জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে এখনও অচেতন শুয়ে আছে জয়পুরহাটের ধর্ষিত সেই স্কুলছাত্রী। ঘটনার পর থেকে টানা দশ দিন কেটে গেলেও এখনও তার জ্ঞান ফেরেনি। প্রাথমিক পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেছে মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে সে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যেই তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। অস্ত্রোপচারের ছয় দিন পার হলেও রবিবার বিকেল পর্যন্ত তার জ্ঞান ফেরেনি।
ঢামেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টারের সমন্বয়ক ডাঃ বিলকিস বেগম জনকণ্ঠকে বলেন, ‘প্রাথমিক পরীক্ষার পর ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তবে এখনও চূড়ান্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।’ নবম শ্রেণীর এই ছাত্রী দুই কক্ষবিশিষ্ট বাড়ির একটি কক্ষে প্রতি রাতে একাই ঘুমাত। পাশের কক্ষে থাকত মা-বাবা ও ছোট দুই ভাই। গত ২৩ ডিসেম্বর ভোরে নিজ বাড়ি থেকে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। তার মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। সেদিন থেকে শামীমা অচেতন।
হাসপাতালের নিউরোসার্জন অসিত চন্দ্র সরকার মেয়েটির শারীরিক অবস্থা জানিয়ে রবিবার দুপুরে বললেন, ‘হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ ভাল। কিন্তু জ্ঞানের মাত্রা কম। মুখে নল ঢুকিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি এখনও হয়নি। এরকম জখমের ক্ষেত্রে রোগীর জ্ঞান ফিরতে আরও সময় লাগতে পারে। রোগীকে এখনও আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না’। ভারি ধাতব পদার্থের আঘাতে শামীমার মস্তিষ্কের চারপাশের বেশকিছু পর্দা ছিঁড়ে গেছে, টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানালেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। ‘মাথার তালুর হাড়ও ভেঙ্গে বসে গেছে। এছাড়া মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণও হয়েছে। চোখে-মুখে আঘাতের চিহ্ন। এছাড়া দেহের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট আঘাতের চিহ্ন এখনও বিদ্যমান।’ তবে আশার খবর এই যে, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত ২৯ ডিসেম্বর বানদীঘি গ্রামের মোঃ মাহাবুল (৪০) ও এযাবুল সরকারকে (২৮) গ্রেফতার করেছে কালাই থানার পুলিশ। তারা দুজনেই ওই ছাত্রীর প্রতিবেশী।
রবিবার দুপুর তিনটায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালাই থানার পরিদর্শক বিশ্বজিৎ বর্মণ জনকণ্ঠকে জানান, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি এ ঘটনার সঙ্গে তারা দুজনেই জড়িত। রিমান্ডে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। শীঘ্রই আমরা প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করে মূল ঘটনা উদ্্ঘাটন করতে পারব বলে আশা করছি।’ এদিকে, দিন-রাত আইসিইউর সামনের বারান্দায় অপেক্ষা করছেন মেয়েটির মা। মেয়েকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট বুকে চেপে রেখেই নিজেকে শক্তভাবে ধরে রেখেছেন তিনি। ‘আমার মেয়ে সুস্থ হবেই। আমি ওর মা। আল্লাহ আমার মেয়ের ওপর রহম করবেই। আমার মেয়ে একটু পরেই ‘মা’ বলে ডাকবে।’ বলতে বলতে কণ্ঠ জড়িয়ে এলো তার। অশ্রুভেজা চোখে তিনি তাকিয়ে আছেন আইসিইউয়ের দরজার দিকে। কখন একটু ফাঁকা পেলে মেয়েকে দেখতে যাবেন। কিন্তু ডাক্তার তো তাকে একবারের বেশি ঢুকতে দিচ্ছেন না। তবে কণ্ঠে জোর দিয়ে তিনি বললেন, ‘অপরাধীদের বিচার হোক এটাই আমি চাই।’
মেয়েটির চিকিৎসা বাবদ ইতোমধ্যেই তার পরিবার ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। অস্বচ্ছল পরিবারের কর্তা তার বাবা কৃষিকাজ করে সংসার চালান। চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার করেছেন তারা।
মেয়েটির মা বললেন, ‘এভাবেই যদি দিন পার হতে থাকে তাহলে মেয়ের চিকিৎসার খরচ কোথায় পাব? সবাই দোয়া করবেন আমার মেয়ে যেন খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।’