
ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য ভিসা বন্ধ বা সীমিত করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক দেশে। বেশ কিছু গন্তব্যে আবার ভিসা চালু থাকলেও, তা সীমিত করা হয়েছে। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত টুরিস্ট ভিসার অপব্যবহারের কারণে বাংলাদেশ নেতিবাচকভাবে চিত্রিত হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। সংকট কাটাতে তারা সরকারের প্রতি উদ্যোগী ও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ভিয়েতনাম, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুন্দর একটি দেশ, বাংলাদেশী পর্যটকদের কাছে এক সময় কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য ছিল। অনেক বাংলাদেশী সেখানে গিয়ে পার্শ্ববর্তী লাউস ও কম্বোডিয়া ঘুরে আসতেন। তবে এ বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেয় ভিয়েতনাম। কারণ, টুরিস্ট ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও অনেকেই ফেরেননি, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সেখানে কাজ করছেন এবং কেউ অবৈধভাবে অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
পূর্ববর্তী বছরগুলোর মতো বাংলাদেশের জন্য জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই)। তবে গত জুলাই থেকে বাংলাদেশীদের জন্য সেখানে টুরিস্ট ভিসা বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে দিনে ৩০ থেকে ৫০টি ভিসা ইস্যু হলেও সাধারণ পর্যটকরা তেমন সুফল পাচ্ছেন না। জুলাই থেকেই ভারতের ভিসাও বন্ধ, ফলে থাইল্যান্ড ছিল বাংলাদেশী পর্যটকদের চিকিৎসা ও ভ্রমণের জন্য মূল গন্তব্য। কিন্তু এখন সেই ভিসা পেতে কমপক্ষে ৪৫ দিন সময় লাগে। মে মাস থেকে বেশ কিছু গন্তব্যের ভিসা পরবর্তী সময়ে বন্ধ হতে শুরু করেছে, বিশেষ করে ভারত, দুবাই ও ভিয়েতনাম, যা বাংলাদেশের পর্যটকদের জন্য সংকট সৃষ্টি করেছে।
থাইল্যান্ড ৫ মে থেকে এমন কোনো কারণ ছাড়াই বাংলাদেশী পর্যটকদের ভিসা আবেদন রিজেক্ট করছে, এমনকি যারা পূর্বে আমেরিকা, কানাডা বা ইউরোপের মতো দেশগুলোতে ভ্রমণ করেছেন, তাদেরও ভিসা আবেদন বাতিল করা হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়া, যা আগে অনারাইভাল ভিসা প্রদান করতো, এখন সেখানে ভিসা পেতে প্রায় দুই মাস সময় লাগছে। একই অবস্থা ফিলিপাইনেরও; সেখানে আগে ১০ দিনে ভিসা পাওয়া গেলেও এখন তা অন্তত দেড় মাস লাগছে।
এছাড়া, উজবেকিস্তানও, যা ইলেকট্রনিক ভিসা ইস্যু করতো, আগস্ট থেকে বাংলাদেশের নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। সব মিলিয়ে, বাংলাদেশীদের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যটন গন্তব্যগুলো ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। যেসব দেশ এখনো ভিসা প্রদান করছে, সেগুলোতে সময়সাপেক্ষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যা দেশের পর্যটন ব্যবসার জন্য উদ্বেগজনক।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অবৈধ অভিবাসন (ইলিগাল মাইগ্রেশন) বাংলাদেশের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কম্বোডিয়া, যেখানে অনেক বাংলাদেশী টুরিস্ট ভিসা নিয়ে যায়, সেখানে তারা অবৈধভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা দেশটির ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য রয়েছে। এসব কার্যকলাপ ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে হচ্ছে।
এখন সরকারের উচিত কঠোর হাতে অবৈধ মাইগ্রেশন নিয়ন্ত্রণ করা, কারণ এর প্রভাবই মূলত বাংলাদেশের পর্যটন খাতে পড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি সরকার কঠোর উদ্যোগ না নেয়, তাহলে পর্যটন ব্যবসা ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে।
মারিয়া