক চুল পরিমাণ যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, আমাদের লাশের উপর দিয়ে করতে হবে।”
মামুনুল হক বলেন, “নারীর কাঁধে বন্দুক রেখে ইসলামকে আক্রমণ করার এই দ্রবিসন্ধি বন্ধ করুন। নারীদের ব্যাপারে আমাদের পরিষ্কার কথা, আমরা নারীদের ন্যায্য অধিকার চাই। সমান অধিকার নয়। সমান অধিকার দিলে নারীরা টিকতে পারবে না। নারী সমান অধিকার দিলে নারীরা পুরুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সমাজে তাদের প্রকৃত অধিকার বাস্তবায়ন করতে পারবে না। এইজন্যই তো সংরক্ষিত আসন দিয়ে তাদেরকে আনতে হয়। প্রত্যেকটা জায়গায় তাদের জন্য সংরক্ষিত আসন দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হয়। কারণ সমান অধিকার দিয়ে নারীরা পুরুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অধিকাংশ জায়গায় পারবে না।”
“এইজন্য তাদেরকে ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ইসলাম সব জায়গায় ন্যায্য অধিকারের কথা বলেছে এবং অধিকাংশ জায়গায় নারীকে অগ্রাধিকার প্রদান করেছে।”
তিনি পুনরায় বলেন, “বর্তমান সরকারকে। দেখেন আমরা ১৬ বছর যুদ্ধ করেছি। আমরা ক্লান্ত। ঠিক। কিছুদিন আমাদেরকে একটু বিশ্রাম নিতে দেন। একটু ভালো ভালো কাজ করেন। যদি যুদ্ধ করার অত সাহস অতই যদি আপনাদের শখ জাগে মনে রাখবেন, আমি পরিষ্কার বলি, যদি আল্লাহর কোরআনের এই সকল বিধানের মর্যাদাগুলোকে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করতে হয়, আমরা যুদ্ধই করব, যুদ্ধই করব। লড়াই করে কোরআনের মর্যাদা রক্ষা করব ইনশাআল্লাহ।”
সূত্র:https://tinyurl.com/4u2wupez
আফরোজা