ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঞ্জার জোনের ২৩ রুট

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২০ মার্চ ২০১৭

ডেঞ্জার জোনের ২৩ রুট

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ ডেঞ্জার জোন হিসেবে চিহ্নিত দক্ষিণাঞ্চলের ১৮ নদীর তিন হাজার কিলোমিটার নৌ-পথের ২৩ রুটে এমএল টাইপের লঞ্চসহ ছোট নৌযান চলাচল গত বুধবার থেকে নিষিদ্ধ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। নিষিদ্ধ এ নৌপথে বিআইডব্লিউটিসির সি ট্রাকসহ বে-ক্রসিং ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ চলাচলের কথা থাকলেও তার কোন দেখা নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে উপকূলীয় সার্ভিসে আসছে না বে-ক্রসিং জাহাজ। বিআইডব্লিউটিসির ১৩টি সি ট্রাকের মধ্যে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে মাত্র চারটিতে। এসব রুটে চলাচলকারী বেসরকারী কোম্পানির ১১টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ সুযোগে প্রতিবছরের মতো এবারও ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ট্রলারে যাত্রী পারাপার করছে অবৈধ নৌযান সিন্ডিকেটের লোকজন। ফলে আগামী সাত মাস এসব অবৈধ ট্রলার ও নৌকায় উপকূলবাসীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডেঞ্জার জোন পাড়ি দিতে হবে। সূত্রে আরও জানা গেছে, নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে ২০০০ সালে উপকূলীয় এলাকার তিন হাজার কিলোমিটার নৌ পথকে ডেঞ্জার জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ডেঞ্জার জোনে সি ট্রাক ও বে ক্রসিং ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ ছাড়া অন্যসব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নিয়ম চালু করা হয়। নিয়ম বাস্তবায়নে বিআইডব্লিউটিএ এবং বিআইডব্লিউটিসিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, উপকূলের তিন হাজার কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ নৌ পথে ২৩টি রুট রয়েছে। এরমধ্যে বরিশাল-ইলিশা-মজুচৌধুরীরহাট, দৌলত খাঁ-চরআলেকজান্ডার, মির্জাকালু-চর আলেকাজান্ডার, তজুমদ্দিন চর আলেকজান্ডার রুটে এমভি চন্দ্রদ্বীপ, এমভি উপবন, এমভি সঞ্চিতা-২, এমভি রাজপাখি, এমভি প্রিন্স অব বরিশাল, এমভি জনতা, এমভি গ্রীন ওয়াটার-৫, এমভি সোহেলী-১, এমভি ইম্পেরিয়াল, এমভি মুঈন ও এমভি রামগতি এক্সপ্রেস চলাচল করে আসছে। বিআইডব্লিউটিএ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ মার্চ থেকে আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাত মাস নৌ যান চলাচল বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সি ট্রাকের বাইরে বেসরকারী মালিকানাধীন বে ক্রসিং ক্ষমতাসম্পন্ন এমভি টিপু-৫ ও পানামা-৫ লঞ্চ ঝুঁকিপূর্ণ সাত মাস ডেঞ্জার জোনে চলাচলের কথা থাকলেও বর্তমানে তা মনপুরা ও হাতিয়া রুটে চলাচল করছে। অতীতে ডেঞ্জার জোন ঘোষণার পর থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলকারী কেয়ারি সিন্দাবাদ ও কুতুবদিয়াকে এ রুটে চলাচলের জন্য পাঠানো হতো। গত কয়েক বছর ধরে বেসরকারী ছোট লঞ্চ ও ট্রলারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ব্যয়বহুল এ জাহাজগুলো পরিচালনা করা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এসব রুটে নিরাপদ যাত্রী পরিবহনের জন্য যে ১৩ সি ট্রাক রয়েছে তার মধ্যে নয়টিই যাত্রী পরিবহনের বাইরে রয়েছে। ভোলার বিচ্ছিন্ন উপদ্বীপ মনপুরায় যাতায়াতকারী সি ট্রাক শেখ কামাল, বরিশাল-লক্ষ্মীপুর রুটের এসটি খিজির ৮, ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের এসটি খিজির-৫ ও খিজির-৭ দীর্ঘদিন ধরে সংস্থার ডকইয়ার্ডে মেরামতের জন্য রয়েছে। এরমধ্যে এসটি খিজির-৫ ও খিজির-৭ নৌযান দুটি ইজারাদার নিয়োগ করে খুব শীঘ্রই ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে যাত্রী পরিবহনের জন্য যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারী এসব নৌযানের নেই সার্ভে সনদ। এমনকি খিজির-৭ দীর্ঘদিন ধরে ডকিং না করায় এর তলার অবস্থা খুবই নাজুক। এ অবস্থায় নৌযানটির তলায় সিমেন্ট প্লাস্টার করে ঝুঁকি নিয়েই যাত্রী পরিবহনের আয়োজন করা হচ্ছে। বরিশাল-লক্ষ্মীপুর রুটে খিজির-৮ পরিচালনার জন্য এখনও ইজারাদার নিয়োগ দেয়া হয়নি। এ নৌযানটি কবে থেকে যাত্রী পরিবহন করবে তা বলতে পারছে না সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
×