
আজিজুর রহমান ডল, জামালপুর ॥ ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে জামালপুর নামক এই জনপদটি প্রকৃতির দেয়া স্বর্গীয় আশীর্বাদ। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর স্রোতধারার মতো প্রবাহিত হয়ে চলেছে এই জেলার পঁচিশ লাখ মানুষের জীবনধারা। এই জনপদের রয়েছে স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সম্মিলিত জীবনধারা। অতীতের বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, অপরিসীম মাধুর্য প্রাচীনতম এই জনকেন্দ্রটিকে প্রস্ফ‚টিত করতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুরু হয়েছে কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। প্রাচীন ও মধ্যযুগের ঐতিহাসিক বিবর্তন এবং নানান উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে যেমন এই জনপদ সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি পাঠান, মোঘল, ইংরেজ, পাকিস্তানী আমল পার হয়ে হযরত শাহ জামাল আউলিয়ার পুণ্যভ‚‚মি হিসেবে মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকে জামালপুর ছিল অবহেলিত। উন্নয়নের তেমন কোন ছোঁয়া লাগেনি এই জেলায়। জেলা শহরটি আয়তনে অনেক বড় হলেও এই শহরের নাগরিক জীবনধারা অনেকটাই ছিল গ্রামের মতোই। আধুনিক শহর হিসেবে নাগরিকদের যে সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা তার কোনটাই পূরণ করা সম্ভব হয়নি অতীতের কোন সরকারের আমলে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে সকল উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে- সেগুলো এখন বাস্তবায়িত হয়ে একটি একটি করে দৃশ্যমান হতে চলেছে।
শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী ॥ একটি আধুনিক শহরের রূপরেখা কেমন হওয়া উচিত এ নিয়ে সারাবিশ্বের নগরবিদগণ ও রাজনীতিবিদগণ চিন্তা-ভাবনা করে চলছেন দীর্ঘদিন যাবত। একটি শহরকে কী করে সুন্দর ও বাসযোগ্য করা যায়, সেজন্য পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ সবুজ প্রকৃতিময় শহরের ধারণা নিয়ে কাজ করছেন নগরবিদগণ। একটি স্মার্ট সিটির ধারণাই স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের লক্ষ্যের একটি লক্ষ্যমাত্রা। কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে একীভ‚ত করার মাধ্যমে নগরকেন্দ্রিক উন্নত জীবনধারা সূচনার লক্ষ্যে জামালপুর জেলার উন্নয়নের যাদুকাঠি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপির উদ্যোগে জামালপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র দয়াময়ী এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে ‘শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী ও নগর স্থাপত্য’।
বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চাসহ ইতিহাস ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করতে জামালপুরে গড়ে তোলা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন নান্দনিক নগর স্থাপত্য শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী। জেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্র দয়াময়ী এলাকায় প্রায় ৮ একর জমির ওপর শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লীর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে দ্রæত গতিতে। ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো পৌরসভা হচ্ছে জামালপুর। ইংরেজ সরকারের আমলে ১৮৬৯ সালে মিউনিসিপ্যালিটি হিসেবে জামালপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক জেলা শহর জামালপুর। শহরটি রাজধানী ঢাকা থেকে ১৯২ কিলোমিটার দূরে পুরাতন ব্র্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত। কৃষিপণ্য এবং নকশিপণ্য ও কুটিরশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ এই জেলা। স্থানীয় সরকার অধিদফতরের অধীনে ২০১৬ সালে জামালপুর শহরের প্রাণ কেন্দ্র দয়াময়ী এলাকায় নগর স্থাপত্যের পুনর্সংস্কার ও সাংস্কৃতিক পল্লী স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রায় ২২৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হচ্ছে সুউচ্চ শহীদ মিনার, রিক্রিয়েশন প্লাজা, আন্ডারগ্রাইন্ড মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক যাদুঘর, এ্যাম্ফিথিয়েটার, লেক, ওয়াকওয়ে, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, বোট ক্লাব, বসার জায়গা, ভাসমান রেস্তরাঁ, ৯তলা বিশিষ্ট কালচারাল হাব, ৭তলা বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন, মুক্তমঞ্চ, ফুটব্রিজ। এছাড়াও থাকবে জলাধারের চারদিকে নান্দনিক দৃশ্য, ৪২ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট একটি ফেরিজ হুইল। আকাশপথে বিমানের যাত্রীরাও যেটা অবলোকন করে মুগ্ধ হবেন। শিশুদের খেলার জায়গা এবং প্রাকৃতিক শীতল হাওয়ায় দর্শনার্থীদের হৃদয় মনকে শিহরিত করবে। নান্দনিক বিনোদন এবং সাংস্কৃতিক পল্লীটি শুধুমাত্র জামালপুর জেলাবাসীর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হবে না এই কেন্দ্রটি সারাদেশের মানুষের বিনোদনের চাহিদা পূরণ করবে। রাজধানী ঢাকার বাইরে জেলা শহরে স্থাপিত শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লীটি হবে একটি স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত। বিনোদনের পাশাপাশি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটিকে ঘিরে। আশা করা হচ্ছে, সাংস্কৃতিক পল্লীটি সকলের জন্য উন্মুক্ত হলে সারাদেশ থেকে দৈনিক হাজারও দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে এখানে।
অর্থনৈতিক অঞ্চল ॥ অনগ্রসর ও দারিদ্র্যপীড়িত জেলা জামালপুরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে সদর উপজেলার দিগপাইত ও তিতপল্লা ইউনিয়নে ৪৩৭ একর জমিতে স্থাপিত হচ্ছে ইকোনোমিক জোন অর্থাৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল। গ্যাস ও বিদ্যুত স্টেশন স্থাপন, প্রশাসনিক ভবন অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণসহ এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পের কাজ চলছে দ্রæতগতিতে। প্রায় ২৪ লাখ জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত জামালপুর জেলার প্রায় ১২ লাখ ৫২ হাজার মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। শিক্ষার সূচকটিও অত্যন্ত নাজুক। জেলার শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। এ জেলায় এখনও বড় কোন শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। ফলে অন্য জেলার চেয়ে আর্থ-সামাজিক অনেক সূচকে পিছিয়ে আছে জামালপুর। এ অবস্থায় অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর ও দারিদ্র্যপীড়িত জেলা জামালপুরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে মির্জা আজমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। বিনিয়োগকারীদের জন্য ভ‚মি উন্নয়নের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে অন্তত দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অর্থনৈতিক অঞ্চলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা বিসিককে এরইমধ্যে ৫০ একর জমি এবং বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রকে (বিটাক) পাঁচ একর জমি দেয়া হয়েছে। জাপানের একটি কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানি বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে। এছাড়া বেজার গবর্নিং বোর্ডে কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স সলিউশন লিমিটেডসহ এখন পর্যন্ত ১২টি শিল্প প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলটিকে কৃষি ও মসলাজাত পণ্য, পাট, চামড়া, সিরামিক, ফার্মাসিউটিক্যালসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে। আরও যে সকল প্রকল্পের কাজ চলমান আছে এবং বাস্তবায়িত হয়েছে সেগুলোর তালিকাও অনেক দীর্ঘ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট মতিয়র রহমান তালুকদার রেলওয়ে ওভারপাস ॥ জামালপুর শহরের প্রধান সড়কটি রেলক্রসিং দ্বারা দুই ভাগে বিভক্ত। ফলে ট্রেন চলাচলের সময় শহরে অসহনীয় যানজট দেখা দেয়। দীর্ঘদিনের এই যানজট নিরসনের জন্য সড়ক ও জনপদ অধিদফতর শহরের ফুলবাড়িয়ায় (গেইটপাড়া) এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে রেলওয়ে ওভারপাস। এই রেলওয়ে ওভারপাসের নামকরণ করা হয়েছে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট মতিয়র রহমান তালুকদার রেলওয়ে ওভারপাস’। রাজধানী ঢাকার বাইরে এটি হবে দেশের কোন মফস্বল শহরের প্রথম রেলওয়ে ওভারপাস। রেলওয়ে ওভারপাসের দৈর্ঘ্য হবে ৭৮০ মিটার। দুই পাশে পাকা সড়কও নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ হলে শহরের যানজট নিরসন হবে এবং জনদুর্ভোগ লাঘব হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপদ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী।
জামালপুর কারাগার আধুনিকায়ন ॥ ১২১ বছরের পুরনো জামালপুর জেলা কারাগারকে আধুনিক কারাগারে উন্নীত করতে ২১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। পুরনো কারাগারের প্রশাসনিক ভবন, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা এবং নারী, পুরুষ ও কিশোর বন্দীদের ওয়ার্ড নির্মাণসহ অত্যাধুনিক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থাকবে নতুন এই কারাগারটিতে।
শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ॥ জামালপুর শহরের নতুন বাইপাস সড়কের পাশে মনিরাজপুর এলাকায় প্রায় ৩০ একর জমির ওপর শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে। বর্তমানে মেডিক্যাল কলেজের কাজ পুরোটাই সম্পন্ন হলেও হাসপাতালের কাজ চলমান রয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদফতর। কলেজ ও হাসপাতালের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজের মধ্যে রয়েছে একাডেমিক ভবন, হোস্টেল ভবন (ছাত্র), হোস্টেল ভবন (ছাত্রী), হাসপাতাল ভবন, ইন্টার্নি ডক্টরস ডরমেটরি (মহিলা) ইন্টার্নি ডক্টরস ডরমেটরি (পুরুষ), সিঙ্গেল ডক্টরস একোমোডেশন (মহিলা), সিঙ্গেল ডক্টরস একোমোডেশন (পুরুষ), স্টাফ নার্স ডরমেটরি, টিসিং মর্গ, ইমারজেন্সি স্টাফ ডরমেটরি (মহিলা), ইমারজেন্সি স্টাফ ডরমেটরি (পুরুষ), নার্সিং কলেজ একাডেমি ভবন, নার্সিং কলেজ (হোস্টেল ভবন), মসজিদ, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন বিল্ডিং, ৪টি রেসিডেন্সিয়াল একোমোডেশন, প্রিন্সিপাল ও পরিচালক রেসিডেন্স এবং লন্ড্রি ভবন ও অন্যান্য কাজ। ২০১০ সালে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। ইতোমধ্যে নবনির্মিত মেডিক্যাল কলেজের একাডেমিক ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন এবং তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, শীঘ্রই হাসপাতালের কার্যক্রম চালু হলে এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের উন্নত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত হবে। এছাড়াও আরও যেসব প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে এবং যেসব প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে তার তালিকা অনেক দীর্ঘ। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে শহরের দয়াময়ী থেকে কম্পপুর মোড় পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ চলছে। জামালপুর শহরের কম্পপুর থেকে ইসলামপুর হয়ে দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার ৩৪ ফুট সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। বেলটিয়া থেকে কম্পপুর পর্যন্ত একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে ছোনকান্দা থেকে ফৌজদারি মোড় পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম স্টেডিয়াম এবং মির্জা আজম ভলিবল স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। আধুনিকমানের জামালপুর শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণ কাজ সমাপ্ত।
সরকারী আশেক মাহমুদ কলেজ এবং সরকারী জাহেদা শফির মহিলা কলেজের হোস্টেলসহ বিভিন্ন আবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। ১০০০ আসন বিশিষ্ট অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জেলা পরিষদের ‘মির্জা আজম অডিটোরিয়াম’ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদ খনন ও শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। আরও উল্লেখযোগ্য যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে- তার মধ্যে মেলান্দহ এবং মাদারগঞ্জ উপজেলায় দুইটি মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। ১৬ কোটি টাকা ব্যয় ছয়তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন আধুনিক জামালপুর ডায়াবেটিস হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের পণ্যকে আন্তর্জাতিকভাবে বিপণন ও প্রদর্শনের জন্য ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের একমাত্র ‘শেখ হাসিনা নকশি পল্লী’ স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। আন্তর্জাতিকমানের একটি বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সজীব ওয়াজেদ জয় হাইটেক পার্ক প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। মেলান্দহের মহিরামকুল স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে ‘শেখ হাসিনা পল্লী উন্নয়ন একাডেমি’ নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা ফিসারিজ কলেজকে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’-এ উন্নীত করা হয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ ‘শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ স্থাপিত হয়েছে মেলান্দহের ভাবকীতে। যমুনা নদীর ভাঙ্গন রোধে দেওয়ানগঞ্জ থেকে ইসলামপুর-মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ হয়ে সরিষাবাড়ী পর্যন্ত বাঁধ কাম রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। মেলান্দহ উপজেলার শিহাটায় ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট নির্মাণ কাজ চলমান। ‘শেখ হাসিনা হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’ স্থাপিত হয়েছে ইসলামপুরে। মাদারগঞ্জে পাট থেকে জিন্স কাপড় তৈরির কারখানা ‘জুট টেক্সটাইল মিল’ স্থাপন করা হচ্ছে। মাদারগঞ্জের শ্যামগঞ্জ কালিবাড়ীতে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম খোকা পলিটেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’। জামালপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হচ্ছে শহরের কম্পপুরে। দেড়শো কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট মাদারগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ১৫০ শয্যায় উন্নীত করার কাজ চলমান রয়েছে। জামালপুর সদরে ১০০ ও ৩০০ মেগাওয়াট দুটি বিদ্যুত উৎপাদিত কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে। মেলান্দহে স্থাপিত হচ্ছে ‘শেখ হাসিনা টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’। মাদারগঞ্জ স্থাপন করা হচ্ছে মেডিক্যাল টেকনোলজি ইনস্টিটিউট। কামালপুর স্থলবন্দরের আধুনিকায়নের কাজ চলমান। আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের পুরাতন বগি বদলে নতুন বগি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। জামালপুর-টাঙ্গাইল হয়ে ঢাকা রুটে জামালপুর এক্সপ্রেস নামে নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হয়েছে। মাদারগঞ্জে স্থাপন করা হচ্ছে ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ‘জামালপুর সোলার পার্ক’। পাট গবেষণা উপকেন্দ্র হচ্ছে মাদারগঞ্জে। ঢাকা ময়মনসিংহ-জামালপুর আন্তঃজেলা সড়ককে মহাসড়কে উন্নীতকরণ কাজ চলমান রয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল-জামালপুর সড়ক মহাসড়কে উন্নীতকরণ কাজ চলমান। জামালপুর, মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ পৌরসভায় সুপেয় পানি সরবরাহ ও ড্রেনেজ সংস্কার কাজের জন্য গৃহীত হয়েছে ১৫০ কোটি টাকার প্রকল্প। মাদারগঞ্জের মিলনবাজারে নির্মাণ করা হচ্ছে ‘শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট’। ভোকেশনাল টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ নির্মাণ করা হচ্ছে মাদারগঞ্জের জাঙ্গালিয়ায়। দিঘপাইত-সরিষাবাড়ী-তারাকান্দি রাস্তা প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে জামালপুর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাক রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বাহাদুরাবাদ-বালাসী ঘাটে বন্ধ হয়ে যাওয়া ফেরী পুনরায় চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মাদারগঞ্জ-সারিয়াকান্দি নৌরুটে সীট্রাক ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে তিনটা সেতু। জামালপুর ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এর আধুনিক ভবন নির্মাণ কাজ সমাপ্তির পথে। জামালপুর শিক্ষা ভবন নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। স্থানীয় সরকার অধিদফতরের অধীনে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় গ্রামীণ সড়কের উন্নয়ন, ব্রিজ কালভার্টসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবনসহ অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার অব্যাবহিত পরে বিগত ৪০ বছরে জামালপুর জেলায় যে উন্নয়ন হয়নি সেই উন্নয়ন হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের গত দুই মেয়াদের মাত্র ১০ বছরে। একটির পর একটি উন্নয়ন কাজ দৃশ্যমান হতে চলেছে। যেসব প্রকল্পের কাজ এখনও চলমান রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়িত হলে জামালপুর জেলা হবে দেশের অন্যতম একটি উন্নত সমৃদ্ধশালী মডেল জেলা। যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়াঙ্গন, বিনোদনসহ এমন কোন সেক্টর নেই যেখানটায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এসব উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদন্যতায় এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং উদ্যোগ-তৎপরতায়। যেসব প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে- সেগুলো বাস্তবায়ন হলে রাজধানী ঢাকার অদূরে জামালপুর হবে একটি উপ-রাজধানী। একইসঙ্গে লাখো মানুষের আত্ম-কর্মসংস্থার সুযোগ সৃষ্টি হবে। পশ্চাতপদ জামালপুর জেলা হবে উন্নত সমৃদ্ধ এবং অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র।