
ইট কনক্রিটের শহর কুমিল্লার বুকে এক টুকরো সবুজের নাম ‘হাউজিং আবাসিক এলাকা। এই এলাকায় বিউটি ও আক্তার হোসেন দম্পতির নির্মিত সুখের আবাস তাসনিম নীড়। ত্রিতল ভবনের ছাদে গড়ে তুলেছেন বিউটির ছাদ বাগান। এই বাগান শুধু একটি সৌন্দর্যের নিদর্শনই নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত বার্তা প্রকৃতিকে ভালোবেসে, সঠিক পরিকল্পনায় যে কেউ গড়তে পারে সবুজ এক স্বপ্নজগৎ।
কুমিল্লা শহরের হাউজিং এলাকায় ত্রিতল একটি ভবনের ছাদজুড়ে ছড়িয়ে আছে এই ব্যতিক্রমী বাগান। গাছের সারি, টবে ফুটে থাকা রঙিন ফুল, সবজি চাষ এবং ছাদজুড়ে ছড়ানো লতাগুল্মে যেন এক অন্য রকম প্রাণ জেগে উঠেছে। শহরের ব্যস্ততা আর ধুলোর ভিড়ে এটি যেন এক নির্জন নীরব সবুজ আশ্রয়।
এই ছাদ বাগানের পেছনে যিনি সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন, তিনি হলেন গৃহিণী তাছলিমা আক্তার বিউটি। গত দশ বছর ধরে তিনি নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন এই বাগান। প্রতিদিন সকালে বাগানের যত্ন নেওয়া, গাছের জল দেওয়া, সার প্রয়োগ এবং পরিচর্যা সবই করেন নিজের হাতে। ছাদে চাষ করছেন টমেটো, ধনেপাতা, মিষ্টি কুমড়া, করলা, পুঁইশাক, পালং শাক থেকে শুরু করে নানা রকমের মৌসুমি সবজি ও ফলাদির গাছ।
বিউটি আক্তার বলেন, ‘শুরুটা ছিল শখ থেকে। কিন্তু এখন এটা আমার জীবনেরই একটা অংশ হয়ে গেছে। এই গাছগুলো আমার সন্তানদের মতো।’
বাগানের ফুল ও ফল শহরের অনেক বাসিন্দার মন কেড়েছে। প্রতিবেশীরা নিয়মিত আসেন এই বাগান দেখতে ও পরামর্শ নিতে। এমনকি অনেকেই এখন নিজের ছাদেও বাগান করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এই সাতবা খান থেকে ডিউটি তা নিজের উৎপাদিত কীটনাশক ও রাসায়নিক সারবিহীন সবজি ও নানা রকম ফলাদি নিয়মিত পেয়ে থাকেন। এই বাগানের উৎপাদিত সবজি ও বিভিন্ন ফল ফলাদি নিজের চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের বাসা, আত্মীয়স্বজন ও নিজ গ্রামের বাড়িতে দিয়ে থাকেন। আশপাশের লোকজন কীটনাশক ও রাসায়নিক সারবিহীন উৎপাদিত শাকসবজি পেয়ে অনেক খুশি। তার বাগান দেখে অনেকেই এখন অনেক নিজের ছাদে বাগান করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। বাগান মালিক বিউটি আক্তার বলেন, আমাদের ইচ্ছা শক্তি যে কোনো কিছু করা সম্ভব।
পরিবেশবিদরাও বলছেন, শহরের জলবায়ু উন্নয়নে এই ধরনের ছাদবাগান বড় ভূমিকা রাখে। এটি শুধু সৌন্দর্যই নয়, ছাদে তাপমাত্রা কমায়, বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে সহায়ক হয় এবং পরিবেশে অক্সিজেন সরবরাহে ভূমিকা রাখে।
ছাদবাগান তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সঠিক পরিকল্পনা ও নিয়মিত পরিচর্যা। বিউটি জানালেন, ‘শুরুতে অনেক গাছ মারা গেছে, কিন্তু হাল ছাড়িনি। ধৈর্য আর ভালোবাসাই আমাকে সফল করেছে।’
এই ছাদবাগান যেন কুমিল্লার হাউজিং এলাকার অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে উঠেছে। কেবল একটি ছাদ নয়- এটি এখন একটি জীবন্ত বার্তা, প্রকৃতিকে আপন করে নেওয়ার এক অনন্য নজির।
প্যানেল