ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

সমতার লক্ষ্যে নারী

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ১৮:০৭, ১৯ জুন ২০২৫

সমতার লক্ষ্যে নারী

সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে সব মানুষের যথার্থ ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ কোনো অংশ পিছু হটলে সার্বিক উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়ই না। শ্রেণি বিভক্ত সমাজে শুধু বিত্ত, মর্যাদা, আভিজাত্যের ফারাকই নয় আরও দৃষ্টিকটুভাবে দৃশ্যমান নারী-পুরুষের ব্যবধান, বিভেদ আর পেছনে হটার চরম অপদৃশ্য। নতুন কোনো দুরবস্থা নয় বরং দীর্ঘকাালীন এক সামাজিক বঞ্চনার করুণ ইতিহাস। যা আজও সমসংখ্যককে তাড়িয়েই বেড়াচ্ছে। যুগ-যুগান্তরের অনধিগম্য যাত্রাপথের নিরেট বাস্তবতা। আমরা ১৬ বছরের এক রৈখিক দুঃশাসনের কঠিন যাত্রাপথকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন সময়ের পরম নির্দেশনা অর্জন করেছি। বলার অপেক্ষাই রাখে না। তবে নারী-পুরুষের সমতা কঠিন এক বিষয়। সহজ-সাধারণভাবে মেলানো ও দুঃসহ বাতাবরণ। সৃষ্টির ঊষাালগ্ন থেকে এমন প্রভেদ দৃশ্যমানই শুধু নয় বরং দুর্গম বাস্তব প্রেক্ষাপটের এক অনধিগম্য যাত্রাপথ তো বটে। যা আজও ঘোচানো গেল না- যাবে কি না সুদূরপরাহত তো বটেই। সাম্য, মৈত্রী আর ঐক্যের পতাকায় একসঙ্গে জড়ো হওয়া নারীরা এখনো কত বিপন্ন জাল আর বৈষম্যের নিগড়ে আটকেপড়া সময়-অসময়ের চরম দুর্ভাগ্য। কোটা সংস্কার আন্দোলনে বৈষম্যহীন দেশ গড়ার যে মহা অঙ্গীকার সেখান থেকে পিছু হটতেও সময় লাগছে না। নারী সমাজ আবারও নতুন করে সেই অপসংস্কারকে ঘোচানোর দাবি তুলছে। বদলে যাওয়া সদ্য বাংলাদেশ সেই পুরানো আঙ্গিকে পথ হারানোর প্রশ্ন তুলতেও সময় ক্ষেপণ করছে না। সমাজ সংস্কারের অলিখিত নিয়মবিধিকে অত সহজে লঙ্ঘন করাও কঠিনতর এক সুরক্ষিত বলয়। নতুন বাংলাদেশে হরেক পুরানো অপজঞ্জাল মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে নারী সমাজ আবারও বিক্ষোভে উত্তাল, দিশাহারা। সাম্যবাদী চেতনায় সবার আগে সামনে চলে আসা লিঙ্গ সমতা। যা দীর্ঘকালীন বয়ে বেড়ানোর চরম চড়াই-উৎরাই। সামাজিক বৈরিতা, অধিকারহীনতা, স্বাধীনভাবে নিজেদের গড়ে তোলার হরেক মাত্রার শৃঙ্খল যেন স্বচ্ছন্দ যাত্রাপথের চরম দুর্ভোগ। তেমন দীনতা পুরুষের প্রতি ব্যবহার হতেও প্রচুর সময় লাগে। যা নারীদের বেলায় নির্দ্বিধায়-অবলীলায় প্রয়োগ করতে কোনো বিপত্তিও পথ আটকায় না। একবিংশ শতাব্দীর তথ্য-প্রযুক্তির উন্নত বিশ্বেও। যা নারীর জন্য উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার আর এক বিপরীত প্রদাহ। যে কোনো সমাজের বৈষম্য, নিপীড়ন, বিভাজন সমাজ-সংস্কারের গভীরে জিইয়ে থাকে। যার মূলোৎপাটন অত সহজসাধ্যভাবে হয় না। দুর্গম যাত্রাপথের কণ্টকাকীর্ণ এক জটিল অব্যবস্থা। শুধু কি তাই? নারী নিপীড়নকে বলা হচ্ছে উন্নয়নের ক্ষতচিহ্ন। যা অতি সহজেই বিলীন হওয়ার নয়। সাম্যবাদী চেতনাকে বিভিন্নভাবে জাগ্রত করেও নারীরা আজও শৃঙ্খলিত, প্রচলিত সমাজ-সংস্কারের বিধিনিষেধের জাল আজও ছিন্ন করতে না পারাও এক অদম্য জটিল পথে পাড়ি দেওয়া। তাই নতুন বাংলাদেশ গঠন প্রক্রিয়ায় পুরানো হরেক আবর্জনাকে চিহ্নিত করে চিরস্থায়ী বিলোপের আবেদন জানিয়ে যাচ্ছেন সমসংখ্যক নারী। যারা সুষ্ঠু ক্ষমতায়নের জাগ্রত সৈনিকের মর্যাদায় নিজেকে অভিষিক্ত করেও গঁৎ বাধা নীতি-নৈতিকতাকে কেমন যেন আঁকড়ে ধরে নিজেদের কপালে ঘা দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত হয়ে জাগরণীর সংগীত মূর্ছনায় বিভোর হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কতখানি সিদ্ধ হচ্ছে তাও এক অজানা বিস্ময়ের ঘেরাটোপে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েই থাকছে। দেশের নারী সংগঠন ‘মহিলা পরিষদ’ সুতীব্র প্রতিবাদ, বিক্ষোভে সড়কে নেমে এসে তাদের যুগ-যুগান্তরের কঠিন যাত্রাকে নতুন সময়ের অধীন করতে রাজপথ উত্তাল করে যাচ্ছে। সমাজে নারী-পুরুষের অধিকার, স্বাধীনতা, ন্যায্যতার আলোকে বিবেচিত হওয়া চিরস্থায়ী এক মনন সৌধে। যাকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করে সমতার মাঝখানে সুকঠিন অর্গল তুলে দেওয়া অন্যায্যতাই নয় প্রাপ্যতাকেও অস্বীকার করে নারী-পুরুষকে আলাদাভাবে বিভাজনের বিপরীত প্রদাহে নিয়ে আসা। আলাপ-আলোচনা আর বিক্ষোভে উদীয়মান তরুণীরা ন্যায্য অধিকার পাওয়াই নয় ক্ষমতার আলোকে সব আইনি কার্যকলাপকে নিয়মের অনুবর্তী করারও জোরালো আবেদন জানিয়ে যাচ্ছে। নারীর সহজাত অধিকার, স্বাধীনতা তার আজন্ম প্রাপ্ত অধিকার, ন্যায্য দাবি। এখান থেকে পিছু হটা কিংবা অধিকারের প্রাপ্যতাকে পাশ কাটানো সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র কোথাও মান্যতা পাওয়ার বিষয়ই নয়। তাই নারী সমাজের অধিকার, স্বজাত্য বোধ, স্বাধীনতা- সবই অধিকারের মর্যাদায় পেয়ে যাওয়া সামাজিক বলয়ের নিশ্চিত এক যাত্রাপথ। 
অন্যদিকে দিকে নারীর ক্ষমতায়ন প্রকল্পে অনেক কর্মজীবী নারীর চাকরি হারানো কোনোভাবেই মান্যতা পায়ই না। এমন অপদৃশ্য বারবার সংশ্লিষ্টদের হরেক মাত্রার দুর্ভোগ শিকারে এগিয়েও দিচ্ছে। অনেক সময় নারীদের সংঘবদ্ধ আন্দোলনে পুলিশি বাধা দৃশ্যমান হতেও সময় লাগছে না। সব কিছু কিন্তু পুরুষতান্ত্রিকতার জন্য ঘটে সেটাও কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। বাংলাদেশের এখনো সিংহভাগ অঞ্চল পল্লি জননীর সুশীতল ছায়াতলে বসবাসরত নারীরা। কিন্তু তারাই কেন সংহত কিংবা সুশৃঙ্খলভাবে নিজেদের কণ্টকাকীর্ণ যাত্রাপথকে সাবলীল ও সুগম করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তাও প্রশ্নবিদ্ধ। তাই নিজেদের সমানভাবে তৈরি করে সম্মুখ সমর মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হলে নারী-পুরুষ কারোর জন্য সুষম যাত্রাপথ তৈরি হওয়া এক অপ্রতিরোধ্য বলয়। যা সমূলে নস্যাৎ করতে আরও বেগবান আন্দোলন ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধন আবশ্যক।

প্যানেল

×