
সংসদ রিপোর্টার ॥ ইসলামী ওয়াজ মাহফিলে সরকার বাধা দিচ্ছে এমন মন্তব্য করায় জাতীয় সংসদে রীতিমত তোপের মুখে পড়তে হয় বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদকে। জামায়াতের ইন্ধনে এমন মিথ্যা ও উস্কানীমূলক বক্তব্যে প্রদান করা হয়েছে দাবী করে তাঁকে তুলোধুনো করেন সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা। তাঁরা বলেন, ধর্মের নামে মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত এবং জামায়াতপন্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে কথা বলে বিএনপি সাম্প্রদায়িক উস্কানী সৃষ্টির চেষ্টা করছে। যারা প্রকৃত তাফসির মাহফিল বা ওরশ করছেন বা বিভিন্নস্থানে ইসলামী জলসা করছেন- তাদের বরং রাষ্ট্র ও সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা বিএনপি এমপি হারুনুর রশীদের বিভ্রান্তিকর ও আপত্তিকর বক্তব্যে সংসদের কার্যবিবরণী থেকে এক্সপাঞ্জের দাবী জানান।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে মাগরিবের নামাজের বিরতীর পর পয়েন্ট অব অর্ডারে সংবিধানে থাকা বিসমিল্লাহ এবং ওয়াজ মাহফিল নিয়ে কিছু মন্তব্য করলে অধিবেশনে কিছুটা উত্তাপ ছড়ায়। সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা এ তীব্র প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।
ফ্লোর নিয়ে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সংশোধিত সংবিধানের পূর্বে সর্বশক্তিমান আল্লাহ’র প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসী হবে যাবতীয় কাজের ভিত্তি, এটি নতুন সংশোধিত সংবিধান থেকে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম রাখা হয়েছে। সংবিধানের প্রস্তাবনায় পূর্বের বিষয়টি বিসমিল্লাহির রহমানের রহীম, সেটির পরিবর্তে সংযেজিত হয়েছে দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে, পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে। বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিমের প্রকৃত অর্থ সংযোজিত হওয়া উচিত। তিনি অভিযোগ করেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানরা তাদের সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে যাচ্ছে, অথচ আমরা যারা ইসলাম ধর্মের অনুসারী তারা তাফসির মাহফিল করতে গেলে নিষেধাজ্ঞা ও আপত্তি আসছে। এ সময় সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা নো নো বলে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।
জবাব দিতে উঠে সাবেক সরকার দলীয় চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, বাংলাদেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান সবাই সমানভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। দেশের সমস্ত জায়গায়, জেলা-উপজেলায়, ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যন্ত সমস্ত জায়গায় ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে, আল্লাহ-রাসূলের কথা বলা হচ্ছে। শুধুমাত্র জামায়াতী পন্থায় বিভ্রান্তিকর শিক্ষা-দিক্ষা যাতে মানুষ না নেয়, যাতে দেশটাকে জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিণত না করে- সেক্ষেত্রে আমরা বলে থাকি এটা যেন না হয়। কিন্তু ইসলামের কোন কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টির প্রশ্নই উঠে না। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ দেশটাকে আন্তর্জাতিকভাবে সারা বিশ্বে ইসলাম ধর্মটাকে জঙ্গী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। আমরা এ দেশটাকে কোনভাবেই জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিণত হতে দিতে চাই না। আমরা চাই সত্যিকারের ইসলাম, মহানবীর ইসলাম যাতে কার্যকর হয়। ইসলাম আছে, ইসলাম থাকবে, বাংলাদেশে চিরদিন মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা হবে।
সরকার দলীয় হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বিএনপির এমপি হারুনুর রশীদের কড়া সমালোচনা করে বলেন, সংবিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে পূর্বের ন্যায় বিএনপির এমপি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করলেন। তিনি বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিমের ব্যাখা হিসেবে অপব্যাখা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। এটা উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত এবং এটা বিএনপির চিরাচরিত একই রাজনীতি। নির্বাচনের সময় বিএনপি-জামায়াতরা ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিল- ধানের শীষে ভোট দিলে বেহেস্তের টিকিট পাওয়া যাবে, আর নৌকায় ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না, বৌ তালাক হয়ে যাবে! কোরআন-হাদিসের কোথায় এসব কথা বলা হয়েছে বা বাক্য নাজিল হয়েছে- সেই ব্যাখ্যা তারা দিতে পারে না।
ধর্ম নিয়ে বিএনপির অপরাজনীতির কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপির সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। সেই বিএনপিকে ধানের শীষে ভোট দিলে বেহেস্তের টিকিট পাওয়া যাবে, এমন কোন হাদিস রাসুল দেন নাই। সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকার মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই এমন মিথ্যাচার ও উস্কানীমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সারাদেশে ইছালে সওয়াব তাফসির মাহফিল ঐতিহ্য এবং সর্বত্র অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমর বিএনপির আমলের মতো ওরশে বোমা হামলা করতে দেইনি। আমরা হযরত শাহজালালের মাজারে বোমা হামলা করতে দেয়নি। আমরা ইসলামকে রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ইসলাম ও ধর্মের নামে যারা বিভিন্ন ফতোয়া দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন- তাদের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্য এবং গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে কথা বলছেন। তিনি বিএনপি এমপি হারুনের উস্কানীমূলক বক্তব্য এক্সপাঞ্জের দাবী জানান।