
রুমা বেগম
এক যুগ আগে রুমা বেগমের জীবন সংগ্রাম শুরু হয়। বিয়ের পর সুখের সংসার চলছিল তাদের। কিন্তু এত সুখ যেন কপালে সইছিল না। আনন্দের সংসারে মেঘকালো করে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় রুমা বেগমের স্বামী। মৃত্যুর আগেই স্বামীর চিকিৎসার পেছনে কয়েক দফা খরচে ২ শতক ভিটেবাড়ি বাদে পরিবারের সর্বস্ব বেচে দিতে হয়
জীবন সংগ্রামে লড়াই করে যাচ্ছেন রুমা বেগম। নানা রোগে জর্জরিত। বয়স খুব একটা বেশি না হলেও অসুস্থতার কারণে অনেক বয়স্ক মনে হয় তাকে। তিন বেলা খাবার জোগানো সম্ভব নয় যেখানে বাড়তি ওষুধ কেনাটা সেখানে যেন বিলাসিতা। একটি প্রতিবন্ধীসহ দুটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান নিয়ে অসহায় জীবন পার করছে। কুড়িগ্রাম পৌরসভার পুরাতন রেলস্টেশন পাড়ার বাসিন্দা অসুস্থ রুমা বেগম। জীবন সংগ্রামের হিসাব মেলাতে না পেরে যেন সব হিসাব তার এলোমেলো।
স্থানীয় বিড়ি ফ্যাক্টরিতে কাজ করে বড় ছেলে হৃদয় হাসান (১৭)এর অনিয়মিত আয় যা গড়ে দৈনিক ১০০ টাকার কম। এই সামান্য আয় এবং প্রতিবন্ধী ছোট ছেলে বুলেট (১৫)এর ত্রৈমাসিক ভাতা ২৫০০ টাকা দিয়েই কোনো রকমে তিনবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন চলে যাচ্ছে তাদের। এর উপর প্রতিবন্ধী ছেলের গোদ রোগের চিকিৎসা ও নিজের পিত্তথলির পাথর এবং হার্টের অসুখের চিকিৎসাও করাতে হয়। এক যুগ আগে রুমা বেগমের জীবন সংগ্রাম শুরু হয়। বিয়ের পর সুখের সংসার চলছিল তাদের। কিন্তু এত সুখ যেন কপালে সইছিল না। আনন্দের সংসারে মেঘকালো করে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় রুমা বেগমের স্বামী। মৃত্যুর আগেই স্বামীর চিকিৎসার পেছনে কয়েক দফা খরচে ২ শতক ভিটেবাড়ি বাদে পরিবারের সর্বস্ব বেচে দিতে হয়। বড় ছেলে জেএসসি পাস করলেও অর্থের অভাবে বন্ধ হয় লেখাপড়া।
ছোট ছেলেকে প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করালেও গোদ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে স্কুল ছাড়তে হয়। প্রতিবন্ধী ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালাত রুমা বেগম। কিন্তু সেখানেও বিধি বাম। অসুস্থ ছেলের চিৎকার ও চেঁচামেচিতে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই তাকে কাজ ছাড়তে বাধ্য করেন। এরপর বিভিন্ন রোগ বাসা বাধে তার নিজের শরীরে। পিত্তথলিতে পাথর, টিউমারসহ দেখা দেয় হার্টের সমস্যা। এ অবস্থায় আর ঝিয়ের কাজ করতে পারেন না। নানাজনের কাছে হাত পেতে জরুরি অবস্থায় টিউমার অপারেশন করেন। টাকার অভাবে কোনো রোগেরই ওষুধ কিনতে পারেন না। সময় যতই যাচ্ছে অসুস্থ হয়ে পড়ছে রুমা বেগম। নিজের চেয়ে প্রতিবন্ধী ছেলেটির জন্য বেশি চিন্তা করে।
স্বামী মারা যাবার পরে ঘরটিও মেরামত করতে পারেনি। ঘরের চাল থাকলেও বেড়ার জায়গায় ঝুলে আছে শুধুমাত্র কয়েকটু টুকরো কাঠ। রাতে ঘরের চালের ফুটো দিয়ে চাঁদ দেখা যায়। বৃষ্টি হলে পলিথিন দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে। এমন খোলা ঘরেই অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে পার করছেন বছরের পর বছর। বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হলেও মেলেনি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা। এভাবে নিজের জীবন কাহিনী বলতে বলতে কণ্ঠ ভারি হয়ে আসে রুমা বেগমের। একপর্যায়ে সজোরে কেঁদে ফেলেন। উপায়হীন ভাবে চলছে। শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনছে এভাবে একদিন পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে। শুধু তার কষ্ট প্রতিবন্ধী সন্তানটির জন্য। রুমার প্রতিবেশী ছেলিনা বেগম বলেন, আমরা এলাকার অনেকেই সাধ্যমতো এই পরিবারটিকে সহায়তা করছি। কিন্তু তাদের ৩ জনের ভরণপোষণে তা যথেষ্ট নয়। তাই তার বড় ছেলেকে কেউ একটা স্থায়ী কাজের ব্যবস্থা করে দিলে পরিবারটি ৩ বেলা দুই মুঠো খেতে পারত বলে মনে করি। রুমার দেবর নজরুল ইসলাম দুখু জানান, আমাদের নিজেদের অবস্থা তেমন ভালো নয়। তবুও তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।
অসহায় রুমার পরিবারটিকে বাঁচাতে তাই সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। কুড়িগ্রাম পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আব্দুল মালেক বলেন, লোকমুখে পরিবারটির বিষয়ে জেনেছি, তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকার দেশের প্রতিটি মানুষকে নানাভাবে সাহায্য করে। এমন অসহায় রুমা বেগমের পাশে কি এগিয়ে আসবেন। যাতে সেসহ তার প্রতিবন্ধী ছেলেটির নতুন জীবন ফিরে পায়।