ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শ্বেতপত্র দুদক ও মানবাধিকার কমিশনে হস্তান্তর

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ১২ মে ২০২২

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শ্বেতপত্র দুদক ও মানবাধিকার কমিশনে হস্তান্তর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তদন্ত করে গণকমিশন গঠনের মাধ্যমে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাসের যৌথ উদ্যোগে এই শ্বেতপত্র প্রকাশিত হয়েছে। বুধবার সেই শ্বেতপত্রের কপি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’ সম্প্রতি ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। গত ১২ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আনুষ্ঠানিকভাবে এই শ্বেতপত্রের মোড়ক উন্মোচন করেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনে এই শ্বেতপত্রের কপি হস্তান্তর করেন গণকমিশনের চেয়ারপার্সন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, কমিশনের সচিবালয়ের সমন্বয়কারী কাজী মুকুল, সদস্য শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর তন্ময় ও ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী। বুধবার দুপুরে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে গণকমিশন কর্তৃক প্রকাশিত শ্বেতপত্র তুলে দেন কমিশনের নেতৃবৃন্দ। এ সময় দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ ছাড়াও দুদক কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক, দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহাবুব খান উপস্থিত ছিলেন। গণকমিশনের চেয়ারপার্সন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক দুদক চেয়ারম্যানের কাছে শ্বেতপত্র হস্তান্তের পর সাংবাদিকদের বলেন, আমার শ্বেতপত্রের কপি দুদক চেয়ারম্যানের কাছে দিয়েছি। তিনি শ্বেতপত্র ভাল করে পড়ে দুদকের আইনের মধ্যে যতটুকু করা সম্ভব ততটুকু করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। দুদকের আইনের বাইরে কিছু থেকে থাকলে সেটা করার জন্য বিভিন্ন সংস্থা যেমন সিআইডি কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তা প্রেরণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করবেন বলে জানিয়েছেন।’ বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আরও বলেন, মৌলবাদী সাম্প্রদায়িকতা কর্মকা-ের ছবিসহ বিবরণ, ভুক্তভোগীদের জবানবন্দী এবং এসব ঘটনার স্থায়ী সমাধানের জন্য শ্বেতপত্রে আমরা বেশ কিছু সুপারিশ করেছি। এর মধ্যে বিশেষ করে যারা এসব ঘটনায় দায়ী তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার সুপারিশ করেছি। আশা করছি, মৌলবাদী সাম্প্রদায়িকতার শিকড় উপড়ে ফেলতে এই শ্বেতপত্র অপরাধ দমন সংশ্লিষ্ট বিশেষ করে ‘দুদক’কে সহযোগিতা করবে। গণকমিশনের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, গণকমিশনের এই শ্বেতপত্রে ১০০০ মাদ্রাসা ও ১১৬ জন ওয়াজকারীর ওপর তদন্ত করে তথ্য-উপাত্ত যুক্ত করেছি। আশা করছি, আমাদের তদন্তের ওপর ভিত্তি করে দুদক তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবে। গণকমিশনের সচিবালয়ের সমন্বয়কারী কাজী মুকুল বলেন, মৌলবাদী সাম্প্রদায়িকতা অপশক্তি সারাদেশে নাশকতার পাশাপাশি তাদের অর্থের উৎস এবং এর ব্যবহার করে বাংলাদেশের মানুষকে ভিন্নপথে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেÑ এ তথ্যগুলোই আমরা শ্বেতপত্রে উল্লেখ করেছি। গণমাধ্যম সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি হেফাজতে ইসলামের ৫০ জন নেতার আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কে দুদক তদন্ত করছে। আমাদের শ্বেতপত্রে তাদের জঙ্গী সম্পৃক্ততা, সন্ত্রাস, হত্যা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি আর্থিক দুর্নীতি ও অরাজকতার তথ্য রয়েছে। আমাদের শ্বেতপত্র দুদকের তদন্তে সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি। আশা করব দুদক দ্রুত জামায়াত-হেফাজতের নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য ওয়াজ ব্যবসায়ীকে আর্থিক দুর্নীতির বিবরণ জাতির সামনে তুলে ধরবে। দুদকের আগে গণকমিশনের নেতৃবৃন্দ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের কাছে শ্বেতপত্র তুলে দেন। এ সময় ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ শ্বেতপত্র পড়ে মানবাধিকার কমিশনের আওতার মধ্যে যতটুকু সম্ভব উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস দেন গণকমিশনের নেতৃবৃন্দকে। এ সময় কমিশনের সদস্যবৃন্দ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মনে করি স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের আর্থিক দুর্নীতি অনুসন্ধানে আমাদের শ্বেতপত্র ‘দুদক’-এর তদন্তে সহায়ক হবে। এ ছাড়া এই শ্বেতপত্র স্বাধীনতাবিরোধী ও ধর্মান্ধদের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অনুসন্ধান এবং এর উদ্দেশ্য অনুধাবনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সহায়তা করবে।
×