ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঘ্রাণ পাচ্ছেন তো? বেলি ফুল ফুটেছে

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

ঘ্রাণ পাচ্ছেন তো? বেলি ফুল ফুটেছে

মোরসালিন মিজান ॥ ঘ্রাণ পাচ্ছেন তো? বেলি ফুল ফুটেছে! গতকাল ফুটেছে এমন নয়। বেশ কিছুদিন ধরেই গাছভর্তি ফুল। এখন ফুলটির মৌসুম। বেলি অতি পরিচিত। চেনা। তবে ঘ্রাণটা সবসময়ই নতুন। তাজা। কাঁচা ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ চৈতন্যে অদ্ভুত এক দোলা দিয়ে যায়। ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরম। ঘামে ভেজা শরীর। এর বিপরীতে প্রকৃতির অকৃত্রিম দান বেলি। দূর থেকে ভেসে আসা মিষ্টি ঘ্রাণ বলে দেয়, আশপাশে কোথাও বেলি ফুটে আছে। বেলি শুধু ফুল নয়, মালার জন্যও বিখ্যাত। সুই সুতোয় একের পর এক ফুল গেঁথে নিয়ে সুন্দর মালা তৈরি করা যায়। বহুকাল ধরে তৈরি করা হচ্ছে এ মালা। উচ্ছ¡ল তরুণীরা বেলি ফুলের মালা যতœ করে খোঁপায় পেঁচিয়ে নেন। হাতে চুরির মতো পরেন। এর পর যেদিকে তারা হেঁটে যান, সেদিকেই ছড়িয়ে পরে বেলির সুবাস। বিয়ে গায়ে হলুদ বা এ জাতীয় অনুষ্ঠানে বেলি ফুলের মালা না হলে যেন চলেই না। বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় সেই গানটির কথা স্মরণ করা যেতে পারে, যেখানে বলা হচ্ছে, ‘বেলি ফুলের মালা পরে এক প্রেমিক প্রিয়াকে ঘরে তুলেছে/যৌতুক টাকাকড়ি পায়ে দলেছে...।’ একদম তা-ই। যৌতুক টাকাকড়ির মতো পচা দুর্গন্ধযুক্ত কুপ্রথার বিপরীতে ভালবাসার জয়গান করে সুগন্ধি বেলি। মিষ্টি ঘ্রাণ পেতে ফুলটি দিয়ে ঘরও সাজানো হয়। রাজধানী ঢাকার রাস্তায়, ফুটপাথে এখন বিক্রি হচ্ছে বেলি ফুলের মালা। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা সরু কাঠিতে পাশাপাশি অনেক মালা ঝুলিয়ে নিয়ে গাড়ির পেছনে ছুটছে। বিশেষ করে পার্ক বা ফুটপাথে কোন জুটি পাওয়া গেলেই হলো, ওরা তাদের পিছু নেয়। নিজ থেকে বেলি খুঁজে নেয়ার লোকও অনেক আছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে অমূল্য এ ফুল সামান্য দামে বিক্রি হয়। কেন হয়, কে বলবে? শনিবার মানিক মিয়া এভিনিউতে বেলি ফুলের মালা বিক্রি করছিল সুমি নামের এক কিশোরী। সে একটি মালার দাম প্রথমে চাইল ১০ টাকা। পরে বলল, ‘সব নিয়া যান। পাঁচটা আছে। ২০ টেকা দিয়েন।’ মালা কিনে কাকে উপহার দিতে হবে তা-ও সে বলে দিচ্ছিল! এর আগের দিন শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মালা তৈরির কাজ করছিলেন কয়েক প্রবীণ নারী। সামনে স্ত‚পাকারে রাখা ফুল থেকে কী সুন্দর ঘ্রাণ আসছিল! ঘ্রাণ নিতে নিতেই চলছিল মালা তৈরির কাজ। দুই আঙ্গুলে ধরা সুইয়ে ফুল গাঁথতে গাঁথতে হাজেরা নামের এক নারী বলছিলেন, ‘ফুলের থাইক্যা মালার দাম, খুব বেশি না, তাও তো বেশি। এই কারণেই কম দামে ফুল কিইন্যা মালা বানাই। এসব মালা পরে তাদেরই ছেলে-মেয়ে বা নাতি-নাতনিদের হাতে বিক্রির জন্য তুলে দেন বলে জানান তিনি।’ উদ্যানে বেড়াতে আসা কোন কোন তরুণীদের খোঁপায় ঠিক দেখা গেল বেলি ফুলের মালা। প্রসঙ্গ তুলতেই সায়মা নামের এক তরুণী বলছিলেন, আজকে আমার জন্মদিন। অনেকদিন পর তাই একটু সেজেছি। তবে বেলি ফুলের মালা খুঁজছিলাম মনে মনে। উদ্যানে এসে পেয়ে গেছি। নিজের টাকায় মালা কিনেছেন জানিয়ে তিনি বলতে ভুল করলেন না যে, প্রেমিক পুরুষের কাছ থেকে এ মালা পেলে তিনি বেশি খুশি হতেন! বেলি ফুল, হ্যাঁ, এমনই এক ফুল। ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম জেসমিনাম সামব্যাক। এটি মূলত পাহাড়ী উদ্ভিদ হিমালয় অঞ্চলে বিশেষ চোখে পড়ে। আদি ভূমি ভারতীয় উপমহাদেশ। গুল্মজাতীয় গাছ ওরের দিকে খুব একটা বাড়ে না। ১ মিটারের মতো উঁচু হয়। ছোট-খাটো ঝোপঝাড়ের মতো দেখায়। কাÐ সরু এবং দুর্বল ধরনের হয়ে থাকে। কিছুটা লতার মতো। গাছের পাতা ছোট এবং গাঢ় সবুজ। ঘন পাতার মাঝে ছোট ছোট ফুল হয়। থোকা থোকা ফুলের পাপড়ি সুবিন্যস্ত। বেলির হাসির শুরুটা সন্ধ্যায়। এ সময় ফুল ফোটে। পরদিন দুপুরে ঝরে যায়। মাঝখানের সময়টুকু মিষ্টি ঘ্রাণে ভরিয়ে রাখে । উদ্ভিদবিদদের মতে, দেশে সাধারণত চার জাতের বেলি হয়। এগুলোর একটি রাই বেলি। এই গাছ দেড় থেকে দু’হাত লম্বা হয়। ফুল ছোট। পাপড়ি সুসজ্জিত হয়। ঘ্রাণ তীব্র। আরেক জাত খয়ে বেলি ছোট গাছ ধরনের। প্রচুর ফুল ফোটে। এটিও সুগন্ধি খুব। তৃতীয় জাত মতিয়া বেলি। এটি আকার বড় হয়। পাপড়ি সংখ্যাও বেশি। থোকায় থোকায় ফুল ধরে। আর যে জাতটি, ভরিয়া বেলি নাম। বেলি ফুলের একে রাজা বলা হয়ে থাকে। ফুলের ওজন এক ভরির মতো হয়ে থাকে। তবে বেলি বেলায় জাতপাত না খুঁজলেও চলে, ঘ্রাণটাই শেষ কথা। পাচ্ছেন তো ঘ্রাণ?
×