ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক জোরদারে চীনের প্রতিশ্রুতি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:১৫, ২০ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৯:১৭, ২০ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক জোরদারে চীনের প্রতিশ্রুতি

বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ীরূপে উন্নীত করার জন্য গভীর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে চীন বলেছে, আগামীতে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, জনগণ থেকে জনগণের সম্পর্ক এবং ভাগাভাগি সমৃদ্ধির উপর নির্মিত কৌশলগত সহযোগিতার একটি নতুন যুগের সৃষ্টি হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে “চীন-বাংলাদেশ জনগণ থেকে জনগণের বিনিময় বছর: ইউনান শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রচার” অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জোর দিয়ে বলেন, যে বিগত ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পৌছছে।

চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইউবো বলেন, বর্তমানে চীন এবং বাংলাদেশ নিজেদের সম্পর্ককে একটি বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বে উন্নীত করেছে। উভয় দেশ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) নির্মাণ এবং বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমারঅর্থনৈতিক করিডোরকে এগিয়ে নিতে একসাথে কাজের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফর এবং রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সাথে তাঁর সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চলমান শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রচার অনুষ্ঠান দুই নেতার মধ্যে অর্জিত গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য বাস্তবায়নের দিকে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ যা একই সাথে চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বকে আরও শক্তিশালী করবে। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক জোরদার হওয়ার সাথে সাথে, বাণিজ্য, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি প্রযুক্তি এবং পর্যটনের মতো ক্ষেত্রে ইউনান এবং বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও গভীর হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, গত ৫০ বছর ধরে চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব অসাধারণ উন্নয়ন এবং মাইলফলক অর্জন করেছে। যা এখন এটি একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে।

নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সাথে আলোচনা শক্তিশালী পারস্পরিক সমর্থন এবং গভীরতর অংশীদারিত্বের ইঙ্গিত দেয়।

“চীন-বাংলাদেশ ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব এখন একটি নতুন এবং উচ্চ স্তরে উন্নীত হয়েছে বলেও যোগ করেন রাষ্ট্রদূত। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি এবং জনগণ থেকে জনগণের আদান-প্রদান সুসংহত করে আমরা এই সফরের ফলাফল অর্জনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

রাষ্ট্রদূত ইয়াও উল্লেখ করেছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে সহযোগিতা দ্বি--পাক্ষিক অগ্রাধিকারের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। তিনি স্থানীয় পর্যায়ের সহযোগিতার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। বিশেষ করে ইউনান প্রদেশ এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো শহরগুলির মধ্যে। ইউনান প্রদেশ বাংলাদেশের সাথে সহযোগিতার ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠেছে। এই বছর এটি বাংলাদেশী রোগীদের গ্রহণের জন্য চারটি হাসপাতালকে মনোনীত করেছে এবং প্রথম ব্যাচ ইতিমধ্যেই চিকিৎসার জন্য পৌঁছেছে তিনি উল্লেখ করেছেন। আরও সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল বাংলাদেশী রোগীদের জন্য তাদের দরজা খুলে দেবে এবং আমরা প্রয়োজনীয় সকল ভিসা সুবিধা প্রদান করব বলে উল্লেখ করেন ইয়াও ওয়েন। তিনি আরও বলেন, যোগাযোগ বৃদ্ধি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কুনমিং এবং চট্টগ্রামের মধ্যে একটি নতুন সরাসরি বিমান রুট শীঘ্রই চালু হতে চলেছে। এর ফলে যা দুই দেশের বিনিময় এবং পর্যটন বৃদ্ধি করবে। 

রাষ্ট্রদূত ইয়াও বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলকও ভাগ করে নেন - আগামী ৮ মে থেকে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো চীনে তাজা আম রপ্তানি করবে। কুনমিং এবং ইউনান গর্বের সাথে চীনের প্রথম অঞ্চল হবে যেখানে বাংলাদেশের সেরা আমের স্বাদ গ্রহণ করা হবে বলেও যোগস করেন তিনি। অনুষ্ঠানে ইউনান প্রদেশের ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ছয়টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণও ছিল। উভয় পক্ষের মধ্যে দশটি সহযোগিতা চুক্তি এবং পাঁচটি নতুন সহযোগিতা কেন্দ্র চালু হওয়ার আশা করা হচ্ছে। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যে উভয় দেশের আরও বিশ্ববিদ্যালয় এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান আরও গভীর সহযোগিতার জন্য হাত মেলাবে বলেও ইয়াও উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রদূত ঘোষণা করেন, যে সামনের দিকে  তাকিয়ে বেইজিং থেকে ২০০ টিরও বেশি চীনা কোম্পানি আগামী মাসে বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণ করতে বাংলাদেশ সফর করবে। যা শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দেয়।

একসাথে আমরা একটি পরিবর্তন আনতে পারি যা আমাদের জনগণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উপকারী উল্লেখ করেন তিনি। ওয়েন মানবজাতির জন্য একটি ভাগাভাগি ভবিষ্যতের সম্প্রদায় প্রতি চীনের প্রতিশ্রুতির উপর জোর দিয়ে প্রতিবেশীদের মধ্যে শান্তি, উন্নয়ন এবং বন্ধুত্বের আহ্বান জানান। আসুন আমরা কামনা করি যে চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব উজ্জ্বলভাবে জ্বলে উঠুক এবং আগামী প্রজন্মের জন্য স্থায়ী হোক বলেও বক্তব্য দেন। এই অনুষ্ঠানটি ইউনান প্রদেশের গণ সরকার এবং বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাস দ্বারা যৌথভাবে আয়োজিত হয়েছিল, যা আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার উপর আরও আলোকপাত করে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নরের সাক্ষাৎ ॥
অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকা সফররত চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইউবো। রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এ সাক্ষাৎ হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সাক্ষাৎকালে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করা হয়। উভয়পক্ষ বাণিজ্য, চিকিৎসা, পর্যটন, জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ, বিনিময়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলোচনা করেন। সাক্ষাতে ইউনান প্রদেশ ও চট্টগ্রামের সঙ্গে সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন এবং বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

নুসরাত

×