ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

ঝিনাইগাতীতে হারিয়ে যাচ্ছে তেঁতুল গাছ, রক্ষণাবেক্ষণ ও চারা রোপনের নেই কোন উদ্যোগ

আরএম সেলিম শাহী, ঝিনাইগাতী, শেরপুর

প্রকাশিত: ১৬:৪৩, ১৩ মে ২০২৫; আপডেট: ১৬:৪৮, ১৩ মে ২০২৫

ঝিনাইগাতীতে হারিয়ে যাচ্ছে তেঁতুল গাছ, রক্ষণাবেক্ষণ ও চারা রোপনের নেই কোন উদ্যোগ

এক সময় মানুষ অর্থনৈতিক দৈন্যদশা কারণে অত্যাধুনিক ব্যয়বহুল আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারতো না। ফলে মানুষ গাছ- গাছরা বা কবিরাজের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতো। বিভিন্ন বহুমূখী রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী গাছের নাম হলো তেঁতুল গাছ।

কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ, গাছপালা কাটার মহোৎসব, বন- জঙ্গল কেটে সাবাড় করা ও নতুন করে চারা রোপনের উদ্যোগের অভাবে এই ভেষজ গুণ সম্পূর্ণ উদ্ভিদটি আজ বিলুপ্তির পথে।

জানা যায়, ঝিনাইগাতী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ বাড়ির আঙ্গিনায়, পুকুর পাড়ে, জঙ্গলে কিংবা রাস্তার ধারে থাকা তেঁতুল গাছ এখন আর চোখে পড়ে না। ঘরের কোণে বোতলে রাখা তেঁতুলের আচার তেমন আর খাওয়া হয় না। অথচ কতই না গুণে গুণান্বিত এই তেঁতুল ফল। গ্রামীণ উপকথা ভূত-পেতনির বাসস্থান নামে আখ্যায়িত করার অনেকে ভয়েই তেঁতুল গাছ কেটে ফেলেছে।

উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, রোগ প্রতিকারে অনেক পদ্ধতিতে তেঁতুল ব্যবহার করা যায়। রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর কাজে বর্তমানে তেঁতুলের আধুনিক ব্যবহার হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার তাৎক্ষণিকভাবে উপশম হয় কাঁচা অথবা পাঁকা তেঁতুল খেলে। নিয়মিত তেঁতুল খেলে শরীরে মেদ জমাতে পারেনা। তেঁতলে টারটারিক এসিড থাকার কারণে খাবার হজমেও এটি দারুন সহায়ক। পেটের বায়ু ও হাত পা জ্বলাতে তেঁতুলের শরবত খুবই উপকারি। পেটের ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, ধুতরা ও কচুর বিষাক্ততা থেকে রক্ষা পেতে তেঁতুল ফলের শাঁসের শরবত খেলে শতভাগ সফলতা পাওয়া যায়। নিয়মিত খেলে প্যারালাইসিস আক্রান্ত অঙ্গের অনুভূতি ফিরে আসে। এছাড়াও স্কেলিটাল ফ্রুরোসিস আছে যা এককথায় কোষ্ঠবদ্ধতা রোগসহ সর্বরোগের প্রকোপ হ্রাস করতেও এটি ব্যবহৃত হয়।

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, তেঁতুল গাছটি আমাদের নিকট ঔষধি গাছ হিসাবেই পরিচিত। আমাদের যখন হাঁপানি, চোখ জ্বালাপোড়া ও দাঁত ব্যাথা করতো তখন আমাদের বাবা- মা এই তেঁতুল গাছের চূর্ণ ব্যবহার করতো। মুখের ভিতরের ক্ষত সারাতে তেঁতুল পাতা সিদ্ধ মূখে নিয়ে দুই তিন দিন চার/পাঁচ বার গড়গড়া করলে আরোগ্য পাওয়া যায়। একই পানি দ্বারা শরীরের যেকোন নতুন বা পুরনো ক্ষতস্থান ধুয়ে দিলে ক্ষতস্থান দ্রুত শুকিয়ে যায়।

তারা আরো জানান, যদি এই ঔষুধি গুন সম্পূর্ণ গাছটিকে সুষ্ঠ ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা হয় ও চারা রোপনের মাধ্যমে টিকিয়ে না রাখা হয় তাহলে একদিন হয়তো প্রকৃতি থেকে চিরচেনা তেঁতুল গাছটি হারিয়ে যাবে।

নলকুড়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল গফুর জানান, দেশী তেঁতুল গাছে ফলন আসতে খুব সময় লাগে, তাছাড়া সন্তোষজনক ভাবে ফলন না হওয়ায় আজ বিলুপ্তির পথে দেশীয় তেঁতুল গাছ। তবে আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ বা মেলার মাধ্যমে এই দেশীয় তেঁতুল গাছের গুরুত্ব তুলে ধরে চাষিদের উৎসাহিত করে থাকি।

এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: ফরহাদ হোসেন বলেন, "তেতুল একটি অসাধারণ ঔষধি গাছ। প্রকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বেশি পরিমানে তেঁতুল গাছ রোপন করা দরকার। এই গাছ রোপনের জন্য আমরা জনসাধারণকে সচেতন করে আসছি।" 

নোভা

×