ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

দেশের প্রথম হাইব্রিড বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে ফেনীতে

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ৮ অক্টোবর ২০১৯

দেশের প্রথম হাইব্রিড বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে ফেনীতে

রশিদ মামুন ॥ নবায়নযোগ্য জ¦ালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনে দেশের প্রথম হাইব্রিড প্রকল্প হচ্ছে ফেনীতে। রাষ্ট্রীয় কোম্পানি ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি (ইজিসিবি) ২০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে। বায়ু ও সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে এখানে বিদ্যুত উৎপাদন হবে। এর আগে বিদ্যুত উৎপাদনে আর কোন হাইব্রিড প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে, সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুত উৎপাদনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতদিন দেশের বেসরকারী খাতকে উৎসাহিত করা হলেও তারা সৌরবিদ্যুত উৎপাদনে খুব বেশি সফল হতে পারেনি। এখন সরকারী কোম্পানিগুলোকে বিদ্যুত উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোম্পানিগুলোকে মোট উৎপাদনের ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন করতে হবে। ইজিসিবি সূত্র বলছে, ফেনির সোনাগাজীতে বিদ্যুত কেন্দ্রটি স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে সরকারের অনুমোদনের পর ফেনীর সোনাগাজীতে জমি অধিগ্রহণ এবং উইন্ড ম্যাপিং এবং সোলারের জন্য সম্ভাব্যতা জরিপ শেষ করেছে ইজিসিবি। ইজিসিবি যৌথভাবে কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য বায়ু এবং সোলারে যৌথ উদ্যোগে কেন্দ্র নির্মাণের জন্য আগ্রহপত্র চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়। আগ্রহীদের মধ্যে সৌরবিদ্যুত যৌথ অংশিদারিত্বে নির্মাণ করার জন্য জাপানের কোম্পানি মারুবিনি এবং বায়ুবিদ্যুতে চীনা কোম্পানি এনভিশনকে চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হয়েছে। এখন এই দুই কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করা হবে। সমঝোতা স্মারক সই করার পর যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন করা হবে। এনভিশন ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এশিয়া, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে এনভিশন বায়ুবিদ্যুত উৎপাদন করছে। কোম্পানিটি বাংলাদেশে এবারই প্রথম বায়ুবিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণ করছে। অন্যদিকে মারুবিনি জাপানের কোম্পানি। কোম্পানিটি বিদ্যুত উৎপাদনে কয়লা এবং গ্যাসে কেন্দ্র নির্মাণ করার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতেও বিদ্যুত উৎপাদন করছে। ইজিসিবির এক কর্মকর্তা বলেন, সোলার এবং বায়ুতে সম্ভাব্যতা জরিপ শেষ হয়েছে। এখানে বায়ুর গড় গতিবেগ পাওয়া গেছে পাঁচ দশমিক ২৫ মিটার/সেকেন্ড; যা বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট। তবে ছয় থেকে সাড়ে ছয় মিটার/সেকেন্ড গতিবেগ পেলে তা বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য খুব ভাল বিবেচনা করা হয় বলে জানান তিনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের বদলে নবায়নযোগ্য জ¦ালানির দিতে ঝুঁকছে। এতে দিনেরবেলা সোলার এবং রাতেরবেলা বায়ুবিদ্যুত উৎপাদন করে তারা চাহিদা মেটাচ্ছে। তবে কোন দেশের জলসম্পদ থাকলে তা দেশটির জন্য বিশেষ আশীর্বাদ বিবেচনা করা হচ্ছে। দেশে যেহেতু জলবিদ্যুতের কোন উৎস নেই তাই এখানে সৌর এবং বায়ুর ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যে উইন্ড ম্যাপিং করা হয়েছে সেখানে বলা হচ্ছে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ব্যাপকভাবে বায়ুবিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। কোন কোন দেশ সমুদ্রের ১০ কিলোমিটার েিভতরে উইন্ড টারবাইন বসিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করে সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে এই বিদ্যুত স্থলভাগে নিয়ে আসছে। আমেরিকার ন্যাশনাল রিনিউয়েবেল এনার্জি ল্যাবরেটরি (এনআরইএল) দেশের বায়ু প্রবাহের বছরব্যাপী পর্যবেক্ষণে বলছে- বাংলাদেশের নয়টি এলাকার বাতাসের গড় গতিবেগ ৫ থেকে ৬ মিটার/সেকেন্ড; বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য যা আদর্শ। সাধারণত ২ দশমিক ৩ থেকে ২ দশমিক ৫ মিটার/সেকেন্ড হলেই বায়ুবিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব সেক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম বেশি পড়ে। কিন্তু ৫ থেকে ৬ মিটার/সেকেন্ড বাতাসের গতিবেগ হলে বিদ্যুত উৎপাদন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এককভাবে সোলার বিদ্যুত উৎপাদন করলে গ্রিড ঝুঁকিতে পড়তে পারে। কারণ দিনের নির্দিষ্ট সময় পর সোলার বিদ্যুতের উৎপাদন কমতে শুরু করে। তখন গ্রিড স্থিতিশীল রাখতে বিদ্যুত সরবরাহ বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে হাইব্রিড প্রকল্প অর্থাৎ সোলারের সঙ্গে বায়ুবিদ্যুত উৎপাদন করা হলে সোলারে উৎপাদন কমে গেলে বায়ু থেকে বিদ্যুত পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে গ্রিড ঝুঁকি মুক্ত থাকবে।
×