ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

কবর সরানোর দাবি শেখ সেলিমের

চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার লাশ নেই

প্রকাশিত: ২২:২০, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার লাশ নেই

সংসদ রিপোর্টার ॥ চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের লাশ থাকা-না থাকা নিয়ে বৃহস্পতিবার সংসদে আবারও তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির এমপিরা। বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ জাতীয় আর্কাইভস বিল, ২০২১’ বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হয়। বিএনপির সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন প্রথম ইস্যুটি তুললে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জিয়ার লাশ থাকার বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানের প্রস্তাব দেন। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম ১৯৮১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে জাতীয় সংসদে জিয়ার লাশ নিয়ে তাঁর চ্যালেঞ্জ দিয়ে প্রদত্ত বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, সেখানে কোন লাশ নেই তা ৪০ বছর আগেই প্রমাণিত। একটি বাক্স রয়েছে। লুইকানের নক্সা বজায় রাখতে তিনি সেটা সরিয়ে ফেলার দাবি তোলেন। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, লাশ থাকলে তাঁর স্ত্রী সন্তানকে দেখানো হয়নি কেন? তখন ক্ষমতায় থেকেও বিএনপি লাশ থাকার প্রমাণ দিতে পারেনি। যদি লাশ থেকে থাকে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রমাণ দিতে হবে। ভবিষ্যতে সংসদে লাশ নিয়ে কোন কথা না হয় সেই বিষয়ে তিনি ব্যবস্থা নিতে স্পীকারের কাছে দাবি জানান। বিএনপিকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, দুইনম্বর রাজনীতি বহু করছেন। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের চিনেছেন। আর দুইনম্বর রাজনীতি কইরেন না। জিয়াউর রহমান যে অপকর্ম করেছেন তার পরিণতি দেখেন আপনাদের কী হয়। লাশ নিয়ে যেন কথা বলার সুযোগ না দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এই সদস্য বলেন, আজ ৪০ বছর পর লাশ নিয়ে লাফালাফি করা হচ্ছে। সংসদ ভবন এলাকায় জিয়াউর রহমানের লাশ রয়েছে বিএনপির এমপিরা তা সংসদে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেখানে যে জিয়াউর রহমানের লাশ নেই, সেটা ৪০ বছর আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর তার লাশ পরিবারের কেউ দেখেনি। খালেদা জিয়া দেখেননি। তারেক জিয়া লাশ দেখার জন্য কান্নাকাটিও করেছিল। শাহ আজিজ একটি চালাকি করেছিল ‘লাশ পাওয়া যাক না যাক একটা বাক্স পাঠিয়ে দাও’। সেই বাক্স পাঠানো হয়েছিল। জনমনে সন্দেহ ছিল কিসের জানাজা করছি। শুধু বাক্স? নাকি ওখানে জিয়াউর রহমান আছে? বিষয়টি নিয়ে তাঁর সংসদে দেয়া বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে শেখ সেলিম বলেন, ২০ জুন ১৯৮১ সালে আমি সংসদের নতুন সদস্য। জিয়াউর রহমান তখন মারা গেছেন। বিএনপি তখন ক্ষমতায়। সংসদে আমি সরকারের কাছে এটা জানতে চেয়েছিলাম। এটা সংসদের প্রসিডিংসেও আছে। আমি সেদিন বলেছিলাম আপনারা প্রমাণ করেন। ওই বাক্সে কোন লাশ আছে কী না জনমনের সন্দেহের কথা সেদিন সংসদে বলেছিলাম। আমি দুদিনের মধ্যে লাশের ছবি ছাপিয়ে জনমনের সন্দেহ দূর করতে বলেছিলাম। আর না পারলে জনমনের সন্দেহই প্রমাণিত হবে। আজ ৪০ বছরেও একখানা ছবি দেখাতে পারেননি। প্রমাণই করতে পারেননি। একখানা বাক্স দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। একটা বাক্স এনে বলেছেন জিয়াউর রহমানের লাশ। এই বিভ্রান্ত দূর হয়ে গেছে। ওখানে যে বাক্সটা আছে তা সরিয়ে লুইকানের নক্সা বাস্তবায়ন করতে হবে। স্পীকারকে উদ্দেশ করে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, সেখানে বাক্সটা যদি থাকে তা সরিয়ে দেন। জিয়ার লাশ জায়েজ করার জন্য তিন বড় রাজাকারকে সংসদ ভবন এলাকায় কবর দেয়া হয়েছে। তাদের করবও সেখান থেকে সরিয়ে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হবে। মানুষ এসব বিভ্রান্তি মেনে নেবে না। বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, সংসদে কোন বক্তৃতা দেয়ার ইস্যু পেলেই জিয়াউর রহমানের লাশ। এখানে লাশ আছে প্রমাণ করেন। এক মাস সময় দিলাম। ওই সময় সেনাপ্রধান এরশাদ সাহেবও লাশ দেখেননি। তাহলে কী দিয়ে প্রমাণ করবেন? লাশ নিয়ে আর রাজনীতি করিয়েন না। ওখানে কোন লাশ নেই। কিছুই নেই। একটি বাক্স মাটি দিয়েছে। ক্ষমতায় থেকেও তারা প্রমাণ করতে পারেনি। একটি বাক্সের জানাজা করছে। বিলটি বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবে আলোচনাকালে বিএনপির সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমানের লাশ সেখানে (চন্দ্রিমা উদ্যান) আছে কি নাই, সেটা বড় বিষয় নয়। সেখানে যে লাশ নাই, তা আপনারা (আওয়ামী লীগ) কিভাবে জানলেন? এত বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। এটা নিয়ে আগে কথা বলেন নাই কেন? এখন কেন বলছেন? জবাবে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, সংসদ ভবন নিয়ে লুই কানের যে নক্সা সেখানে কোথায় রয়েছে যে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ দাফন করতে হবে। সেখানে লাশ আছে কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেগম জিয়া স্বামী মনে করে কাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান। তাঁরই উচিত এই প্রশ্ন করা ওনার স্বামীর লাশ সেখানে আছে কিনা? বিজ্ঞনভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে তাঁরই নির্ণয় উচিত। আপনারা (বিএনপি) দলের নেতা ভেবে কাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন? ওখানে কি কারো মৃতদেহ আছে? নাকি অন্য কারো মৃতদেহ আছে। একজন সাংসদ বলেছেন, সঠিক ইতিহাস আসতে নাকি শতবছর লাগে। মৃত্যুর ৪০ বছর পরে সঠিক ইতিহাস বের হলে সমস্যা কোথায়? জিয়াউর রহমানের লাশ আছে কি নাই- এটা বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণের ব্যবস্থা আছে। আপনারা (বিএনপি) নিরপেক্ষ একটা কমিটি করেন। সরকার সহযোগিতা করবে। সত্য উদঘাটনে ভয়ের কি আছে? বিএনপির দলীয় সংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ তাঁর বক্তব্যে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কারো যদি অপমৃত্যু হয়, তাহলে তার ময়নাতদন্ত লাগে। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। সামরিক আদালতে বিচারও হয়েছে। এটা অসত্য কিছু নয়। আজকে জেনারেল এরশাদ বেঁচে থাকলে তিনি লজ্জা পেতেন, লজ্জা পেয়ে মুখ ডাকতেন।
×