ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অবহেলিত মানসিক চাপের লক্ষণগুলি ও তা মোকাবেলার উপায়

প্রকাশিত: ১৮:৫০, ৩ জুন ২০২৫

অবহেলিত মানসিক চাপের লক্ষণগুলি ও তা মোকাবেলার উপায়

ছবি: সংগৃহীত।

আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন, জীবনে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ পুরোপুরি এড়ানো যায় না। অনেক সময়ই স্ট্রেস নিঃশব্দে শরীরে প্রভাব ফেলে, যেটা আমরা বুঝতেই পারি না। অ্যাকনে, চুল পড়া, হজমের সমস্যা বা মনোযোগের ঘাটতির মতো উপসর্গগুলোও হতে পারে স্ট্রেসের ইঙ্গিত।

এইচটি লাইফস্টাইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আয়ুথভেদার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ডাঃ সঞ্চিত শর্মা বলেন, “স্ট্রেস মানে শুধুই মানসিক চাপ নয়, এটি একটি শারীরিক প্রতিক্রিয়া, যা প্রায়শই নীরবেই শুরু হয়। আমরা স্ট্রেসকে সাধারণত মানসিক ক্লান্তি বা হতাশার সঙ্গে যুক্ত করি, কিন্তু এটি ত্বক, চুল, হজম এবং শক্তি স্তরের ওপরও প্রভাব ফেলে।”

তিনি জানান, কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোন ত্বকে অতিরিক্ত তেল উৎপন্ন করে, ত্বকের প্রাকৃতিক রক্ষা দেয়াল দুর্বল করে এবং চুলের বৃদ্ধি প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায়। পাশাপাশি এটি অন্ত্রে ও মস্তিষ্কের সংযোগে গোলযোগ সৃষ্টি করে, ফলে গ্যাস, অ্যাসিডিটি, ক্ষুধা কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।

এনআইআইএমএস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাঃ নীতু তিওয়ারি বলেন, “স্ট্রেস হলো একটি জটিল মন-দেহ সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়া, যা মানুষ নিজে বুঝতে না পারলেও শরীর প্রতিক্রিয়া জানায়। দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেসে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অঞ্চলে গঠনগত পরিবর্তন হতে পারে, যা স্মৃতি, মনোযোগ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতায় প্রভাব ফেলে।”

তিনি আরও জানান, “অনেক সময় এই সমস্যাগুলিকে বার্ধক্য বা সাময়িক বিভ্রান্তি বলে ভুল ধরা হয়, কিন্তু এগুলো আসলে হতে পারে কর্টিসল হরমোন দ্বারা উদ্ভূত স্নায়বিক ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ।”

লাইফ কোচ ও মোটিভেশনাল স্পিকার আলমা চোপড়া বলেন, “সম্পূর্ণ রাত ঘুমিয়েও যদি সকালে ক্লান্তি অনুভব করেন, অথবা বারবার মন অন্যদিকে চলে যায়, তবে তা হতে পারে স্ট্রেসের লক্ষণ। এই অবস্থা ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং মানসিক একাগ্রতা নষ্ট করে।”

তিনি বলেন, “বয়স বাড়ার লক্ষণ মনে করে আমরা যে ব্যথাগুলিকে অবহেলা করি — যেমন কাঁধে টান, চোয়ালে জড়তা, বা পিঠে ব্যথা — সেগুলোও হতে পারে দেহের স্ট্রেস ধারণ করার উপসর্গ। এই দীর্ঘস্থায়ী চাপ শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে নানা রোগের উৎস হতে পারে।”

আলমা আরও বলেন, “স্ট্রেস সবসময়ই উদ্বেগ বা অস্থিরতা দিয়ে প্রকাশ পায় না। অনেক সময় তা একেবারেই নিঃশব্দে আসে— যেমন আবেগহীনতা, মন খারাপের স্পষ্ট অনুভব না হওয়া, বা নিঃসঙ্গতা। বর্তমান তরুণদের মধ্যে ১৮-২৪ বছর বয়সীদের প্রায় ৪৯% জানিয়েছেন, অন্যের সঙ্গে তুলনা করার কারণে তারা নিজেদের চাপগ্রস্ত মনে করেন।”


ডাঃ তিওয়ারি বলেন, “মাথাব্যথা, আইবিএস, মাংসপেশির ব্যথা, এমনকি চর্মরোগ যেমন একজিমা বা সোরিয়াসিসও স্ট্রেসের কারণে বাড়তে পারে। এর সঙ্গে ঘুমের সমস্যা, ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি, ক্ষুধামান্দ্য, এমনকি যৌন ইচ্ছার হ্রাসও দেখা দিতে পারে, যা সাধারণত আমরা অবহেলা করে থাকি।”

তিনি যোগ করেন, “যদি আপনি আনন্দবোধ না করতে পারেন (anhedonia), অথবা আবেগপ্রকাশ করতে না পারেন (emotional blunting), তাহলে তা হতে পারে মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও ডোপামিনের ভারসাম্যহীনতা। এসব লক্ষণকে অবহেলা না করে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”

আলমা চোপড়া বলেন, “জীবনে বড় পরিবর্তন না করেও ছোট ছোট পদক্ষেপে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব— যেমন গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া, শরীরচর্চা করা, পর্যাপ্ত ঘুম, ও প্রতিদিন অন্তত কিছুক্ষণ নিজের পছন্দের কিছু করা।”

ডাঃ তিওয়ারি বলেন, “এসব সূক্ষ্ম পরিবর্তন বুঝে যথাসময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বড় মানসিক সমস্যাগুলি যেমন অবসাদ বা উদ্বেগজনিত রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রয়োজনে মনোবিদ বা চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া উচিত।”

সূত্র: https://l8.nu/-uG1

মিরাজ খান

×