স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে পৃথক অভিযানে ৬ শিবির নেতাসহ ৭ জন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। তাদের কাছে পাওয়া গেছে তাজা বোমা, পিস্তল, গোলাবারুদ, বোমা তৈরির গানপাউডারসহ নাশকতা চালানোর নানা সরঞ্জাম। সারাদেশে চলমান সাঁড়াশি অভিযানের ধারাবাহিকতায় এরা গ্রেফতার হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদেশ থেকে ৩ শতাধিক গ্রেফতার হয়েছে। যার মধ্যে দেড় শতাধিক জামায়াত-শিবির ও বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।
শুক্রবার রাতে রাজধানীর মতিঝিলে আরামবাগের ৮৫ নম্বর বাড়ির ছাত্রশিবিরের একটি মেসে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে ১১টি ককটেলসহ শিবিরের ছয় নেতা গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- মতিঝিল থানা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন হিমেল, পল্টন থানার সভাপতি মোঃ রাসেল, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মাসুদুর রহমান, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি আলমগীর ও একই ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কাইয়ুম।
মতিঝিল থানার ওসি বিএম ফরমান আলী জানান, গ্রেফতারকৃতরা অভিযানকালে ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালাতে গোপন বৈঠক করছিল। উদ্ধারকৃত বোমাগুলো নাশকতা চালানোর জন্যই মজুদ করা হয়েছিল। এসব বোমার কারিগরও তারা। গ্রেফতারকৃতরা একাধারে ছাত্রশিবিরের নেতা। পাশাপাশি তারা বোমা তৈরি, মজুদ ও বোমা হামলা চালাতে পারদর্শী।
শুক্রবার রাতে রাজধানীর পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদ হোসাইন নামে তালিকাভুক্ত এক সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে পল্লবী থানা পুলিশ। পল্লবী থানার ওসি দাদন ফকির জানান, শীর্ষ সন্ত্রাসী হোসাইনের কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি, ১টি ম্যাগাজিন, ১০টি ককটেল, দেড় কেজি গানপাউডার ও বোমা তৈরির বিভিন্ন ধরনের উপকরণ উদ্ধার হয়েছে। অস্ত্র ও গোলাবারুদগুলো চাঁদাবাজির কাজে ব্যবহৃত হতো। হোসাইন গানপাউডার দিয়ে বোমা তৈরি করে মজুদ করত। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দিলে প্রথমে বোমা মারত। তাতেও চাঁদার টাকা না দিলে গুলি চালাত। এরপর চাঁদা না দিলে যার কাছে চাঁদা দাবি করত, তাকে হত্যা করা হতো। হোসাইন বাণিজ্যিকভাবেও বোমা তৈরি, মজুদ ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে নাশকতা চালাতে বোমা সরবরাহ করত হোসাইন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এক প্রকাশক হত্যা, দুই লেখক ও এক প্রকাশককে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যাচেষ্টা, সাভারে এক পুলিশকে হত্যা ও ৪ পুলিশকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে আহত করা এবং গাবতলীতে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান চলছে।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ আগস্ট চট্টগ্রামের পাইকপাড়া এলাকায় পটিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মুকিবুল ইসলাম চৌধুরী ফারুকের বাড়ি থেকে ফারুকসহ জামায়াতের ৯ নেতাকর্মী, ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকার পল্লবী থানাধীন ১১ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ১০ নম্বর সড়কের ৪ নম্বর বাড়ি থেকে জামায়াতের রাজশাহী-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার ও জামায়াতের রাজশাহী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মজিবুর রহমানসহ ১৩ জন গ্রেফতার হয়। তাদের কাছ থেকে লাঠিসোটা ও বোমা উদ্ধার হয়। অধ্যাপক মুজিবুর রহমান জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমির এবং গোলাম পরওয়ার দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্বরত। ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেট হোটেল গীভেন্সির দ্বিতীয় তলায় গোপন বৈঠক করার সময় জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন ছাত্রশিবিরের ৪১ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এদিন ভোরে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার গোবিন্দখিল থেকে ছাত্রশিবিরের ১০ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়। এছাড়াও সাঁড়াশি অভিযানে সম্প্রতি পল্টন থানাধীন ফকিরাপুলের ৭১/১ আফরোজা টাওয়ারের ৬ তলা ছাত্রশিবিরের কার্যালয় থেকে বোমা তৈরির প্রায় ৫ কেজি বিস্ফোরক, গাড়ির টায়ারের চাকা পাংচারের তারকাঁটাসহ নাশকতা চালানোর নানা সরঞ্জাম উদ্ধার হয়। গ্রেফতার করা হয়- খলিলুর রহমান (২০), মিজানুর রহমান (১৮), মোঃ রনি (২১), কবির হোসেন (২৩) ও আল-আমিনকে (১৮)। গত ৩১ অক্টোবর বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ রাজধানীর পল্লবী থেকে তৈরিকৃত বিপুল পরিমাণ বোমা ও বিস্ফোরকসহ ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।