ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

পে-স্কেল রিপোর্ট চলতি মাসেই মন্ত্রিসভায় উঠবে ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৪ আগস্ট ২০১৫

পে-স্কেল রিপোর্ট চলতি মাসেই মন্ত্রিসভায় উঠবে ॥  অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন পে-স্কেল রিপোর্ট চলতি আগস্ট মাসে মন্ত্রিসভায় ওঠানো হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই সময় পে-স্কেল সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুমোদনও দেয়া হতে পারে। সোমবার সচিবালয়ে নন-গেজেটেড কর্মচারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সরকারী কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। বৈঠকে সংগঠনের পক্ষ থেকে টাইম স্কেল বহাল রাখা ও শতভাগ সিলেকশন গ্রেড প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত বেতন স্কেলে গ্রেড সংখ্যা ১৬টি রাখা, ন্যূনতম বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকার পরিবর্তে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ এবং প্রতিটি গ্রেডের মধ্যে বেতন পার্থক্য ১ হাজার টাকা করার দাবি জানানো হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি মোঃ হানিফ ভূঁইয়া ও মহাসচিব মোঃ রেজাউল মোস্তফা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৭ জুলাই সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন পে-স্কেল সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিসভায় উঠতে পারে। ওই হিসেবে সোমবার পে-স্কেল সংক্রান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রিসভায় ওঠার কথা ছিল। কিন্তু নানা ধরনের টেকনিক্যাল জটিলতার কারণে শেষ পর্যন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি অর্থমন্ত্রণালয়। দেশের ১৪ লাখ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যথেষ্ট আগ্রহ নতুন এ পে-স্কেল নিয়ে। এ কারণে বৈঠক শেষে সোমবার আবারও পে-স্কেল নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলে কিছুটা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি এ কথা বলি নাই। আপনারা ভুল বলছেন। সোমবারটা একেবারে আপনাদের সৃষ্টি। আমি বলেছি, এটা আগস্ট মাসেই মন্ত্রিসভায় উঠবে এবং একইসঙ্গে আমি এটাও বলেছি যে, আমি তখনও ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাই নাই। তারপরও আপনারা এটি লিখে ফেললেন! সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংবাদ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যত দাবি ॥ এছাড়া সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছেÑ সচিবালয়ের বাইরে ও সচিবালয়ে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যে পদোন্নতির বৈষম্য দূরীকরণ, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে বৈষম্য বিলোপ করে সংবিধান অনুযায়ী সকলেই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী এ মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী ছয় সদস্যের হিসেবে পে-স্কেল প্রদান। আলোচনার শুরুতে পরিষদ নেতারা জানান, প্রস্তাবিত নতুন বেতন স্কেলে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ হওয়ার কথা বলা হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা হতাশাগ্রস্ত ও বৈষম্যের শিকার। ফলে তাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। আর তারা যেহেতু প্রমোশন পান না, সেহেতু টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল হলে সাড়ে ১৪ লাখ কর্মচারী বৈষম্যের শিকার হবেন। বক্তব্যের সপক্ষে পরিষদ নেতারা উল্লেখ করেন, কর্মচারীদের জন্য প্রস্তাবিত ১০টি গ্রেডে মোট আর্থিক ব্যবধান ৪ হাজার ২০০ টাকা (৮,২৫০ টাকা থেকে ১২,০৫০ টাকা)। অন্যদিকে, কর্মকর্তাদের জন্য ১০টি গ্রেডে মোট আর্থিক ব্যবধান ৫৯ হাজার টাকা (১৬,০০০ টাকা থেকে ৭৫,০০০ টাকা)। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনের মধ্যে পার্থক্য মেনে নিলেও আর্থিক পার্থক্যটি একটি বড় ধরনের বৈষম্য বলে উল্লেখ করেন তারা। এ ছাড়া কর্মচারীদের প্রতিটি গ্রেডে বেতন পার্থক্য মাত্র ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা। অন্যদিকে কর্মকর্তাদের প্রতিটি গ্রেডে বেতন পার্থক্য ৮ হাজার টাকা থেকে ১১ হাজার টাকা। এটাও এক ধরনের বৈষম্য। কর্মচারীদের প্রতিটি গ্রেডে বেতন পার্থক্য অন্তত ১ হাজার টাকা হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন পরিষদ নেতারা। তবে পরিষদ নেতাদের কিছু কিছু বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেও তাদের বেশির ভাগ দাবির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেখি কী করা যায়। পরিষদ নেতাদের বক্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অসন্তোষ বললে এটি ভুল বলা হবে। টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড না থাকলেও সরকারী কর্মচারীদের উদ্বিগ্ন ও হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ এখন থেকে তারা স্বয়ক্রিয়ভাবেই উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত হবেন। নতুন পে-স্কেলে বৈষম্য কমবে দাবি করে তিনি বলেন, বিদ্যমান বেতন স্কেলে সর্বনিম্ন বেতন হচ্ছে ৪ হাজার ১শ’ টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন হচ্ছে ৪০ হাজার টাকা। পে-কমিশন এটা যথাক্রমে ৮ হাজার ২শ’ টাকা ও ৮০ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু সচিব কমিটি সর্বনিম্ন বেতন ৫০ টাকা বৃদ্ধি এবং সর্বোচ্চ বেতন কমিয়ে ৭৫ হাজার টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে।
×