
শেখ হাসিনা
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর চাপ বেড়েছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে যা করা দরকার, অন্তর্বর্তী সরকার সবকিছু করছে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য তাকে (শেখ হাসিনা) দেশে এনে বিচার করা। কিছুদিন আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে কী ধরনের অপরাধ তিনি করেছেন। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছে তারা।’
তিনি বলেন, ‘এটা খুবই বড় ও ভয়ংকর রকমের অপরাধ। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এই রিপোর্ট ও অন্যান্য কিছু মানবাধিকার বিষয়ক রিপোর্টের পর প্রচুর চাপ তৈরি হয়েছে। এর একটা ইঙ্গিত আছে ইন্ডিয়া টুডে’র একটা জরিপে। সেখানে দেখা গেছে ৫৫ শতাংশ চান তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক। আবার একটা অংশ চান তাকে অন্য কোনো দেশে পাঠানো হোক। মাত্র অল্প একটা অংশ চাচ্ছে যে তিনি ভারতে থাকুক।’
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) গত ১৫-১৬ বছরে যে নৃশংস স্বৈরাচারী ব্যবস্থা চালিয়েছেন, এটা স্পষ্টভাবে এসেছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে। আমার মনে হয় এখন চাপ আরও হবে। আমরা তাকে ফেরত চেয়ে ভারতকে একটা চিঠি দিয়েছি। চাপটা অব্যাহত থাকবে। আমরা চাইব তাকে এনে সশরীরে হাজির করে বিচার করতে। বাংলাদেশের মানুষ তার বিচার দেখতে চায়। এটা আমাদের অগ্রাধিকার এবং আমরা এটার জন্য যত কাজ করা দরকার সব করছি।’
তিন উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জনের বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, ‘গুঞ্জনের বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক না। যদি সত্যিকারে কিছু হয় আপনারা জানবেন।’
আওয়ামী লীগের নির্বাচনে আসার বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে আমরা বারবার বলেছি। বাংলাদেশের জনগণ এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আমাদের একটাই কথা আওয়ামী লীগের নেতা, অ্যাক্টিভিস্ট, সাপোর্টার যারা জুলাই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, বা তারও আগে গুম-খুনে যারা জড়িত, যারা ম্যাসাকারে জড়িত, দুর্নীতিতে জড়িত সবার বিচার হবে। এটা হচ্ছে মাস্ট। এই জায়গাটা হবে, তারপর বাংলাদেশের মানুষ, রাজনৈতিক দল তারা সিদ্ধান্ত নেবেন যে, তারা আওয়ামী লীগের বিষয়ে কী ভাবছেন বা এটার ভবিষ্যৎ কী হবে।’
আইসিটি খাতের দুর্নীতি ॥ ব্রিফিংকালে প্রেস সচিব জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত আইসিটি খাতের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে দেশী-বিদেশী আইসিটি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
তিনি বলেন, গত কিছুদিন আইসিটি এবং ডিজিটালাইজেশনকে ঘিরে অনেকগুলো দুর্নীতির সংবাদ গণমাধ্যমে বেরিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চাচ্ছেন আইসিটি খাতের দুর্নীতি নিয়ে একটা শ্বেতপত্র হোক। এই শ্বেতপত্র তৈরির জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিতে বিশ্বের স্বনামধন্য, যারা আইসিটি নিয়ে কাজ করেছেন তাদের যুক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, তাদের মূল কাজ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে যে ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, সেটা কীভাবে করেছে, কত টাকা এখান থেকে পাচার হয়েছে তা বের করা। সুনির্দিষ্টভাবে কোন খাতে কত টাকা পাচার হয়েছে তার পুরো বিষয়টি দেখা। আগামী দুই মাসের মধ্যে কমিটি একটি দুর্নীতির শ্বেতপত্র বের করবে বলেও জানান শফিকুল আলম।
ভিসা নিষেধাজ্ঞা দ্রুত উঠে যাবে ॥ সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা নিষেধাজ্ঞা খুব দ্রুত উঠে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে চলে গিয়েছিল, এ সম্পর্ক ভালো করতে কমপ্রিহেনসিভ আলোচনা শুরু করেছে সরকার।
তিনি বলেন, আমিরাতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।