ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

জাতিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩

জাতিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান

যাদের রক্তের বিনিময়ে দুই যুগের পাকিস্তানি শাসন-শোষণের অবসান হয়েছে, বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের, মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের দিনে সেই বীর সন্তানদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছে গোটা জাতি। বিজয়ের ৫২ বছরে বাংলাদেশে যেন সব ফুল ফুটেছিল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধায়। বর্ণিল আয়োজনে চারদিকে চলেছে বিজয়োৎসব। লাখো শহীদের রক্ত¯œাত লাল-সবুজের বিজয় নিশান আর ফুল হাতে জনস্রোত সর্বত্র। এক নতুন রূপে ও চেতনায় এবার রাষ্ট্রের বিজয়দিন পালন করল দেশবাসী। শনিবার বিজয় দিবসে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ আগামীর স্বপ্নে চোখ রাখা বাংলাদেশ আবারও জানাল- এ জাতিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। 
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির গণজাগরণ আর স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের তীব্র ঘৃণা ও গণধিক্কার ভিন্নমাত্রা যোগ করেছিল এবারের মহান বিজয় দিবসে। মুক্তিযুদ্ধের সব পক্ষ শক্তিই ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমেই নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রকারী, অগ্নিসন্ত্রাসী, যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের দোসরদের আস্ফালন রুখে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। সর্বত্রই ছিল মুখে বিজয়ের গান আর নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার ও মৌলবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার শপথ। এমন দীপ্ত শপথে শনিবার চারদিকে ছিল নতুন প্রজন্মের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের জন্মদিনে অন্যরকম এক স্বস্তি ও চেতনায় বিজয়ের উল্লাসে মেতেছিল পুরো জাতি।

এক নতুন রূপে ও চেতনায় এবার বিজয় দিবস পালন করল দেশবাসী। বিজয় দিবসের মাত্র ২১ দিন পর অর্থাৎ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এ নির্বাচনে একপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বাধীনকারী দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। অন্যদিকে নির্বাচন বর্জনকারী একাত্তরের পরাজিত শত্রু জামায়াত, যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে বিএনপির জোট। ঠিক এ কারণেই একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের বিজয়ের মাসে আবারও পরাজিত করতে নতুন প্রজন্মের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছিল উল্লেখ করার মতো। তরুণ প্রজন্মের সন্তানরা স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন- ‘আমরা নিশ্চয়ই যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হতে দেব না। যে যে দলেই হোক না কেন, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশে যারা রাজাকারদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, তাদের আগামীতেও কখনো আমরা ভোট দেব না।’
রাজাকার-আলবদর ও স্বাধীনতাবিরোধী মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের শপথে একাত্তরের মতোই যেন গর্জে উঠেছিল তারা। বিজয়ের বাহান্ন বছরে পদার্পণের দিনে দেশবাসী যেন দ্বিতীয় যুদ্ধজয়ের শপথে ছিল উদ্বেলিত, বলিয়ান। আর সেই দ্বিতীয় যুদ্ধজয় হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে রাজপথে পরাজিত করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করার। এ কারণে এবারের বিজয় দিবসের প্রতিটি কর্মসূচিতেই ছিল নির্বাচনের হাওয়া। প্রতিটি কর্মসূচিতেই উচ্চারিত হয়েছে প্রায় অভিন্ন স্লোগান- ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় স্বাধীনতাবিরোধীদের ঠাঁই নাই, জামায়াত-শিবির-রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়, ধানের শীষের দিন শেষ, নৌকা মার্কার বাংলাদেশ’।
মহান বিজয় দিবসে অহংকার আর অর্জনের বিজয়োল্লাসে মেতে ছিলো পুরো বাংলাদেশ। রক্তের ঋণ শোধ করার গর্ব, নিষ্ঠুরতার বিচার করতে পারার তৃপ্তি। রাজাকার-আলবদর ও স্বাধীনতাবিরোধী মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের শপথে একাত্তরের মতোই যেন গর্জে উঠেছিল তারা। বিজয়োৎসবে মাঠে নামা কোটি মানুষের একাত্তরের বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত শির আর চোখে ছিল একাত্তরের ঘাতক রাজাকার-আলবদর-যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দোসরদের প্রতি তীব্র ঘৃণার আগুন। এসব প্রমাণ করে দেয়, সেই রক্তক্ষয়ী ৯ মাসের প্রতিটি ক্ষণ কৃতজ্ঞ জাতি এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারে না, ভোলেনি। আর ভুলবেও না। কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিয়েছে ত্রিশ লাখ শহীদের স্মৃতির মিনার। 
বিজয় দিবসে গোটা দেশই মেতে উঠেছিল বাঁধভাঙা বিজয়োৎসবে। নেচে-গেয়ে উঠেছিল বিজয়ের আনন্দে। বিজয়ের আনন্দ আর নতুন প্রজন্মের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। বিজয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হতে রাজপথে নেমে আসা লাখ লাখ শিশু-কিশোর থেকে আবাল বৃদ্ধ-বণিতার চোখে মুখে যেমন ছিল বিজয়ের আনন্দ, ঠিক তেমনি ছিল একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে ঘৃণা-ধিক্কার আর জামায়াত নিষিদ্ধের প্রচ- দাবি। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের পর রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের শপথ নিয়ে শনিবার বিজয়ের ৫২ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে বাংলাদেশ। তবে আনন্দমুখর এ উৎসবে বরাবরের মতো এবারও অন্তস্রোত বয়ে গেছে স্বজন হারানোর বেদনা।

বিজয় দিবসের নানা আয়োজন তরুণ প্রজন্মকে দোলা দিয়েছে, স্মৃতির ঝাঁপিতে নাড়া দিয়েছে ইতিহাসের সেদিনের সাক্ষীদের। বাংলাদেশের সোঁদাগন্ধময়ী মাটির যে হৃদস্পন্দন সেখানে এই বাংলার প্রতিটি সন্তানের ভিন্ন মাত্রিক সম্পর্ক দেশপ্রেমের দর্শনকে ক্রমাগত শাণিত করেছে। রাজধানী ঢাকা থেকে ওঠা রাজাকার-আলবদরমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের এই দাবি বিজয়ের দিনে ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ে গোটা দেশে। এভাবেই স্বস্তির পরিবেশে মুক্ত আকাশে মুক্ত বিহঙ্গের মতো লাখো জনতার বাঁধভাঙা আনন্দ উচ্ছ্বাস, মহান শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে জাতি পালন করল মহান বিজয় দিবস। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অলি গলি পাড়া মহল্লা রাজপথে বিনা বাধায় দিনভর বেজেছে জাতির জনকের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের বজ্রকঠিন ভাষণের রেকর্ড আর কালজয়ী দেশাত্মবোধক গানগুলো।  
বাঙালি জাতি আনন্দ, বেদনা আর বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লাখো শহীদকে, স্বাধীন রাষ্ট্রের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। দিবসটির মূল অঙ্গীকারই ছিল পরাজিত অপশক্তি ও তাদের দোসরদের মোকাবিলা করে আগামী নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে বিজয়ী করে জঙ্গীবাদমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ-স্বনির্ভর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সোনার বাংলাদেশ গড়ার। প্রতিটি অনুষ্ঠানে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ, ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও দুর্নীতিমুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন এক জন্মভূমির স্বপ্নের কথাও ধ্বনিত হয়েছে সর্বত্র। 
রাজধানীসহ সারাদেশের রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত, দোকানপাট, যানবাহন এবং বাসাবাড়িতে পতপত করে উড়েছে লাখো শহীদের রক্তস্নাত লাল-সবুজ পতাকা। ছোট ছোট কাগজ বা কাপড়ের তৈরি পতাকা হাতে নিয়ে বা বুকে-পিঠে লাগিয়ে শিশু-কিশোররা বেরিয়েছিল ঘরের বাইরে। কেউ কেউ মুখে এঁকেছিল লাল-সবুজ পতাকা। বিজয় দিবসে কোথাও স্বাধীনতাবিরোধী সেই জামায়াত-শিবিরের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত নতুন প্রজন্মের সাহসী পথচলায় এবারের বিজয় দিবসে রাজনৈতিক বিতর্ক বা স্বাধীনতা বিরোধীদের কোনো আস্ফালন ছিল না।

সূর্যোদয়ের সময় ৩১ বার তোপধ্বনীর মাধ্যমে শনিবার ভোরে বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। ভোর থেকেই সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং ধানম-ির বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে নামে জনতার ঢল, সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। অন্যদিকে রাজধানী জুড়ে বিজয় দিবস ঘিরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা। পথে পথে সংগীত, নাটকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকথা এবং সব কর্মসূচিতে স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতি ঘৃণা ও ধিক্কার প্রকাশ পায়। 
শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালা ঘুরে ঘুরে উপভোগ করে। রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় এবং জেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক মোহনা জাতীয় ও উৎসব পতাকা দিয়ে সাজানো হয়। বেতার-টেলিভিশনে বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান এবং সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে দিবসটির মাহাত্ম্য তুলে ধরা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে হাসপাতাল, শিশুসদন, কারাগার ও এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। এছাড়া জাতির সুখ, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ মোনাজাত। মন্দির, গির্জা, প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। 
জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল ॥ হাতে লাল-সবুজের পতাকা আর রং-বেরঙের ফুল, হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে সকাল থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে। দেশের শ্রেষ্ঠ সূর্য সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার ফুলে ফুলে ঢেকে যায় জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদী। স্মৃতিসৌধে লাখো মানুষের জমায়েতে ছিল বুড়ো থেকে শিশু পর্যন্ত সববয়সী মানুষের। ছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা। বিজয়ের আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ঘিরে গোটা সাভার যেন পরিণত হয় উৎসবের নগরীতে। কুয়াশায় ঢাকা ও কনকনে শীত উপেক্ষা করেই সর্বস্তরের মানুষের ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদী। 
সাভার থেকে আমাদের রিপোর্টার অঙ্গন সাহা জানান, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এদিন ভোরে শীতের মধ্যে কুয়াশায় ঘেরা স্মৃতিসৌধের সামনে জড়ো হয় হাজার হাজার জনতা। দিনের প্রথম প্রহরে জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে লাখো শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তারা শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করেন। তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল তাদের গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এ সময় বিউগলে বেজে উঠে করুণ সুর। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন।  
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, এ এইচ এন খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এরপরে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনীতিকবৃন্দ, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও ঢাকা জেলা প্রশাসক স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। 
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার পর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ সময় বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে ঢল নামে লাখো মানুষের। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী নারী-পুরুষের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। সকাল দশটার দিকে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়সহ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), তৃণমূল বিএনপি, জাতীয় পার্টি, সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ কংগ্রেস, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা লীগ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, জাকের পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ ছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ও এর হলসমূহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও এর হলসমূহ, সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাংলা একাডেমি, ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্স সেন্টার (ভার্ক), সাস, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র, এডাব, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, একাত্তরের ঘাতক-দালার-নির্মূল কমিটি, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন, সাব-এডিটরস কাউন্সিল, আশুলিয়া প্রেসক্লাব, সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিকেএসপি, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই), পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি), বঙ্গবন্ধু কৃষি পরিষদ, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতি, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, নিরাপদ সড়ক চাই, ঢাকা জেলা প্রশাসক, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার, সড়ক বিভাগ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ অজস্র সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।  
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে জনতার ঢল ॥ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার সকালে জনতার ঢল নেমেছিল রাজধানীর ধানম-ির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই জনতার ঢল নামে সেখানে। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মিছিল করে ৩২ নম্বর সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের মোড়ে জমায়েত হতে থাকে। সকাল ৭টার মধ্যেই সর্বস্তরের মানুষের ভিড়ে গোটা এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে সরকার প্রধান হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মহান নেতা ও স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে দলীয় প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে মোনাজাতে অংশ নেন। 
এরপর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। পরে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার ফুলে ফুলে ভরে যায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানমন্ত্রীর বিজয়ের উপহার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রতি বছরের ন্যায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী এই বছরও শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে রাজধানীর মোহাম্মদপুর গজনবী রোডের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্র (মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১) এ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ফলমূল এবং মিষ্টান্ন পাঠিয়েছেন।

শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু এবং প্রধানমন্ত্রীর সহকারী  প্রেস সচিব এ বি এম সরওয়ার-ই-আলম সরকার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এগুলো পৌঁছে দেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা এ সময় প্রতিটি রাষ্ট্রীয় দিবস এবং উৎসবে যেমন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পবিত্র ঈদ এবং বাংলা নববর্ষের দিনে তাদের স্মরণ করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যগণ এ সময় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী দল আওয়ামী লীগের বিজয় প্রত্যাশা করেন। তারা বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে মুক্তিযোদ্ধাগণ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সুরক্ষিত থাকবে। শুধু তাই নয়, দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাও অব্যাহত থাকবে এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠিত হবে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যগণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যগণের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট, একটি উদ্বোধনী খাম ও একটি ডাটাকার্ড অবমুক্ত করেছেন। শনিবার সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ সিলমোহর ও ব্যবহার করা হয়। এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। এই ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও ডাটা কার্ড ঢাকা জিপিও’র ফিলাটেলিক ব্যুরো থেকে বিক্রি করা হবে এবং পরবর্তীতে সারাদেশের অন্যান্য জিপিও এবং প্রধান পোস্ট অফিসগুলোতেও পাওয়া যাবে।

×