
প্রতিদিন আমাদের মনে হাজারো তথ্য আসে-যায়, কিন্তু আপনি কি জানেন, মস্তিষ্ক নিজেই অনেক কিছু ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে? কারণ, যা সে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না, তা সে মুছে ফেলতে চায়। অথচ আমরা অনেক সময় এমন কিছু তথ্য মনে রাখতে চাই, যেগুলো বহু বছর পরেও দরকার হতে পারে। এমনকি সাধারণ জিনিসও ভুলে যাই অফিসে সোয়েটার নিতে ভুলে যাওয়া, গাড়ির চাবি কোথায় রেখেছি মনে না থাকা, বা ফোন বাড়িতেই ফেলে আসা!
কিন্তু ভালো খবর হচ্ছে, মস্তিষ্ককে বেশি কিছু মনে রাখাতে সহায়তা করার একটি কার্যকর উপায় রয়েছে। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ উদ্যোক্তা এলন মাস্ক জানিয়েছেন, কিছু মনে রাখতে হলে সেটিকে অর্থবহ করে তুলতে হবে কিংবা সেটিকে অদ্ভুত বা মজার কোনো ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
আমাদের মস্তিষ্ক কেন ভুলে যায়? এটাই স্বাভাবিক। মস্তিষ্ককে ভাবুন একটি ময়লার ঝুড়ির মতো। প্রতিদিন সেখানে নানা তথ্য জমতে থাকে, একসময় তা উপচে পড়ে এবং অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। তথ্য ভুলে যাওয়ার এই প্রক্রিয়া যতটা অদ্ভুত মনে হয়, ততটাই প্রয়োজনীয়ও বটে। কারণ, সবকিছু মনে রাখার চেষ্টা করলে নতুন কিছু শেখা, সিদ্ধান্ত নেওয়া সবই জটিল হয়ে পড়ত। তাই মস্তিষ্ক আপনা আপনি বেছে নেয়, কোন তথ্য রাখবে, আর কোনটা ফেলে দেবে।
এমন পরিস্থিতিতে এলন মাস্কের পরামর্শ হলো, আপনি যদি কোনো কিছু দীর্ঘদিন মনে রাখতে চান, তাহলে সেটিকে আপনার জীবনের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা ব্যতিক্রমী ঘটনার সঙ্গে জুড়ে ফেলুন। ধরুন, কারো নাম মনে রাখতে চাইছেন। আপনি যদি সেই ব্যক্তির কোনো অভ্যাস, মুখভঙ্গি, হাসির ধরণ বা শখের সঙ্গে নামটি মেলান, তাহলে তা আপনার মস্তিষ্কে বেশি দিন গেঁথে থাকবে। কারণ, গল্প ও আবেগযুক্ত তথ্য আমাদের মস্তিষ্ক অনেক সহজে মনে রাখতে পারে। নিছক তথ্য নয়, অর্থবহ সংযোগ তৈরি করলেই সেটি স্মৃতিতে জায়গা করে নেয়।
এছাড়া মজার বা আজব কল্পনার মাধ্যমে তথ্য মনে রাখার কৌশলও দারুণ কার্যকর। ধরুন, বাজারে কলা কিনতে ভুলবেন না এই মনে রাখতে চাইছেন। তখন কল্পনা করুন, রান্নাঘরে একটি বিশাল সানগ্লাস পরা কলা নাচছে! এই উদ্ভট ছবিটি আপনার মনে এমনভাবে দাগ কাটবে, যা সহজে ভোলা সম্ভব নয়।
মাস্কের মতে, কোনো তথ্যকে অস্বাভাবিক, উল্টোপাল্টা বা হাস্যকর কিছুর সঙ্গে যুক্ত করলে তা মস্তিষ্কে সহজে থেকে যায়। সংযোগ যত মজার বা চমকপ্রদ হবে, মনে রাখাও তত সহজ হবে।
এই কৌশলগুলো ব্যবহার করার কিছু সহজ উপায় হলো—প্রথমত, আপনি যা শিখছেন তা কেন গুরুত্বপূর্ণ, সেটা নিজের কাছে পরিষ্কার করুন। এটা আপনার লক্ষ্য বা জীবনের সঙ্গে কতটা সম্পর্কিত, সেটি ভাবলে মস্তিষ্ক সেটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করবে। উদাহরণ হিসেবে, রুটি কিনতে হলে ভাবুন আগামীকাল সেটা দিয়ে মজাদার স্যান্ডউইচ তৈরি করবেন, শুধু ‘রুটি কিনতে হবে’ ভাবার চেয়ে এভাবে ভাবা অনেক কার্যকর।
দ্বিতীয়ত, তথ্যকে গল্পের রূপ দিন। বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মেলান। গল্প সবসময়ই বিচ্ছিন্ন তথ্যের চেয়ে বেশি স্মরণযোগ্য। তৃতীয়ত, মজার বা উদ্ভট ছবির মতো মানসিক চিত্র তৈরি করুন। ধরুন, ভাবুন সেই স্যান্ডউইচ যদি এক রাক্ষস হয়, সে আপনাকেই খেয়ে ফেলবে যদি আপনি আগে তাকে না খান!
এই পদ্ধতিগুলো বারবার অনুশীলন করুন। মজার বা অর্থবহ সংযোগ বারবার রিভিউ করলে স্মৃতিতে আরও ভালোভাবে গেঁথে যায়। আর সবশেষে, আগ্রহ থাকাটা খুবই জরুরি। আপনি কোনো বিষয়ে যতটা আগ্রহী হবেন, সেটি মনে রাখাও তত সহজ হবে।
বিজ্ঞানীরা বলেন, যখন কোনো তথ্য আবেগ বা শক্তিশালী মানসিক ছবির সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন মস্তিষ্ক সেটিকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে ধরে রাখতে পারে। কারণ এতে মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল ও আবেগসংক্রান্ত অংশগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা স্থায়ী স্মৃতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই সংযোগগুলোই তৈরি করে নিউরাল পথ, যার মাধ্যমে তথ্য দীর্ঘদিন ধরে রাখা যায়।
তবে মনে রাখা দরকার, এই কৌশলগুলো কাজ করলেও ফল পেতে সময় ও অভ্যাস দরকার হয়। একদিনেই স্মৃতিশক্তি উন্নত হবে না। নিয়মিত চর্চা করলে মস্তিষ্ক নতুন সংযোগ গঠন করে এবং পুরনো স্মৃতি আরও দৃঢ় করে। মাঝেমধ্যে ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক, হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
এই পদ্ধতিগুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেন প্রতিদিনের কাজে, পড়াশোনায়, মানুষ চিনতে কিংবা ছোটখাটো বিষয় মনে রাখতে। কিছুদিন পরেই হয়তো লক্ষ্য করবেন আপনার স্মৃতিশক্তি আগের চেয়ে অনেকটাই শানিত হয়ে উঠেছে।
সূত্র:https://tinyurl.com/3fx45p2v
আফরোজা