ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

অচিরেই পাল্টে যাবে চিত্র

আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাড়ছে, সম্প্রসারণে নানা প্রকল্প ॥ শাহ আমানত বিমানবন্দর

প্রকাশিত: ২১:৪৭, ১৩ ডিসেম্বর ২০২১

আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাড়ছে, সম্প্রসারণে নানা প্রকল্প ॥ শাহ আমানত বিমানবন্দর

নয়ন চক্রবর্ত্তী, চট্টগ্রাম অফিস ॥ স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের এভিয়েশন যুগের সূচনা জাতির পিতার হাত ধরেই। তবে যে আঙ্গিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিমান বন্দরগুলোর অবকাঠামো এবং বাংলাদেশ বিমানের উন্নয়ন ঘটান সেই অনুপাতে ৭৫ পরবর্তী কোন সরকার আগ্রহ দেখায়নি। ব্রিটিশ শাসন আমলে ১৯৪০ সালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নির্মিত হয় বিমান ঘাঁটি। তখনও পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর হয়ে গড়ে ওঠেনি। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সময় এটি এয়ার ফিল্ড হিসেবেই পরিচিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকার এর উন্নয়ন ঘটায়। কমার্শিয়াল হাব চট্টগ্রাম নানা কারণে ক্রমেই আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ফলে আন্তর্জাতিক এই বিমানবন্দরে বড় ফ্লাইট ওঠানামাও বাড়ছে। প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায় এই বিমানবন্দরের উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটান শেখ হাসিনা। ২০১৩ সালের নবেম্বরে এটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বীকৃতিও দেয় আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইকাও)। ইতোমধ্যে অনেক প্রকল্প নেয়া হয়েছে সরকারীভাবে। ভবিষ্যতে আরও কিছু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের চিত্র। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে সার্ভিল্যান্স রাডার স্থাপন, যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে ভয়েস কমিউনিকেশন ও কন্ট্রোল সিস্টেম, আন্ডার ভেহিক্যাল স্ক্যানিং মেশিন, মাস্ট লাইট ও ডুয়েল ভিউ স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে বিশে^ বিমানবন্দরটির সেবার পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনিভাবে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। দেশের প্রায় ২১ শতাংশের কাছাকাছি বিমান যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে। প্রায় ৮১ বছরে পা দেয়া বিমান বন্দরটিতে সুযোগ-সুবিধা ক্রমেই বাড়ছে। ১৯৯৬ সালে বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয়। তখনও ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ সরকার। কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে আসে জাপান সরকার। ৫৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৯৮ সালের ১২ মার্চ উন্নয়ন কাজ শুরু হয়ে সম্পন্ন হয় ২০০০ সালে। তবে ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার সময়ে পিছিয়ে পড়ে উন্নয়ন কাজ। দীর্ঘ বিরতির পর ফের গতি আসে এভিয়েশন খাতে। আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করা শুরু করে, বিমানবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে। অথচ ২০০০ সাল পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা নেয়নি। যার ফলে চট্টগ্রাম ঢাকাসহ অন্যান্য বিমানবন্দরের সকল উন্নয়ন থমকে ছিল। চট্টগ্রামের বিমানবন্দরটি আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এম এ হান্নানের নামে ছিল। পরবর্তী সরকার ২০০৫ সালের ২ এপ্রিল এর নাম পরিবর্তন করে রাখে শাহ আমানত বিমানবন্দর। পতেঙ্গায় অবস্থিত বিমানবন্দরটিতে নতুন বোর্ডিং ব্রিজ ও কানেক্টিং করিডর নির্মিত হলে আরও পাল্টে যাবে যাত্রীসেবা। বিশে^র উন্নত বিমানবন্দরের কাতারে দাঁড়াবে এটি। বাংলাদেশের দ্বিতীয় এই বৃহত্তম চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের বিদ্যমান রানওয়ে দিয়ে বোয়িং ৭৩৭ ও বোয়িং ৭৭৭ সিরিজের বিমান উঠানামা করতে পারে। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ভবিষ্যতে এর পরিধি বৃদ্ধি করতে রানওয়ে সম্প্রসারণ, এপ্রোন সম্প্রসারণ, বিমানবন্দরের প্যারালাল টেক্সিওয়ে নির্মাণ, নতুন কার্গো হাউস নির্মাণ এবং এর মাধ্যমে আধুনিক কার্গো ভিলেজ সংস্থাপন ও কার্গো হাউস সম্প্রসারণ ও অটোমেশন করা হবে। এছাড়া জমি অধিগ্রহণ করে বিমানবন্দরের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এর বাইরে নতুন ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার নির্মাণ এবং নতুন অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল নির্মাণ ও দুইটি বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে তাদের প্রধান অর্জন হলো, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় (অটোমোটেড) বডি স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন, সিকিউটি পাস প্রিন্টিং মেশিন বসানো, কার্গো শেড সম্প্রসারণ, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীদের শতভাগ বেসিক এভিয়েশন সিকিউরিটি ট্রেনিং সম্পন্ন ও যাত্রীদের চেকিং কাউন্টারের ওজন স্কেল সংস্কার। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার ফরহাদ হোসেন খান জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিতকরণ এবং যাত্রীদের সেবার মান উন্নয়নে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, আরও অনেক প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এরসঙ্গে উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে যাতে অপারেশনাল ব্যবস্থা অব্যাহত থাকে সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। নিরাপদ উড্ডয়ন ও অবতরণ আমাদের লক্ষ্য। বিমানবন্দরের সাবেক একাধিক ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি ইউরোপ আমেরিকায় যদি সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করা যায় তাহলে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের আক্ষেপ ঘুচবে। এরজন্য যাত্রী সঙ্কটের কথাটি অমূলক। তার চেয়ে বড় বিষয় হলো যাত্রীসেবার জন্য এ বিমানবন্দর প্রস্তুত ছিল না, অত্যাধুনিক সরঞ্জামের কোন জোগান ছিল না। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার যদি বিমানবন্দরের উন্নয়নে হাত দিত, তাহলে এতদিনে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যেত।
×