
ছবি: সংগৃহীত
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রজন্মের (জেনারেশন জেড) কনটেন্ট নির্মাতারা নিজেদের উপস্থিতি ধরে রাখতে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে এখন বিকল্প প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে জেনারেশন জেড-এর মনোযোগ পেতে হলে ‘এজেন্সি’ (ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণ) ও ‘ডিসকভারেবিলিটি’ (অনুসন্ধানযোগ্যতা) এর উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
ছয় মাস আগেও যদি জেনারেশন জেড-এর কোনো কনটেন্ট ক্রিয়েটরকে জিজ্ঞেস করা হতো, তারা হয়ত বলতেন যে তারা সবচেয়ে বেশি সময় কাটান ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, স্ন্যাপচ্যাট, ডিসকর্ড এবং টাম্বলারে। এসব প্ল্যাটফর্মে তারা শুধু কনটেন্ট শেয়ার করতেন না, বরং ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডও তৈরি করতেন - রান্নার রেসিপি থেকে শুরু করে সম্পর্কের টানাপড়েন বা ঘর সাজানোর টিপস শেয়ার করতেন। কিন্তু টিকটকের সাময়িক নিষেধাজ্ঞা এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার প্রেক্ষিতে অনেকেই এখন বিকল্প খুঁজছেন।
এই পরিবর্তন নতুন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য বড় একটি সুযোগ তৈরি করেছে। তবে প্রশ্ন হলো, কীভাবে এসব প্ল্যাটফর্ম জেনারেশন জেড-এর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সেগমেন্টকে আকৃষ্ট করবে এবং ধরে রাখতে পারবে?
সোশ্যাল মিডিয়া নীতিমালা, নিষেধাজ্ঞা বা মনিটাইজেশনের পরিবর্তন যেন এখন নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে নির্মাতারা বুঝতে পারছেন, একটি মাত্র প্ল্যাটফর্মের উপর নির্ভর করা ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো প্ল্যাটফর্ম নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে বারবার নতুন করে পরিচিত হওয়া, অ্যালগরিদম শেখা এবং কনটেন্ট মানিয়ে নেওয়ার এই ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া কেবল বার্নআউটই বাড়ায় না, বরং আয়েরও ক্ষতি করে।
এই প্রজন্মের নির্মাতারা চান নিজের ব্র্যান্ডের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং কনটেন্ট সহজে খুঁজে পাওয়ার সুযোগ। আগে যে-সব নির্মাতা প্ল্যাটফর্মের নিয়ম মেনেই চলতেন, জেনারেশন জেড সেখানে চায় স্বাধীনতা এবং স্বচ্ছতা। ফলে অনেকেই এখন নিজেদের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট বা ডোমেইন তৈরি করছেন, যেখানে সব সোশ্যাল লিংক, কনটেন্ট ও ব্যবসায়িক সংযোগ একত্রে থাকে।
এই ব্যক্তিগত ডোমেইন নির্মাতাদের একটি স্থায়ী ডিজিটাল উপস্থিতি তৈরি করতে সাহায্য করছে। এতে কনটেন্ট, অডিয়েন্স ও আয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সহজ হচ্ছে — যা কোনো প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তনের সময়েও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
সাবস্ট্যাক জানুয়ারিতে একটি ২০ মিলিয়ন ডলারের "ক্রিয়েটর ফান্ড" চালু করেছে, যাতে কনটেন্ট নির্মাতারা একটি স্থিতিশীল পরিবেশে কাজ করতে পারেন এবং নিজেদের অডিয়েন্সের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন। আরেকটি প্ল্যাটফর্ম বিহিভ চালু করেছে “ক্রিয়েটর অ্যাক্সিলারেটর” নামে একটি উদ্যোগ।
তবে এ সবই কেবল শুরু। প্রকৃত ক্ষমতা তখনই আসবে যখন নির্মাতারা নিজেদের অডিয়েন্স সম্পূর্ণভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। আজ টিকটক বা সাবস্ট্যাক যদি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে নির্মাতার ফলোয়াররা কোথায় যাবে? উত্তর: নিজের ডোমেইনে, যেখানে ব্র্যান্ড, ব্যবসা এবং ভবিষ্যৎ সবই নির্মাতার নিয়ন্ত্রণে।
ব্লুস্কাই এই দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবায়ন করেছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা নিজেদের ডোমেইনকে সরাসরি হ্যান্ডেল হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এই প্ল্যাটফর্মটি একটি বিকেন্দ্রীকৃত কাঠামোতে কাজ করে, যার ফলে নির্মাতারা আরও বেশি স্বাধীনতা পান এবং একটি ঐক্যবদ্ধ অনলাইন পরিচিতি গড়ে তুলতে পারেন।
সোশ্যাল মিডিয়ার পরিবর্তনশীল জগতে এখন ক্ষমতা আস্তে আস্তে নির্মাতাদের হাতে চলে যাচ্ছে - বিশেষ করে যারা নিজেদের অনলাইন উপস্থিতি নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করছেন। ব্লুস্কাইয়ের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ইতোমধ্যেই সেই পথে হাঁটছে, ফলে নতুন প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য সুযোগ তৈরি হচ্ছে আরও ভালো নির্মাতা-কেন্দ্রিক ইকোসিস্টেম তৈরির।
এজেন্সি, ডিসকভারেবিলিটি এবং নির্মাতার স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো জেনারেশন জেড নির্মাতাদের জন্য একটি স্থিতিশীল ও লাভজনক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে - যেখানে নির্মাতা ও অডিয়েন্স একসাথে বিকশিত হতে পারবে।
সূত্র: https://shorturl.at/DREoq
মিরাজ খান