ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ছড়িয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা, ধরা পড়ল দুই শতাধিক

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ছড়িয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা, ধরা পড়ল দুই শতাধিক

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সেনা বর্বরতায় টিকতে না পেরে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা বিভিন্ন পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যাচ্ছে। সমুদ্র, সড়ক, নদী পথসহ দুর্গম পাহাড়ী এলাকা দিয়ে এরা বিভিন্ন অজানা গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। প্রশাসন চেকপোস্ট স্থাপন করেছে সড়ক-মহাসড়কে। কিন্তু অন্যান্য সকল পথ উন্মুক্ত রয়েছে। ফলে একশ্রেণীর দালালদের সহায়তায় এরা ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ করে নিচ্ছে। বিশ্ব চাপের মুখে প্রত্যাবর্তন ইস্যুটি কার্যকরে দীর্ঘ সময় যে নেবে তা অনেকটা নিশ্চিত। এছাড়া আদৌ তা বাস্তবায়ন হবে কিনা এবং হলেও শত লোক পালিয়ে এসেছে সবাই ফিরে যেতে পারবে কিনা তা নিয়ে সকল মহলে সংশয় রয়েছে। কেননা, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের মনোভাবে এখন পর্যন্ত কোন পরিবর্তন লক্ষণীয় নয়। এনএলডি নেত্রী আউং সান সুচি এবং সে দেশের সেনাবাহিনীপ্রধান রোহিঙ্গাদের বাঙালী আখ্যা দিয়ে অনেকটা অটল অবস্থানেই রয়েছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মিয়ানমারের ভাইস প্রেসিডেন্টের কণ্ঠেও সে দেশের সামরিক জান্তার বার্তাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে মিয়ানমার এখন রোহিঙ্গা বিষয়ে ব্যাপকভাবে নিন্দিত। কিন্তু তারা তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থ কায়েমের লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে চলেছে বলে সুনির্দিষ্টভাবে প্রতীয়মান। এদিকে, রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের হত্যা, বাড়িঘর জ্বালাও-পোড়াও এখনও অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর নতুন করে মংডু ও তমব্রু এলাকার ৫টি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে আরও কিছু নতুন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তবে ইতোপূর্বেকার তুলনায় রোহিঙ্গা আগমন বহুলাংশে কমে এসেছে। অনুপ্রবেশকালে বৃহস্পতিবার রাতে একটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে এক নারীর লাশ ভেসে এসেছে বালুখালীর তেলিপাড়া এলাকায়। এছাড়া আরও এক মহিলার লাশ পাওয়া গেছে শাহপরীর দ্বীপসংলগ্ন উপকূলে। তবে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যাচ্ছে। ছড়িয়ে পড়ার কাজে সহযোগিতায় ৫ শতাধিক দালাল চিহ্নিত করা হয়েছে। শুক্রবার কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন চেকপোস্টে ধরা পড়েছে দুই শতাধিক রোহিঙ্গা নরনারী ও শিশু। এদের বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘসহ বিশ্বের শক্তিশালী বহু দেশ এবং আন্তর্জাতিক বহু সংস্থার প্রবল চাপের মুখে মিয়ানমার সরকারের নড়াচড়া লক্ষণীয়। গণহত্যার মূল নায়ক সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অংহ্লাইং গত বৃহস্পতিবার রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করেছেন। তিনি সেখানে বলেছেন, যারা তাদের জাতি নয় তাদের গ্রহণ করা হবে না। তার এ বক্তব্যের পর শুক্রবার নতুন করে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে সীমান্তের ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে। অপরদিকে, লাখ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার পক্ষে সারাবিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণের পর মানবিক দিক বিবেচনা করে ব্যাপক সাড়া মিলছে। ফলে মিয়ানমারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ চাপ সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় এ দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তা ও নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করতে শুক্রবার থেকে সেনা সদস্যদের একটি দল প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে। এর পাশাপাশি পাসপোর্ট অধিদফতরের আওতায় বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন কাজও এগিয়ে চলেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার রোহিঙ্গা নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। কিন্তু সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার ও বান্দরবান অঞ্চলে আটকে রাখা যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত এরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। যাওয়ার পথে অনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটকা পড়ে উদ্ধারও হচ্ছে। ছড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া রোধে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক এবং কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্ট প্রতিষ্ঠা করে যানবাহনে তল্লাশি অভিযান চলছে। ওদিকে, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বসতি গড়ে তুলতে উখিয়ার বালুখালীতে যে ২ হাজার একর সরকারী জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেখানে বেসরকারী ও সাহায্য সংস্থার উদ্যোগে যে কার্যক্রম চলছে তা ধীরগতির। আজ শনিবার থেকে সেনা নিয়ন্ত্রণে এ কার্যক্রমের প্রাথমিক সূচনা হবে বলে জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে নিয়ে যাওয়ার ও সেখানে গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন ও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আশঙ্কা বুঝতে পেরে নড়েচড়ে বসেছে মিয়ানমার সরকার ও দেশটির সেনাবাহিনী। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ এবং মিয়ানমার অভ্যন্তরে জড়ো হয়ে থাকা উদ্বাস্তুদের নিজ নিজ ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন সেনাপ্রধান মিন অংহ্লাইং। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু শব্দ উল্লেখ করে তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। তবে গত ২৮ দিনে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রিত লাখ লাখ রোহিঙ্গার বিষয়ে সেনাপ্রধান কোন কিছু বলেননি। একদিকে রোহিঙ্গাদের স্ব স্ব বাড়ি ঘরে ফেরার জন্য সেনাপ্রধানের আহ্বান, অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করছে সেনা ও রাখাইন সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যরা। তারা গুলি করে রোহিঙ্গাদের হত্যার পাশাপাশি জ্বালাও-পোড়াও তা-ব চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার যখন রোহিঙ্গা মুসলমানরা জুমার নামাজে চলে যায় ঠিক বেলা দেড়টার দিকে দক্ষিণ মংডুর ফওখালীর রোহিঙ্গা গ্রাম পুতিপাড়ায় অগ্নিসংযোগ করে সেনাবাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যরা। এতে পুড়ে ছাই হয়ে যায় রোহিঙ্গা বসতবাড়িগুলো। ঘটনাস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে চালিপ্রাং থেকে ভিডিও ধারণ করে কয়েকজন রোহিঙ্গা যুবক। ফওখালী ছাড়াও বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর তমব্রু এলাকার তিনটি নতুন গ্রামে শুক্রবার দুপুরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়া সীমান্তের সে দেশের নোম্যান্সল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু গুলিও চালিয়েছে। এতে বেশকিছু রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হলেও শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃত্যুর কোন খবর পাওয়া যায়নি। অপরদিকে, বুচিদংয়ের স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন পল্লীর রোহিঙ্গাদের চাল, ডাল, আলুসহ বিভিন্ন পণ্য গ্রহণে বাধ্য করেছে। এছাড়া বিভিন্ন পয়েন্টে রোহিঙ্গাদের জড়ো করে যৎসামান্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণের চিত্র ভিডিও করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ধারণা করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ ভিড়িও চিত্র ছড়িয়ে দিয়ে মিয়ানমার সরকার জানান দিতে চাইবে যে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে সরকার অবস্থান নিয়েছে। মূলত, বিষয়টি একটি অপকৌশল মাত্র। কেননা, হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে বর্বরোচিত কায়দায় হত্যা এবং লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে দেশান্তরি হতে বাধ্য করার পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে তারা এ নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে, যাতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা যায়। ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, মংডু, বুচিদং ও রাচিদংয়ের পর এবার সেনাবাহিনী সিটওয়ের (আকিয়াব) দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বিশ্লেষকের আকিয়াবের পাথরকিল্লা তথা ম্রাউক নগরীর আশপাশের রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সেনা সমাগম হচ্ছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার সকালেও তমব্রু, শাহপরীর দ্বীপ, উনচিপ্রাং সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে কিছু কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। তারা বালুখালী, কুতুপালং ও রইক্ষ্যং পুঠিবনিয়া ক্যাম্পে আশ্রয়ের সন্ধানে ঢুকে পড়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সেনা কার্যক্রম শুরু ॥ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কার্যক্রম শুরু করেছে সেনাবাহিনী। শুক্রবার দুপুরের দিকে সেনা সদস্যরা ত্রাণ কার্যক্রমের দায়িত্ব নিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছেন। সেনা সদস্যরা প্রথমে বিক্ষিপ্তভাবে যত্রতত্র অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প অভ্যন্তরে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে। এছাড়াও ক্যাম্পগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য আজ শনিবার সকালে ক্যাম্পের (ব্লকভিত্তিক) রোহিঙ্গা মাঝিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন সেনাবাহিনীর মেজর পর্যায়ের কর্মকর্তারা। শুক্রবার দুপুরে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছেন সেনাবাহিনীর মেজর পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা। তারা কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ মোঃ রেজাউল করিমকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন ক্যাম্প নির্মাণের জন্য নির্দিষ্ট স্থানটি পরিদর্শন করেন। রোহিঙ্গা নারীর লাশ ভাসছে ॥ উখিয়ার বালুখালী তেলীপাড়া খালে শুক্রবার বিকেলে একটি অর্ধগলিত লাশ ভাসছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা। শুক্রবার দুপুরে নাফ নদী হয়ে জোয়ারের পানিতে তেলিপাড়া খালে ভেসে আসে এক অজ্ঞাত নারীর মরদেহ। এইচআইভি আক্রান্ত রোহিঙ্গা নারীর মৃত্যু ॥ মিয়ানমারে এইচআইভি রোগে আক্রান্ত এক রোহিঙ্গা নারী শুক্রবার কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছে। এছাড়া একই রোগে আক্রান্ত আরেক নারীর চিকিৎসা চলছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৪ জন নারী-পুরুষ এইচআইভি আক্রান্ত। ডায়রিয়াসহ রোগব্যাধি বাড়ছে ॥ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি বেড়েই চলেছে। সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে যে চিকিৎসা ব্যবস্থা চলছে তা নিতান্তই অপ্রতুল। প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গারা অনাহারে অর্ধাহারে দিনের পর দিন পাহাড় পর্বত দিয়ে পায়ে হেঁটে কোন মতে সীমান্ত পেরিয়ে তারা বাংলাদেশে এসেছে। অনেকে আগ্রহী, অনেকে নয় ॥ রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মাঝে অনেকে নিজ দেশে বাড়িঘরে ফিরে যেতে আগ্রহী। আবার অনেকে নতুন করে বর্বরতা নেমে আসতে পারে আশঙ্কায় এ দেশে থেকে যেতে আগ্রহী। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, রাখাইনে তাদের অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও সহায় সম্পদ রয়েছে। সেনা বর্বরতার চিত্র নিয়ে আতঙ্ক ॥ গত ২৫ আগস্ট রাত থেকে সশস্ত্র সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর গণহারে হত্যা ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার যে ঘটনা ঘটেছে সে চিত্র নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে ব্যাপক আতঙ্ক প্রোথিত হয়েছে। অনেকের চোখের সামনে সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে বর্বর কায়দায়। যুবতী ও নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছে যত্রতত্র। ছোট ছোট শিশুদেরও রেহাই দেয়া হয়নি। গলা কেটে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। আর সেনাবাহিনীর ব্রাশফায়ার চলেছে সার্বক্ষণিক। এর পাশাপাশি রাখাইন সন্ত্রাসীরা কিরিচ হাতে রোহিঙ্গাদের নির্মম কায়দায় প্রাণ হরণ করেছে। বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ॥ বিশেষ গুরুত্ব বিবেচনায় কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৫৩টি বৌদ্ধ বিহারে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে কেউ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে সে জন্য উখিয়ার প্রতিটি বিহারে পুলিশী নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান উখিয়া উপজেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক প্লাবন বড়ুয়া। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কিয়াত বিক্রি ॥ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার সময় সঙ্গে করে নিয়ে আসা মিয়ানমারের মুদ্রা কিয়াত বিক্রি চলছে আশ্রয় কেন্দ্রে। সীমান্তে এক শ্রেণীর চোরাচালানি বিপুল অঙ্কের কিয়াত কিনে নিচ্ছে স্বল্পমূল্যে। টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তে ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প-বস্তিতে মিয়ানমারের মুদ্রা ‘কিয়াত’-এর ছড়াছড়ি হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ এখনও নেয়া হয়নি। ৩টি মাইন বিস্ফোরণ ॥ আরাকানের রাজধানী সিটওয়েতে তথা আকিয়াবে পরিকল্পিতভাবে স্থল মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রোহিঙ্গাদের দায়ী করছে সেনা সদস্যরা। বৃহস্পতিবার জেলার মাম্ব্রা ইউনিয়নের হত্তিপাড়ায় এক নির্জন জায়গায় তিনটি স্থল মাইনের বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও এ ঘটনাকে ইস্যু করে রোহিঙ্গা নির্যাতনের পাঁয়তারা করছে সেনাবাহিনী। আর তাতে ইন্ধন দিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী রাখাইনরা।
×