ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশ সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের তীব্র প্রতিবাদ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮

পুলিশ সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের তীব্র প্রতিবাদ

ড. কামাল হোসেন কর্তৃক বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে ‘জানোয়ার লাঠিয়াল বাহিনী’ হিসেবে আখ্যায়িত করার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশন। পুলিশের প্রতিটি সদস্যের মধ্যে ড. কামাল হোসেন সম্পর্কে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হযেছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের ক্ষেত্রে প্রভাবিত করতে এবং প্রতিবন্ধকতা তৈরির অপচেষ্টা চালানোর পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ড. কামাল নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে বাংলাদেশ পুলিশকে জানোয়ার লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বলে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে এক পাঠানো এক প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে। পুলিশ সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডিএমপি মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক উপ-কমিশনার প্রলয় কুমার জোয়ারদার স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবাদ লিপিতে আরও বলা হয়েছে, গত ২৫ ডিসেম্বর দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সঙ্গে নির্বাচন ভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের এক পূর্বনির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ‘আপনি ইচ্ছা করলে জানোয়ার-লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপনার এই লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনী আমাদের মিটিং-মিছিল কিছুই করতে দিচ্ছে না।’ বলে বক্তব্য দেন। ড. কামাল হোসেনের মতো ব্যক্তির কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। এ ধরনের আপত্তিকর, অবিবেচনাপ্রসূত মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের মতো জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা বিধানে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবার মতো অপপ্রয়াস নেয়া হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের সূচনা করেছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্যরা। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম প্রহরে প্রথম যুদ্ধে আত্মদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূূষিত হয়েছে। জাতির যে কোন ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা প্রাণ বিলিয়ে দিতেও কখনও পিছপা হয়নি। তাই ড. কামাল হোসেনের মতো মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠকের নিকট থেকে এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য জাতির মনে ভিন্ন চিন্তার উদ্রেক করে। বাংলাদেশ পুলিশের দুই লাখ সদস্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দমন ও উদঘাটনে বদ্ধপরিকর। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও নিরলস পরিশ্রমের ফসল হিসেবে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে রয়েছে। সৃষ্ট নিরাপত্তা বলয়ে নিয়মিত সংঘটিত হচ্ছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সামিট, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। জঙ্গী কার্যক্রম, সন্ত্রাসবাদ, সংঘবদ্ধ অপরাধ সুচারুরূপে মোকাবেলা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে দেশব্যাপী জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, নাশকতা, অন্তর্ঘাতমূলক অপতৎপরতা প্রতিরোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ২৭ জন সদস্য আত্মাহুতি দিয়েছেন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ নিরাপদ পরিবেশে ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের ক্ষেত্রে সর্বত্র আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব বাংলাদেশ পুলিশের ওপর অর্পিত হয়েছে। নির্বিঘেœ ও উৎসবমুখর পরিবেশে যাতে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেজন্য বাংলাদেশ পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা, নির্বাচন সামগ্রী প্রেরণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম নির্বিঘেœ সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার সদস্য দেশব্যাপী নিয়োজিত হয়েছেন। এমন মুহূর্তে বাংলাদেশ পুলিশকে ‘জানোয়ার লাঠিয়াল বাহিনী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের ক্ষেত্রে প্রভাবিত করা ও প্রতিবন্ধকতা তৈরির অপচেষ্টা মাত্র। বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য সর্বোচ্চ ত্যাগ, পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর। তাই অনাকাক্সিক্ষত বক্তব্যের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবলে আঘাত হেনে বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালনে বিঘœ সৃষ্টির যে কোন ধরনের অপতৎপরতা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে। তার এই বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, আপত্তিকর ও অবিবেচনাপ্রসূত। বিজ্ঞপ্তি।
×