
দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর অবশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালে ধরা পড়লেন বগুড়ার আলোচিত ও সমালোচিত সাবেক যুবলীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল মতিন সরকার। শনিবার (২১ জুন) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে বগুড়া জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
মতিন সরকার বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর এলাকার মজিবর রহমান সরকারের পুত্র। একসময় তিনি বগুড়া শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তবে বর্তমানে তার পরিচিতি অপরাধজগতের একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে।
মতিন সরকারের বিরুদ্ধে মামলার ফিরিস্তি: হত্যা মামলা: অন্তত ১২টি হত্যা মামলায় তার নাম রয়েছে।
অস্ত্র ও মাদক মামলা: একাধিক অস্ত্র মামলায় তিনি পলাতক ও সাজাপ্রাপ্ত।
দুদক মামলা (২০১৮): ২ কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ১ কোটি ৪২ লাখ টাকার সম্পদ গোপনের অভিযোগে ১৩ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানায় দণ্ডিত হয়ে পলাতক জীবন যাপন করছিলেন তিনি।
আদালত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাষায়, "আসামি মতিন সরকারের পিসিআর খুবই খারাপ, তিনি জনগণের জন্য এক মূর্তিয়মান আতঙ্ক।"
‘তুফান কাণ্ড গোটা দেশে ক্ষোভের জন্ম: ২০১৭ সালে বগুড়ায় ঘটে যাওয়া ‘তুফান কাণ্ড’ দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। মতিন সরকারের ছোট ভাই তুফান সরকারের বিরুদ্ধে এক কিশোরীকে ধর্ষণ এবং তার মায়ের মাথা ন্যাড়া করার অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় মতিন সরকারের পরোক্ষ জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। ঘটনা জনরোষের মুখে পড়ে এবং দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
সরকার ভাইরা’: একটি ছায়াশাসন গোষ্ঠীর উত্থান ও পতন
আব্দুল মতিন সরকারঃ সাবেক কাউন্সিলর, যুবলীগ নেতা।
আত্মগোপনে থেকেও ঢাকায় নতুন পরিচয়ে জীবনযাপন শুরু করেছিলেন তিনি। অপরাধমূলক রাজনীতির কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তি।
তুফান সরকারঃ শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক। ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, দুর্নীতি ও ভূমি দখলের অন্তত ২১টি মামলার আসামি। বর্তমানে কারাগারে।
সোহাগ সরকার ও ঝুমুর সরকারঃ কারাগারে কিংবা বাইরে যেখানেই থাকন না কেন, তাদের ইশারায় চলতো বগুড়ার সকল অপরাধ। আওয়ামীলীগের ছত্রছায়ায় থেকেই অপরাধচক্র পরিচালনার কাজ করতেন তারা। জমি দখল, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার।
বর্তমানে তারাও বিচারাধীন অবস্থায় আটক।
জনমত ও রাজনৈতিক প্রশ্ন: স্থানীয় জনসাধারণের প্রশ্ন এত বছর তারা অধরা রইল কীভাবে? অনেকে মনে করেন, রাজনৈতিক আশ্রয় ও দুর্বল প্রশাসনিক কাঠামোর কারণে মতিন সরকার ও তার ভাইয়েরা এতদিন আইনের হাত থেকে রেহাই পেয়ে গেছেন। এই গ্রেফতার কি শুধুই আইনি সফলতা, নাকি বড় কোনও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ইঙ্গিত?
বগুড়া ডিবি পুলিশের ওসি ইকবাল বাহার জানান, “মতিন সরকার ঢাকায় একটি ভাড়া বাসায় পরিবারসহ আত্মগোপনে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, মাদকসহ একাধিক মামলায় কার্যক্রম চলছে। বগুড়ায় আনার পর তাকে দ্রুত আদালতে সোপর্দ করা হবে।”
রিকশা চালক পিতা মজিবর রহমান সরকারের পুত্ররা প্রথমে মাদক ব্যবসা করে আওয়ামী রাজনৈতিক আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে এই পরিবারের সবাই নাম লিখিয়েছেন 'অপরাধজগতের কুখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে। মতিন সরকারের গ্রেফতার শুধু একটি ব্যক্তির পতন নয় এটি একটি দীর্ঘ অপরাধ সাম্রাজ্যের ভাঙনের সূচনা কি না, তা সময়ই বলে দেবে।
আঁখি