ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

৫৪ বছরেও কুড়িগ্রামের রেল সেবার মান বাড়েনি

মনোয়ার হোসেন লিটন, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১৫:৫৬, ১৫ মে ২০২৫

৫৪ বছরেও কুড়িগ্রামের রেল সেবার মান বাড়েনি

ছবি : জনকণ্ঠ

স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও কুড়িগ্রামের রেলসেবার মান তলানিতে। জেলার ২৫ লাখ মানুষের জন্য মাত্র একটি লোকাল ও একটি আন্তঃনগর ট্রেন। সে ট্রেন দুটিরও রয়েছে সিডিউল বিপর্যয়, টিকিট বিড়ম্বনাসহ নানা অভিযোগ। আত্ম-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি, সম্প্রসারণ ও রেলসেবার মান বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলের মানুষ।

সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামের মানুষ স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও রেলসেবা থেকে বঞ্চিত। কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানা প্রয়োজনে এই অঞ্চলের মানুষ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাবার জন্য ভোগান্তিতে পড়ছে প্রতিনিয়ত। এ জেলায় রয়েছে একটি মাত্র লোকাল ট্রেন, যেটি চলে চিলমারীর রমনা থেকে রংপুর পর্যন্ত।

একটি আন্তঃনগর ট্রেন কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস। ট্রেনটি চলে কুড়িগ্রাম স্টেশন থেকে ঢাকা পর্যন্ত। এই আন্তঃনগর ট্রেনটিরও রয়েছে সিডিউল বিপর্যয় ও চরম টিকিট সংকট।

প্রতিদিন গড়ে ৬ হাজার মানুষ শুধুমাত্র কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়া-আসা করে। পর্যাপ্ত ট্রেন না থাকায় অধিক মূল্যে ঝুঁকি নিয়ে বাসে যাতায়াত করে যাত্রী সাধারণ।

১৯৯০ সালে লোকসংখ্যা কম থাকলেও শুধুমাত্র এই রুটে চলতো ৪টি লোকাল ট্রেন। পাশের জেলা পঞ্চগড়ে আন্তঃনগর পাঁচটিসহ মোট ট্রেন ছয়টি, লালমনিরহাটে চারটি আন্তঃনগরসহ ডেমু, লোকাল ও কমিউটার মিলে আটটি ট্রেন চলাচল করে। নীলফামারী জেলাতেও ছয়টি আন্তঃনগরসহ মোট আটটি ট্রেন চলাচল করে। রংপুরে ২টি আন্তঃনগরসহ মোট ১০টি ও দিনাজপুরেও একই সংখ্যক ট্রেন চলাচল করলেও কুড়িগ্রামের চিত্র একেবারেই ভিন্ন।

বর্তমানে জেলায় রাজারহাট, টগরাইহাট, কুড়িগ্রাম, পাঁচপীর, উলিপুর, বালাবাড়ি ও রমনা বাজার রেলওয়ে স্টেশনসহ মোট সাতটি রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে। অতীতে এখানে দিবা-রাত্রি চার জোড়া ট্রেন চলাচল করলেও বর্তমানে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ও চিলমারী কমিউটার নামের মাত্র দুটি ট্রেন চলাচল করছে। তার মধ্যে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনটি কুড়িগ্রাম-ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটে চলাচল করলেও চিলমারী কমিউটার চলাচল করছে কাউনিয়া-রমনা বাজার-রংপুর-লালমনিরহাট এবং লালমনিরহাট-কাউনিয়া-কুড়িগ্রাম ও কুড়িগ্রাম-কাউনিয়া-লালমনিরহাট রুটে।

চিলমারী কমিউটারকে যখন লালমনিরহাট-কাউনিয়া-কুড়িগ্রাম ও কুড়িগ্রাম-কাউনিয়া-লালমনিরহাট রুটে চালনা করা হয় তখন এটিকে রংপুর এক্সপ্রেস-এর কানেক্টিং শাটল ট্রেন হিসেবে গণ্য করা হয়। সেদিক বিবেচনায় দেখা যায়, কুড়িগ্রামে মাত্র দুটি ট্রেন চলাচল করে।

কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে মোট আসন সংখ্যা ৬৫৩টি হলেও কুড়িগ্রামের জন্য টিকিট বরাদ্দ দেওয়া হয় মাত্র ১২২টি। এর মধ্যে অনলাইনে ৬১টি এবং কাউন্টারে ৬১টি। এসি সিট: কাউন্টারে ৫টি, অনলাইনে ৫টি; এসি চেয়ার: অনলাইনে ৬টি, কাউন্টারে ৬টি; শোভন চেয়ার: কাউন্টারে ৫০টি, অনলাইনে ৫০টি।

এদিকে, কুড়িগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম যাত্রী ছাউনি দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে বৃষ্টির সময় ঝরঝরে পানি পড়ে। এ সময় প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানোরও কোনো উপায় থাকে না। এছাড়া প্ল্যাটফর্ম উভয় দিকে বর্ধিত করা হলেও যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়নি। ফলে বৃষ্টির সময় যাত্রীদের ভিজে ট্রেনে উঠতে হয় এবং ট্রেন থেকে নেমে ভিজে বাড়ি ফিরতে হয়। দ্রুত প্ল্যাটফর্মের যাত্রী ছাউনি মেরামতসহ উভয় দিকে বর্ধিতকরণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

রেল, নৌ-যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আরিফ বলেন,
"জেলা ওয়ারি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কুড়িগ্রাম থেকে শুধু ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ২২৬টি বাস, যা সারা বাংলাদেশের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক। কুড়িগ্রাম-ঢাকা রুটে দুই জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালালেও চলবে। এছাড়া কুড়িগ্রাম-পঞ্চগড় এবং কুড়িগ্রাম-সান্তাহার রুটে এক জোড়া করে আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবি জানিয়েছে আমাদের গণকমিটি।"

জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, "দারিদ্র্যপীড়িত কুড়িগ্রাম জেলার মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যে এবং নিরাপদে যাতায়াতের জন্য ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। বাংলাদেশের জনগণ যদি বিএনপিকে জনগণের সেবা করার সুযোগ দেয়, তাহলে অবশ্যই এই জেলার যাতায়াতের জন্য যা করণীয়, বিএনপি তাই করবে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমার আহ্বান থাকবে, এই জেলার মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ট্রেন সেবার মান বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি দেওয়া।"

বিভাগীয় সংস্থাপন কর্মকর্তা, বাংলাদেশ রেলওয়ে, লালমনিরহাট (অ.দা.) মোঃ মোরশেদ আলম দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন,
"কুড়িগ্রাম থেকে রমনা পর্যন্ত লাইনটি সংস্কার কাজ চলছে। সংস্কার কাজ শেষ হলে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনটি রমনা স্টেশন থেকে যাতায়াত করার কাজ চলছে। অতিরিক্ত ট্রেন কুড়িগ্রাম দেওয়া হবে কিনা—এ ব্যাপারে আপাতত আমি আপনাকে কোনো তথ্য দিতে পারছি না।"

কুড়িগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রী ছাউনির বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, "আপনি আমাকে নির্দিষ্ট তথ্য দেন, আমি যাত্রী ছাউনি মেরামতের ব্যবস্থা করছি।"

সা/ই

×